স্কুলে নিতে গিয়ে চকোলেট খাইয়ে অচেতন করে ধ/র্ষণ! টোটোচালকের ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড

জলপাইগুড়ি, ১৬ জুলাই’২৫ : অষ্টম শ্রেণির এক নাবালিকা ছাত্রীকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে চকোলেট খাইয়ে অচৈতন্য করে ধর্ষণের অভিযোগে ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিলেন জলপাইগুড়ির বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক রিন্টু সুর। অভিযুক্ত টোটো চালকের বিরুদ্ধে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং ধর্ষণ-পরবর্তী ভিকটিম ভয় দেখানোর দায়ে আরও ১ হাজার টাকা জরিমানা ঘোষণা করা হয়েছে। অনাদায়ে যথাক্রমে ২ মাস ও ১ মাসের অতিরিক্ত কারাবাস হবে। পাশাপাশি, নাবালিকাকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে, নাবালিকাকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে টোটোচালক তাকে চকোলেট খাইয়ে অচেতন করে। এরপর তিস্তা স্পার নামক নির্জন স্থানে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। ধর্ষণের পর অভিযুক্ত নাবালিকাকে ঘটনা কাউকে না বলতে হুমকি দেয় এবং তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। কিছুদিন পর নাবালিকার স্কুল ব্যাগে একটি প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট পাওয়া যায়। মায়ের জিজ্ঞাসাবাদে কন্যা ঘটনার কথা প্রকাশ করে। নাবালিকার মা সেদিনই মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে এবং ১ মাসের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করে।

বিচারক রিন্টু সুরের নেতৃত্বে মামলার শুনানিতে ১০ জন সাক্ষীর বক্তব্য নেওয়া হয়। সহকারী সরকারি আইনজীবী দেবাশীষ দত্তের বক্তব্য অনুযায়ী, মেডিক্যাল রিপোর্ট ও ফরেনসিক প্রমাণ অভিযুক্তের অপরাধ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে। বিশেষত, নাবালিকার দেওয়া বর্ণনা, চকোলেটে ড্রাগ মেশানোর অভিযোগ এবং ভিকটিমের মানসিক আঘাতের মূল্যায়ন রায়ে নির্ধারক ভূমিকা পালন করে।

সরকারি আইনজীবী দেবাশীষ দত্ত বলেন, “অভিযুক্ত শিশুর বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে নির্লজ্জ অপরাধ করেছে। ধর্ষণের পর ভিকটিমকে ভয় দেখানো এবং প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা অপরাধের মাত্রা বাড়িয়েছে।”

নাবালিকার মা বলেন, “আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমার মেয়ে যেন আবার নিঃশঙ্কভাবে স্কুলে যেতে পারে, এই আশা রাখি।”

এই রায় শিশু নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জলপাইগুড়িতে গত সপ্তাহেই এক নাবালিকা ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। তবে একক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড শিশু নির্যাতন মামলায় তুলনামূলকভাবে বিরল, যা অপরাধীর দণ্ড নিশ্চিত করতে পুলিশ ও বিচারব্যবস্থার দ্রুত তৎপরতাকে তুলে ধরে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি জলপাইগুড়িতে POCSO মামলায় দ্রুত চার্জশিট ও রায়ের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে জেলায় POCSO আদালতের ৮৭% মামলায় অভিযুক্তদের দণ্ডিত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *