পিনাকী রঞ্জন পাল : আজ, ১২ জানুয়ারি, স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। একটি নাম, একটি ভাবনা, একটি দৃষ্টিভঙ্গি, যা শুধু ভারতকেই নয়, গোটা বিশ্বকে নতুন করে দেখার চোখ দিয়েছে। তাঁর জন্মদিন আজ জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়, কারণ তাঁর জীবনের প্রতিটি দিকেই রয়েছে যুবসমাজের জন্য অমূল্য শিক্ষা।
স্বামীজির জীবন যেন এক অনন্ত উৎস। তিনি বলেছিলেন, “জাগো, উঠো, লক্ষ্যপথে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না।” এই বাণী আজও অজস্র তরুণের জীবনে আলো জ্বালিয়ে চলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি আদৌ স্বামীজির আদর্শগুলো আমাদের জীবনে ধারণ করতে পেরেছি?
স্বামীজির স্বপ্নের ভারত : স্বামী বিবেকানন্দ চেয়েছিলেন এমন একটি ভারতবর্ষ, যেখানে প্রতিটি মানুষ সমান সুযোগ পাবে। যেখানে জাতপাত, ধর্ম বা আর্থিক অবস্থার কারণে কেউ অবহেলিত হবে না। তাঁর মতে, ভারতের মূল শক্তি হলো সাধারণ মানুষ। তিনি বলেছিলেন, “ভারতকে মহান করতে হলে দরিদ্র ও নিপীড়িতদের জন্য কাজ করতে হবে।”

কিন্তু আজকের বাস্তব চিত্রটি কেমন? নারী নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ, দরিদ্ররা বঞ্চিত, আর জাতপাতের বিভাজন যেন আজও আমাদের সমাজের এক গভীর ক্ষত। এই পরিস্থিতি কি সেই ভারতের প্রতিফলন, যা স্বামীজি দেখতে চেয়েছিলেন?
যুবসমাজের প্রতি আহ্বান : স্বামীজি বিশ্বাস করতেন, যুবসমাজই দেশের ভবিষ্যৎ। তিনি বলেছিলেন, “আমার কাছে কয়েকজন দৃঢ় সংকল্পিত যুবক-যুবতী এনে দাও, আমি সারা পৃথিবীকে বদলে দেব।” তাঁর এই আহ্বান আজও আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু আমরা কি সেই দৃঢ় সংকল্পিত যুবক-যুবতী হতে পেরেছি?
আত্মোন্নয়নের পথ : স্বামীজি শুধু সমাজ বদলানোর কথা বলেননি, তিনি বলেছিলেন আত্মোন্নয়নের কথাও। তাঁর বাণী, “তোমার নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। নিজের শক্তিকে জানো। সাফল্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে তোমার নিজের মধ্যেই।” এই আত্মবিশ্বাসই আমাদের অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যেতে পারে।
আধুনিক সময়ে স্বামীজির প্রাসঙ্গিকতা : আজকের প্রযুক্তিনির্ভর যুগে যখন মানুষ ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, তখন স্বামীজির বার্তা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। তাঁর শিক্ষা শুধু জ্ঞান নয়, মানবিকতার পথ দেখায়।
তিনি বলেছিলেন, “মানুষের সেবা করো, সেটাই সৃষ্টিকর্তার সেবা।” এই সহজ সত্যটি আজকের দিনে ভুলতে বসেছে মানবসমাজ। কিন্তু এই কথাটি ধারণ করতে পারলে সমাজের সমস্ত বিভেদ ঘুচে যেতে পারে।
তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা : স্বামী বিবেকানন্দের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো মানে তাঁর বাণীকে মনে রাখা নয়, জীবনে কাজে লাগানো। তাঁর দেখানো পথ ধরে সমাজের অন্ধকার দূর করতে হবে। যুবসমাজকে তাঁর শিক্ষা ধারণ করে নতুন দিনের সূচনা করতে হবে।
প্রণাম স্বামীজিকে, যিনি শুধু একজন মহামানব নন, আমাদের অন্তরের আলো। তাঁর আদর্শ আমাদের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকুক। শুভ জাতীয় যুব দিবস।
ছবি সংগৃহীত