কানের মঞ্চে কলকাতার অনসূয়া: সেরা অভিনেত্রীর মুকুট ‘দ্য শেমলেস’-এর জন্য

পিনাকী রঞ্জন পাল : কলকাতা থেকে কান পর্যন্ত সফর—অনসূয়া সেনগুপ্তর নাম এখন গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের আঁ সার্তে রিগায় সেরা অভিনেত্রীর সম্মান অর্জন করেছেন তিনি। কনস্ট্যানটিন বোঁজ্যনভের পরিচালিত ছবি ‘দ্য শেমলেস’-এর জন্য এ স্বীকৃতি পেয়েছেন অনসূয়া। কলকাতার চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য আরও গর্বের বিষয় হলো, সম্প্রতি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হয়েছে এই সিনেমা।

এই ছবিতে এক যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনসূয়া সেনগুপ্ত। চিত্রনাট্যের গভীরতা এবং চরিত্রের জন্য তার আত্মনিবেদন মুগ্ধ করেছে আন্তর্জাতিক বিচারকমণ্ডলীকে। চরিত্রটি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অনসূয়া বলেন, “ছবির স্বার্থে যতটা ‘শেমলেস’ হতে হয়, ততটা আমি হতে রাজি। এতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। চিত্রনাট্য যদি সত্যি প্রয়োজন করে, তবে আমি সব করতে প্রস্তুত।”

অনসূয়ার অভিনয় যাত্রা শুরু হয়েছিল অঞ্জন দত্তের ‘ম্যাডলি বাঙালি’ ছবির মাধ্যমে। এরপর সৃজিত মুখার্জির ‘রে’-তেও দেখা গিয়েছিল তাকে। তবে ‘ম্যাডলি বাঙালি’ ছবির পর অভিনয় থেকে দীর্ঘ বিরতি নিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ে তিনি বিনোদন জগতের অন্য বিভাগে কাজ করেন।

এই বিরতির পর ‘দ্য শেমলেস’ ছবিতে অনসূয়ার প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত স্মরণীয় হয়ে উঠেছে। ছবিটি কেবল আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাড়া ফেলেনি, তার অভিনয়ও নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী অনসূয়া সবসময়ই ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। মুম্বাইতে প্রোডাকশন ডিজাইনার হিসেবে কাজ করলেও তার স্থায়ী ঠিকানা এখন গোয়া। কাজের প্রতি তার নিষ্ঠা এবং চিত্রনাট্যের প্রতি তার অবিচল বিশ্বাস তাকে আজকের অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।

সম্প্রতি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ‘দ্য শেমলেস’ প্রদর্শনের সময় অনসূয়া উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার কেরিয়ার এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। কানে সম্মান পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই অর্জন কেবল আমার নয়, পুরো কলকাতার। এমন একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাজকে তুলে ধরতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ।”

কলকাতার নির্মাতা অঞ্জন দত্তের হাত ধরে শুরু হয়েছিল অনসূয়ার সিনেমার যাত্রা। আজ সেই অনসূয়া কানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার হাতে নিয়ে প্রমাণ করেছেন, প্রতিভা সঠিক সুযোগ পেলে আকাশ ছোঁয়া অসম্ভব নয়।

অনসূয়ার এই সাফল্য কেবল ব্যক্তিগত নয়; এটি কলকাতা এবং পুরো ভারতের সিনেমা জগতের জন্য গর্বের একটি অধ্যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *