পিনাকী রঞ্জন পাল : ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের প্রতিভার ছাপ রেখে তনুষ কোটিয়ান এখন ভারতীয় ক্রিকেট দলের নতুন ভরসা। বিস্ময়কর পারফরম্যান্স আর অদম্য মনোবলের জন্য এই তরুণ অলরাউন্ডারকে মুম্বাইয়ের ক্রিকেট মহলে ‘মুম্বাই ম্যাজিক’ বলে ডাকা হয়। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অবসরের পর তনুষের ভারতীয় দলে অন্তর্ভুক্তি যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
তনুষ কোটিয়ানের ক্রিকেটযাত্রা শুরু হয় মুম্বাইয়ের স্থানীয় পর্যায়ে। ২০২৩-২৪ রঞ্জি ট্রফিতে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্স সবার নজর কেড়েছিল। সেই মৌসুমে তিনি ব্যাট হাতে ৫০২ রান করেন, যার মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনালে দশম উইকেটে ২৩২ রানের পার্টনারশিপ ছিল স্মরণীয়। পাশাপাশি বল হাতে ২৯টি উইকেট নিয়ে প্রমাণ করেছিলেন তিনি একজন যোগ্য অলরাউন্ডার। ইরানি কাপ ফাইনালেও প্রথম ইনিংসে ৬৪ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৪ রানের মহামূল্য ইনিংস খেলে মুম্বাইকে জয় এনে দিয়েছিলেন। বল হাতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন।
রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অবসরের পর ভারতীয় দলে নতুন স্পিনারের প্রয়োজন ছিল। অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং নির্বাচকরা তনুষকে বেছে নেন তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম এবং অলরাউন্ড দক্ষতার জন্য। তনুষের ফিটনেস, মনোযোগ এবং দলের প্রয়োজনে যেকোনো ভূমিকায় পারফর্ম করার মানসিকতা তাঁকে বাকিদের থেকে আলাদা করেছে। রোহিত শর্মা বলেন, “তনুষ গত দুই বছর ধরে দুর্দান্ত পারফর্ম করছে। আমরা এমন একজন খেলোয়াড় চাইছিলাম যে দ্রুত দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে এবং প্রয়োজন হলে দ্বিতীয় স্পিনারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবে।”
তনুষের সাফল্যের পেছনে রয়েছে তাঁর পরিবারের অমূল্য সমর্থন। তাঁর বাবা করুণাকর কোটিয়ান মুম্বাইয়ের টেনিস বল টুর্নামেন্টে একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার ছিলেন। বাবার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তনুষ শুরু করেছিলেন ব্যাটসম্যান হিসেবে। তবে পরে অফ স্পিন বোলিংয়ে তাঁর আগ্রহ তৈরি হয়, এবং সেই পথেই এগিয়ে যান তিনি।
তনুষকে কি ব্যাটিং অলরাউন্ডার বলা হবে, নাকি বোলিং অলরাউন্ডার? এই প্রশ্নে অনেকেই বিভক্ত। তবে তনুষ নিজে এই বিতর্কে মাথা ঘামান না। তাঁর ভাষায়, “আমি একজন ক্রিকেটার। দলের প্রয়োজনে যে ভূমিকায় খেলতে বলা হবে, সেটাই আমি মনপ্রাণ দিয়ে করব। মোদ্দা কথা, দলের কাজে আসা।”
ভারতীয় দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে তনুষ উচ্ছ্বসিত। তিনি জানান, “টিমের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাব। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে দেশের জন্য খেলার চেষ্টা করব।”
তনুষ কোটিয়ানের অন্তর্ভুক্তি ভারতীয় দলের ভবিষ্যৎ ভাবনায় নতুন দিশা দেখায়। সিনিয়ররা একে একে অবসর নিচ্ছেন, এবং তনুষদের মতো প্রতিভাবান তরুণরা জায়গা নিচ্ছেন জাতীয় দলে। এই তরুণ অলরাউন্ডারের ওপর শুধু দল নয়, সমগ্র দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদেরও অনেক আশা।
তনুষ কোটিয়ানের যাত্রা এখনো শুরু। তবে মুম্বাই থেকে মেলবোর্ন পর্যন্ত তাঁর গল্প প্রমাণ করে, সাফল্যের জন্য প্রতিভা, পরিশ্রম, এবং আত্মবিশ্বাসের কোনো বিকল্প নেই। ভবিষ্যতে তাঁর আরও সাফল্য কামনা করি।