জলপাইগুড়ি : জলপাইগুড়ির ঐতিহ্যবাহী বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ীতে মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে নিত্যপূজার নিয়মে। এবারের দুর্গোৎসব রাজবাড়ীর জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এ বছরের পূজা পা দিয়েছে ৫১৬ তম বছরে। সকালে রাজপুরোহিত শিবু ঘোষাল নিত্যপূজিতা দেবীকে দর্পণে স্নান করিয়ে মহাঅষ্টমীর পূজার সূচনা করেন।

সকালের নটায় শুরু হওয়া পূজা সারাদিন ধরে চলেছে নানা নিয়ম ও আচার অনুসরণ করে। প্রতিটি স্তরে ভক্তদের উপস্থিতি এবং পূজার প্রার্থনা মণ্ডপকে মুখরিত করেছে। বিকেলে অনুষ্ঠিত বিশেষ আরতি ভক্তদের মনকে এক গভীর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা প্রদান করেছে। সন্ধ্যাবেলায় শুরু হওয়া অর্ধরাত্রি পূজা এবং নিয়ম মেনে অনুষ্ঠিত সন্ধি পূজা এই পূজাকে করেছে আরও আকর্ষণীয়। মহাঅষ্টমীর দিনে দেবীকে আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়, যা রাজবাড়ীর দীর্ঘ ঐতিহ্যের অংশ। সকাল থেকেই রাজবাড়ীর প্রাঙ্গণে ভক্তদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, “রাজবাড়ীর দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্যপূর্ণ পূজার কারণে এখানে প্রতিটি বছরই ভক্তরা ভিড় জমান। পূজার আয়োজন, আরতি ও সন্ধি পূজার অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সত্যিই এক অনন্য অভিজ্ঞতা।” রাজবাড়ীর দুর্গোৎসব শহরের সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার মিলনস্থল হিসেবে পরিচিত।

একই দিনে হাওড়া জেলায় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রধান কার্যালয় বেলুড়মঠেও পালিত হয়েছে কুমারী পূজা। এবারের কুমারী নির্বাচিত হয়েছেন ৫ বছর ২ মাস বয়সী শ্রীনিকা মুখোপাধ্যায়। তার বাবা লক্ষ্মী জনার্দন মুখোপাধ্যায় ও মা মৌসুমী মুখোপাধ্যায়। সকাল নটায় শুরু হওয়া কুমারী পূজায় ভক্তদের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো।
রামকৃষ্ণ মিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “কুমারী পূজা অত্যন্ত নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। শিশু দেবী রূপে পূজিত হয়ে ভক্তদের মন্ত্রোচ্চারণ ও পূজার মাধ্যমে দর্শকদের কাছে আধ্যাত্মিক শিক্ষা পৌঁছে দেয়। এবছরও প্রচুর ভক্ত উপস্থিত ছিলেন।” কুমারী পূজার সময় ভক্তদের জন্য বিশেষ খিচুড়ি ভোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা অনুষ্ঠানকে আরও আনন্দময় করে তুলেছে।
জলপাইগুড়ি ও হাওড়ার এই পূজা আয়োজন শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার নয়, বরং সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সামাজিক সমন্বয়ের এক অনন্য উদাহরণ। রাজবাড়ী ও বেলুড়মঠ উভয় ক্ষেত্রেই ভক্তরা পূজার আচার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ধর্ম, ভক্তি ও উৎসবের এক জীবন্ত মিলন উপভোগ করেছেন।