সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ১৭ আগস্ট : ঐতিহ্যবাহী জলপাইগুড়ি বৈকন্ঠপুর রাজ বাড়ির মনসা (বিষহরি) পূজা এবার ৫১৩ বছরে পদার্পণ করল। প্রাচীন এই পুজোকে ঘিরে জলপাইগুড়ি রাজবাড়ি প্রাঙ্গনে বসেছে একটি বিরাট মেলাও। করোনার জন্য বিগত দুইবছর নিয়মমাফিক মনসা পুজো হলেও মেলা অনুষ্ঠিত হয় নি। দুই বছরের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত এই মেলায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও আরো বহু জায়গা থেকেও এসেছেন দোকানিরা। বসেছে রকমারি দোকান, নাগরদোলা সহ বিভিন্ন আকর্ষণ।

ঐতিহ্যবাহী এই পুজো রাজবংশী সমাজের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। কারণ বৈকন্ঠপুর রাজ পরিবার ছিল রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ। তাই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজবংশী মানুষরা ছুটে আসেন পুজো দিতে ও মেলা দেখতে। রাজবংশী সমাজের মানুষ মা মনসাকে মা বিষহরি বলেই পূজা করেন। তাই রাজবংশী সমাজের প্রথা মেনে তিন দিন ধরে এখানে চলে মা মনসার পূজা এবং সেই উপলক্ষে মেলা। কোনও প্রতিবন্ধকতাই এই পুজোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকি রাজপরিবারে মৃত্যুর ঘটনাতেও নয়।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে বৈকন্ঠপুর রাজবাড়ির এই পূজার সূচনা করেছিলেন রাজা শিষ্য সিংহ। রাজ পরিবারের এই মনসা পূজোয় দুটো প্রধান মূর্তি দেখা যায়। এই দুটো মূর্তি ছোট মনসা এবং বড় মনসা নামে পরিচিত। বংশপরম্পরায় রাজ পরিবারের পুরোহিত শিবু ঘোষাল বলেন, নেতি ও পদ্মা এই দুই প্রধান দেবীর পুজো করা হয় এখানে। এর সাথে সাথে এখানে পুজো পান জরুৎকারু মুনি, বেহুলা লক্ষিন্দর, কুলীর নাগ, বাসুকিনাগ, তক্ষক নাগ সহ অষ্ট নাগের পূজা হয়। মন্ডপ এর পাশেই গোদা ও গোদানীর মূর্তি রাখা হয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। বর্তমানে রাজবাড়ির পুজোর দায়িত্ব পালন করেন প্রতিভা বসুর পুত্র প্রণত বসু।
রাজ পুরোহিত শিবু ঘোষাল জানান, আজ থেকে পুজো শুরু হয়েছে। পুজো চলবে তিনদিন ধরে। আগামীকাল থেকে শুরু হবে বিষহরি বা মনসা মঙ্গল গান। আগে এই গানের জন্য দূর দূরান্ত থেকে দল আসতো। তবে এখন পাহাড়পুর আর ময়নাগুড়ি থেকে গানের দল আসবে। আর মনসা পুজো উপলক্ষ্যে বসা মেলা চলবে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত। এবার রাজপরিবারের নববধূ লিন্ডা বসু মায়ের বরণ করেছেন।
মনসা পূজার মেলাকে ঘিরে পুলিশ প্রশাসন ও নিরাপত্তার বিষয়টি ঢেলে সাজিয়েছে। মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন কয়েকজন পুলিশ অফিসার এবং প্রচুর পরিমাণে সিভিক ভলেন্টিয়ার।