Cricket : IPL নিলামে ১৩ বছরের বিস্ময়- বৈভব সূর্যবংশীর রূপকথার উত্থান

ক্রিকেটের বাইশ গজে এক ঝটকায় বদলে গেল চিত্রনাট্য। আইপিএল নিলামের ইতিহাসে প্রথমবার, সমস্ত আলো এক কিশোরের দিকে। মাত্র ১৩ বছর বয়সী বৈভব সূর্যবংশী, বিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম মতিপুর থেকে উঠে আসা এই বিস্ময় বালক, রূপকথার নায়কের মতো নজর কেড়েছে গোটা ক্রিকেট দুনিয়ার। তার বেস প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা, যা শুধুমাত্র সংখ্যা নয়, এক বিস্ময়কর গল্পের সূচনা।

বিশ্বরেকর্ড দিয়ে শুরু রূপকথার গল্প

বৈভবের যাত্রাপথ শুরু হয়েছিল এক ছোট্ট গ্রাম থেকে, যেখানে ক্রিকেটের সুযোগ-সুবিধা বলতে কেবলই তার বাবার পুরনো ব্যাট আর বাড়ির পাশের ফাঁকা জমি। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে যখন সে বাবার ব্যাট নিয়ে খেলার চেষ্টা করছিল, তখনই বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশী বুঝেছিলেন, ছেলের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে তার নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন।
“আমার স্বপ্ন ছিল বড় ক্রিকেটার হব, কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বৈভবের মধ্যে আমি আমার স্বপ্নকে নতুন করে দেখতে পাই,” বলেন সঞ্জীব।

বাড়ির পাশের জমিতে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে বৈভবকে ভর্তি করানো হয় সমস্তিপুরের ব্রজেশ ঝা’র একাডেমিতে। দুই বছর কঠোর প্রশিক্ষণের পর মাত্র ৯ বছর বয়সে বৈভব খেলতে শুরু করে অনূর্ধ্ব ১৬ ও পরে অনূর্ধ্ব ১৯ দলে। প্রতিটি ম্যাচে তার ব্যাট থেকে ঝরে পড়ে রানের বন্যা। এরপর পাটনায় মণীশ ওঝার একাডেমিতে যোগ দেয় বৈভব।

পাটনার মাঠে হেম্যান ট্রফিতে অনূর্ধ্ব ১৯ রাজ্যের হয়ে ৬০০ রান সংগ্রহ করে বৈভব। এর পরেই আসে স্বপ্নের ডাক। মাত্র ১২ বছর বয়সে তাকে বিহারের রঞ্জি দলে অন্তর্ভুক্ত করে বিহার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। এর কিছুদিনের মধ্যেই বৈভব জাতীয় দলে সুযোগ পায়।

১৩ বছরের কিশোর, ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালো

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলার সুযোগ পেয়ে বৈভব প্রথম ম্যাচেই গড়ে তোলে বিশ্বরেকর্ড। মাত্র ১৩ বছর বয়সে সেঞ্চুরি করে বৈভব হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। তার দুর্ধর্ষ ১০৪ রানের ইনিংসটি ছিল দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি, যা প্রতিপক্ষের জন্য এক আতঙ্কের নাম।

নিলামের আলোয় বৈভব: অপেক্ষা নতুন ইতিহাসের

আইপিএল-এর মঞ্চে এবার দেখা যাবে এই বিস্ময় বালককে। হাজার হাজার ওয়াটের আলোতে, গ্যালারি ভরা দর্শকের গগনভেদী উল্লাসের মধ্যে দিয়ে ব্যাট হাতে ক্রিজের দিকে এগিয়ে যাবে বৈভব সূর্যবংশী। প্রতিপক্ষে হয়তো মিচেল স্টার্ক কিংবা যশপ্রিত বুমরা। আর স্ট্রাইকে সেই ছেলেটি, যার নাম বৈভব।

গোটা ক্রিকেট দুনিয়া এখন অপেক্ষায়, বৈভব কীভাবে তার প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে নেবে। তার স্ট্যান্স, তার শট, তার সাহসিকতায় আবারও লেখা হবে নতুন রেকর্ডের গল্প।

ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন সূর্য: বৈভব সূর্যবংশী

বৈভবের এই রূপকথার উত্থান কেবল ক্রিকেটের গল্প নয়, এটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা প্রতিভার এক অনুপ্রেরণার কাহিনি। তার যাত্রা প্রমাণ করে দেয়, প্রতিকূলতার মধ্যেও যদি ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম থাকে, তবে কোনো স্বপ্নই অধরা নয়।

বৈভব সূর্যবংশীর এই কিশোর বয়সেই ক্রিকেট দুনিয়ার মঞ্চ কাঁপানোর প্রস্তুতি কেবল ভারত নয়, গোটা বিশ্বের জন্য এক চমকপ্রদ অধ্যায়ের সূচনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *