সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ১১ সেপ্টেম্বর’২৩ : গত বছরের দূর্গা পূজায় মালের হরপা বান এবং মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় নয়া মোড়। সমাজকর্মীর চিঠির ভিত্তিতে স্বতঃপ্রোনোদিত মামলা দায়ের করলো জাতীয় পরিবেশ আদালত। মামলায় জলপাইগুড়ির জেলাশাসক, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক, রাজ্যের সেচ ও জলপথ দপ্তর এবং মালবাজার পুরসভাকে পার্টি করেছে গ্রীণ ট্রাইবুনাল। ঘটনায় ইতিমধ্যেই ট্রাইবুনালে হলফনামা জমা করেছেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক সহ অন্যান্য পার্টিরা৷

বছরের ৫ই অক্টোবর দশমীর রাতে মাল নদীতে হরপা বানের ঘটনা ঘটে৷ ভাসান চলাকালিন নদীর বিপর্যয়ে প্রাণ হারান ৮ জন। আহত হন ১৩ জন। ভয়ানক এই ঘটনার ভিডিও দেখে চমকে উঠেছিল রাজ্যবাসী। ঘটনার পরেই ১১ই অক্টোবর জাতীয় পরিবেশ আদালতের চেয়ারপার্সনকে চিঠি করে অভিযোগ জানান, সমাজকর্মী নব্যেন্দু মৌলিক। তার অভিযোগ ছিল মাল নদীতে বিপর্যয়ের জন্য জেলা প্রশাসন এবং মালবাজার পুরসভা দায়ী। মালবাজার পুরসভা কৃত্তিম বাঁধ তৈরি করে জেসিবি মেশিন দিয়ে নদীর গতি বদলে দিয়েছে। এমনকি মাল শহরের যাবতীয় নোংরা আবর্জনা নদী বক্ষে জমা করছে ফলে নদীর ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও বিপর্যয় মোকাবিলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না বলেও তার অভিযোগ। নব্যেন্দুর অভিযোগের ভিত্তিতে স্বতঃপ্রনোদিত মামলা দায়ের করলো জাতীয় পরিবেশ আদালত। গত ২৪ শে মে, জাতীয় পরিবেশ আদালতের প্রিন্সিপাল বেঞ্চ মামলা শুরু করে এবং জলপাইগুড়ির জেলাশাসক, মালবাজার পুরসভা, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, সেচ ও জলপথ দপ্তর এবং কেন্দ্রের বন ও পরিবেশ মন্ত্রককে পার্টি করে ঘটনার ফ্যাকচুয়াল রিপোর্ট চায়। এরপর বেশ কয়েকটি শুনানি হয় জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূ্র্ব ভারতের আঞ্চলিক বেঞ্চ কলকাতায়।

সেই বেঞ্চের আদেশ মতো কেন্দ্র এবং রাজ্যের প্রতিনিধি দল গত ২৭ শে জুলাই ভিজিট করে। এরপরেই আদালতে আলাদা আলাদা করে হলফনামা জমা করে তারা। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক তার হলফনামায় জানিয়েছে কৃত্তিম বাঁধ বানানো না হলেও একটি র্যাম্প বানানো হয়েছিল। এমনকি মাল নদীতে শহরের নোংরা জমা করার কথা নিজেদের হলফনামায় স্বীকার করেছে জেলা প্রশাসন। ঘটনায় ক্ষুব্ধ পরিবেশ আদালত। রায়ে আদালত জানিয়েছে তারা NGT Act 2010 লঙ্ঘের যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন। মালবাজার পুরসভা আদালতে উপস্থিত না থাকায় মাল পুরসভাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে নোটিশ দিতেও জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত।

যার অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা সেই সমাজকর্মী নব্যেন্দু মৌলিক। সোমবার জলপাইগুড়ি প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে নব্যেন্দু জানান, পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রথম থেকেই করছিলাম৷ আদালত আমার অভিযোগ মেনে নিয়েছে। আগামী ৪ঠা অক্টোবর পরবর্তী শুনানি কলকাতায়। সেই শুনানিতে তিনি নিজেই উপস্থিত থেকে আদালতে নিজের যুক্তি তুলে ধরবেন বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, সামনে আরও একটি দূর্গাপূজা আসছে। এবার যাতে কোনো মতেই পরিবেশ আইন লঙ্ঘিত না হয়, তা তিনি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানাবেন। একই সাথে নদীতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতেও তিনি আদালতে সওয়াল করবেন বলেও জানান তিনি।