জলপাইগুড়ি, ২৮ জুলাই : এক বিরল উদাহরণ স্থাপন করলেন জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নার্সিং স্টাফ তৃষ্ণা সূত্রধর। তাঁর এবি নেগেটিভ রক্তদান প্রাণ ফিরিয়ে দিল ২১ বছরের যুবক সুমিত দত্তকে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যনালীর সমস্যায় ভুগছিলেন।

সুমিতের অবস্থা সংকটজনক হলে জলপাইগুড়ি মেডিকেলে ভর্তি করে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরই জরুরি হয়ে পড়ে অত্যন্ত দুর্লভ এবি নেগেটিভ রক্ত। রোগীর পরিবার রক্তের জন্য আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধব এমনকি ব্লাড ব্যাংকেও চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি— কিন্তু সবদিক থেকেই ব্যর্থ হন।
এই দুঃসময়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একটি আবেদন। সেখান থেকেই যোগাযোগ হয় নার্স তৃষ্ণা সূত্রধর-এর সঙ্গে, যাঁর রক্তের গ্রুপ এবি নেগেটিভ। সমাজসেবী পম্পা সূত্রধরের উদ্যোগে রক্তদাতা ও রোগীর পরিবারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হয়।
রবিবার, নিজের জীবনের প্রথম রক্তদান করেন তৃষ্ণা সূত্রধর। তিনি বলেন, “জীবনে প্রথমবার রক্ত দিলাম, শুরুতে একটু ভয় লাগছিল। কিন্তু পরে যখন বুঝলাম আমার রক্তে একটি জীবন বাঁচতে পারে, তখন মনে হল— এটাই জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার।”
রোগীর আত্মীয় বাপি ঘোষ কৃতজ্ঞচিত্তে জানান, “অনেক চেষ্টা করেও যখন হাল ছেড়ে দিতে বসেছিলাম, তখন এক নার্স এগিয়ে এসে যা করলেন, তা আমরা কোনদিন ভুলব না।”
সমাজসেবী পম্পা সূত্রধর বলেন, “নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপ বা বম্বে গ্রুপ অত্যন্ত বিরল। তাই প্রত্যেকের উচিত নিজের রক্তের গ্রুপ জানা এবং প্রয়োজনে রক্তদানে এগিয়ে আসা। এটাই মানবিকতা এবং এক সামাজিক দায়িত্ব।”
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল— রক্তদান শুধুই শরীরের নয়, এটি এক হৃদয় থেকে আরেক হৃদয়ে জীবনের স্পন্দন পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম। নার্স তৃষ্ণার মতো মানুষদের কারণেই সমাজে এখনও মানবিকতার আলো জ্বলছে।