বিশ্বজিৎ নাথ : রাজনীতি যেন আর কেবল মতের লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ নেই, এবার তা গড়াল রক্তপাতের চরম সীমানায়। কাঁচরাপাড়া পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হালিশহর চিত্তরঞ্জন কলোনি বুধবার রাতে পরিণত হল তীব্র রাজনৈতিক সংঘর্ষের মঞ্চে। আক্রান্ত হলেন বিজেপির সক্রিয় কর্মী রাজু দে। বর্তমানে সংকটজনক অবস্থায় তিনি কল্যাণীর এইমসে ভর্তি।

ঘটনার বর্ণনায় শিউরে উঠছে এলাকাবাসী। অভিযোগ, বুধবার রাতে বাইকে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন রাজু দে। চিত্তরঞ্জন স্কুলের কাছে হঠাৎই পথ আটকায় কয়েকজন যুবক। বাইক থেকে টেনে ফেলে রাজুকে এলোপাথাড়ি মারধর করা হয়। মাথায় ইঁট দিয়ে আঘাত করে এক হামলাকারী। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে তাঁকে নেওয়া হয় জে এন এম হাসপাতালে, পরে স্থানান্তরিত করা হয় কল্যাণী এইমসে।

রাজুর অভিযোগ, হামলাকারীদের নেতৃত্বে ছিল স্থানীয় তৃণমূল কর্মী বাপ্পা। তাঁর হাতে ছিল পিস্তল। ‘কার্তিক মহারাজকে বাড়িতে ডাকা’ এবং ‘রামনবমীর শোভাযাত্রা আয়োজন’-এর জন্যই তাঁকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই হামলা বলে রাজুর দাবি।

সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে হামলার কিছু ঝলক, যা প্রমাণ করছে ঘটনার তীব্রতা। রাজু দে-র ওপর হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কল্যাণী এইমসে হাজির হন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং। ছিলেন চাকদহের বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ, কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায় সহ অন্যান্য বিজেপি নেতৃত্ব।
হাসপাতালে দাঁড়িয়ে অর্জুন সিং স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “রাজুকে খুন করার ছক ছিল। পুলিশ যদি নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে জনগণকে আত্মরক্ষায় প্রস্তুত থাকতে হবে। মারের জবাব এবার হবে পাল্টা মার।”
এই ঘটনা শুধু একজন রাজু দে-র ওপর আক্রমণ নয়, এটি আসলে গণতন্ত্রের ওপর হানার স্পষ্ট ছবি। একদলীয় দাপটের বিরুদ্ধে বিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করতে উঠেছে ‘ঠ্যাঙারে বাহিনী’, এমনটাই দাবি বিজেপি নেতৃত্বের।
প্রশ্ন উঠছে— যখন রাজনীতি অস্ত্রের ছায়ায় ঢেকে যায়, তখন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? প্রশাসন যদি নীরব থাকে, তবে আইন-শৃঙ্খলা কোন পথে? জল ঘোলা হচ্ছে বীজপুরের রাজনীতিতে— আর তাতে রক্তাক্ত হচ্ছে রাজুদের মতো শত শত কর্মী।
রাজু দে এখনো হাসপাতালের বেডে শুয়ে, কিন্তু তাঁর আঘাতে ফুটে উঠছে শাসনের নির্মম ছায়া— আর সেই ছায়ার প্রতিক্রিয়ায়, রাজনীতির মঞ্চে এবার গর্জে উঠছে একটাই স্লোগান— “দাওয়াই একটাই, পাল্টা মার।”