পিনাকী রঞ্জন পাল : ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য পেসার মোহাম্মদ শামি আবার আলোচনায় এসেছেন তার সাম্প্রতিক ফিটনেস আপডেট এবং পারফরম্যান্সের জন্য। অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য তার নাম শোনা যাচ্ছে, যা ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের জন্য আশার আলো। শামি শুধু একজন দক্ষ বোলারই নন, বরং কঠিন মুহূর্তে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সাময়িক বিরতিতে ছিলেন মোহাম্মদ শামি। সেই সময়ে তার ফিটনেস নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছিল। তবে তিনি রঞ্জি ট্রফি এবং সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফিতে (এসএমএটি) চমৎকার পারফরম্যান্স দিয়ে তার ফিটনেস এবং দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন।
রঞ্জি ট্রফিতে মধ্যপ্রদেশের বিপক্ষে শামি বাংলার জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেট নিয়ে তিনি তার অভিজ্ঞতার সাক্ষর রেখেছেন। এছাড়াও, এসএমএটি-তে তিনি ছয় ম্যাচে ২৩.৩ ওভার বল করে নিজের ফিটনেসের দৃঢ়তা প্রমাণ করেছেন। তার বলের গতি, নিখুঁত লাইন-লেংথ এবং সুইং দক্ষতা তাকে ভারতীয় পেস আক্রমণের অন্যতম বড় শক্তি করে তুলেছে।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলা সবসময়ই কঠিন, বিশেষ করে পেসারদের জন্য। বাউন্সি পিচ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাটিং লাইনআপের সঙ্গে লড়াই করার জন্য অভিজ্ঞ পেসারের প্রয়োজন। মোহাম্মদ শামি, যিনি তার ইন-সুইং, আউট-সুইং এবং রিভার্স সুইংয়ের জন্য পরিচিত, এই সিরিজে ভারতীয় দলের জন্য বড় সম্পদ হতে পারেন।
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় বোলিং আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাসপ্রিত বুমরাহ এবং মোহাম্মদ সিরাজ। তবে এরসাথে শামির সংযোজন দলকে গভীরতা দেবে এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উইকেট তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। তার অভিজ্ঞতা শুধু উইকেট নেওয়ার জন্যই নয়, বরং বুমরাহর উপর থেকে চাপ কমানোর জন্যও প্রয়োজনীয়।
জানা যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় টেস্টে অশ্বিনের জায়গায় মাঠে নামতে পারেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ব্যাটিং লাইনআপে কোনও পরিবর্তনের সম্ভাবনা না থাকলেও, বোলিং বিভাগে শামির অন্তর্ভুক্তি দলকে নতুন মাত্রা দেবে। যদিও তৃতীয় টেস্টে তার মাঠে নামা এখনো চূড়ান্ত অনিশ্চিত, তবে চতুর্থ টেস্টে মেলবোর্নে তার খেলার সম্ভাবনা প্রবল।
ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা এই প্রসঙ্গে বলেছেন, সামির জন্য দলের দরজা খোলা কিন্তু তাঁর খেলার বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এই বিষয়টি ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা দেখছেন।
৩৪ বছর বয়সী শামি এখন পর্যন্ত ৬৪টি টেস্টে ২২৯টি উইকেট নিয়েছেন। তার সেরা পারফরম্যান্স ৫৬ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেওয়া। এমন একটি অভিজ্ঞতা অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে ভারতের জয়ের সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
শামির প্রত্যাবর্তন ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ করবে এবং তার উপস্থিতি দলের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির মতো মর্যাদাপূর্ণ সিরিজে শামির মতো অভিজ্ঞ পেসারের ভূমিকা অমূল্য।
শামির ফিটনেস রিপোর্ট ইতিমধ্যে নির্বাচকমণ্ডলীকে সন্তুষ্ট করেছে। তার খেলার সরঞ্জাম ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে গেছে। এখন ভক্তরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন মাঠে তার তীক্ষ্ণ বোলিং দেখার জন্য।
মোহাম্মদ শামি কেবল ভারতীয় দলের জন্য নয়, পুরো ক্রিকেট বিশ্বের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং প্রতিভা ভারতীয় ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করেছে। অস্ট্রেলিয়া সফরে তার প্রত্যাবর্তন দলকে বাড়তি শক্তি দেবে এবং ক্রিকেটপ্রেমীদের আনন্দ দেবে। তবে দীর্ঘদিন পরে মাঠে ফেরা সামির বলে সেই ধার বজায় থাকবে কিনা সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।