জলপাইগুড়ি :- গ্রামজীবনের চিরন্তন উৎসব, বিশ্বাস আর ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে বৃহস্পতিবার থেকে জলপাইগুড়ির রংধামালিতে শুরু হলো সাতদিনব্যাপী মহারাজ মেলা। নিয়ম-নিষ্ঠা মেনে একদিনের দুর্গাপূজার মধ্য দিয়ে মেলার সূচনা হয়। চারপাশে এখন যেন উৎসবের আমেজে ভাসছে গোটা গ্রাম। এবছর পুজোর ১৪৪তম বর্ষ, যা নিজেই এক ঐতিহ্যের সাক্ষী।

জনশ্রুতি আছে— লক্ষ্মীপুজোর পরের বৃহস্পতিবার দেবী দুর্গা কৈলাসে ফেরার পথে সপরিবারে এসেছিলেন রংধামালির আমবাগানে। তখন বাগানের মালিক ‘মহারাজ’ খবর দেন গ্রামবাসীদের। তাঁরা আনন্দে দেবীকে পুজো করে অনুরোধ করেন, একদিন যেন গ্রামে থেকে যান। দেবী তাঁদের অনুরোধ রাখেন এবং আশীর্বাদ দেন— “এই গ্রাম চিরকাল শস্যশ্যামলা হয়ে উঠুক।” সেই আশীর্বাদকেই স্মরণে রেখে প্রতিবছর এই দিনে হয় ‘মহারাজ মেলা’, যা আজ এক সার্বজনীন উৎসব।

এবারও সর্দারপাড়া রংধামালীর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-এর তত্ত্বাবধানে আয়োজন করা হয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী পুজো ও মেলার। দেবীর একদিনের পুজোয় সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমীর সমস্ত রীতি একসঙ্গে সম্পন্ন হয়। পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় শ্যামা কালী, ভদ্রকালী ও বাঁও কালী— তিন রূপের পূজা।

দ্বিপচান রায়, পুজো কমিটির উপদেষ্টা, বলেন — “লক্ষ্মীপুজোর পর যে বৃহস্পতিবার আসে, সেই দিনেই হয় মহারাজ মেলা। এটা শুধু পুজো নয়, এক মিলনক্ষেত্র। এই এলাকার মেয়েরা, যাদের বাইরে বিয়ে হয়েছে বা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন, তাঁরা এই মেলার সময় ফিরে এসে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মিলিত হন। মাকে ঘিরেই যেন নতুন করে শুরু হয় সম্পর্কের বন্ধন।”
স্থানীয় বাসিন্দা গার্গী রায় বলেন — “আমাদের জন্য এই মেলা শুধু উৎসব নয়, আবেগ। সারাবছর অপেক্ষা করি এই দিনের জন্য। চারদিকে আলো, ঢাকের আওয়াজ, মানুষের মুখে হাসি— যেন পুরো গ্রাম নতুন করে বেঁচে ওঠে।”
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ আসছেন এই ঐতিহ্যবাহী মেলায়। দোকানিদের পসরা, মিষ্টির গন্ধ, নাগরদোলা আর ভক্তিমূলক গানের সুরে ইতিমধ্যেই জমে উঠেছে রংধামালির মহারাজ মেলা— যেখানে ধর্ম আর মানবিকতার বন্ধন মিলেমিশে তৈরি করেছে এক অনন্য ঐতিহ্য।