ছোট গল্প : জলপাইগুড়ির তিন বন্ধু

লেখক : পিনাকী রঞ্জন পাল

উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি শহরের একটি ছোট বেসরকারি অফিসে কাজ করত এই গল্পের তিন চরিত্র। তাদের মধ্যে আদিত্য ছিল পরিশ্রমী এবং মেধাবী যুবক। তার সঙ্গে ছিল অর্ণব, একজন মজার লোক, যার কাজ ছিল সবার মুখে হাসি ফোটানো। আর তাদের বন্ধু ছিল অর্চিতা, একজন সুন্দরী এবং বুদ্ধিমান মেয়ে। তিনজন মিলে তারা অফিসে সবসময় মজা করত, কাজের চাপ কমাতে।

দিন গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আদিত্য এবং অর্চিতার মধ্যে একটি বিশেষ বন্ধন গড়ে উঠল। তারা একসাথে কাজ করত, একসাথে লাঞ্চ করত, আর একসাথে অফিস থেকে বাড়ি ফিরত। অর্ণব তাদের এই বন্ধনকে খুব পছন্দ করতো। কিন্তু আস্তে আস্তে অর্ণব একদিন বুঝতে পারল যে সেও অর্চিতাকে ভালোবাসে। এই ভালোবাসা তার মনে একটা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করল।

অর্ণব তার মনের কথা অর্চিতাকে বলতে চাইলেও ভয় পেত। সে ভয় পেত যে অর্চিতা তার প্রস্তাব হয়তো ফিরিয়ে দেবে। অন্যদিকে, আদিত্য এবং অর্চিতাও তাদের মনের কথা একে অপরকে বলতে ভয় পেত। কারণ তারা ভয় পেত যে তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে।

একদিন, তিন বন্ধু মিলে জঙ্গলে ঘুরতে যায়। সেখানে একটি ছোট্ট ঝর্ণা দেখতে পায়। তারা সেই ঝর্ণার পাশে বসে গল্প করতে থাকে। হঠাৎই, অর্ণব সাহস করে অর্চিতাকে তার মনের কথা বলে দেয়। শুনে অর্চিতা অবাক হয়ে যায়। সে আদিত্যকে ভালোবাসে, কিন্তু অর্ণবের প্রতিও তার একটা ভালোলাগা আছে।

এই ঘটনার পর তিনজনের মধ্যে একটা অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়। তারা সবাই জানতে চায় যে তারা কী করবে। দিনের পর দিন তারা এই বিষয়ে ভাবতে থাকে। অবশেষে, তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে তাদের বন্ধুত্বই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারা তিনজন মিলে এই বিষয়ে কথা বলে এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা সবাই একসাথে থাকবে।

এই ঘটনার পর তিনজনের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয়। তারা বুঝতে পারে যে প্রেম সবসময়ই সুখী হয় না। কখনো কখনো প্রেমের জন্য ত্যাগ করতে হয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল বন্ধুত্ব।

এরপর কয়েক বছর কেটে গেল। একদিন তিন বন্ধু মিলে জলপাইগুড়িতে একটি ছোট্ট বাড়ি কিনল এবং একসাথে থাকতে শুরু করল। তিনজনই একসাথে থাকে কিন্তু তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থাকে না। তারা তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক বাঁচানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং তাদের জীবন সুখের ছিল।

© পিনাকী রঞ্জন পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *