অরুণ কুমার : রাজ্যের রাজনৈতিক মারামারি হানাহানি ইতিহাস নতুন কিছু নয়। এমনই এক ভয়াবহ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগে ২০০৩ সালের নভেম্বর মাসে অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার বীরপাড়া থানার অধীনে দলগাঁও চা বাগানের প্রায় ৫০ জন শ্রমিক একটি ঘরের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন। তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং বিরোধী দলনেতা ছিলেন পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিষয়টি বিধানসভায় তুলে শাসক সিপিএমকে বেকায়দায় ফেলে ছিলেন। এরপর আবার অনেক ঘটনা ঘটে গিয়েছে তিস্তা মহানন্দা ভাগীরথী গঙ্গা দিয়ে প্রচুর জল বয়ে গিয়েছে।

আবার চলতি বছরের অর্থাৎ ২০২২ সালের মার্চ মাসে রামপুরহাট কান্ড, শুধু রাজ্য নয় সারা দেশে হইচই পড়ে গেছে, সামাজিক গণমাধ্যম থেকে আরম্ভ করে ফ্রন্টলাইন মিডিয়া সবক্ষেত্রেই। কেন্দ্র রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নজরদারি খবরা- খবর তদন্ত গ্রেফতার দোষারোপের পাল্টা দোষারোপ এই পর্বের মধ্য দিয়ে নজর রাখছে রাজনৈতিক মহল এবং রাজ্যের সাধারণ থেকে সচেতন মানুষ। বৃহস্পতিবার বীরভূমের রামপুরহাটে বগটুই গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যান। সেখান পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী একের পর এক নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের মধ্যে রয়েছে রাজ্যজুড়ে বেআইনি অস্ত্র এবং বোমা বাজেয়াপ্ত করা।

আর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মিলতেই তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে পুলিশের। রামপুরহাট কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘রামপুরহাটের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কেউ ছাড়া পাবে না।” তিনি বলেছেন, “সরকার কখনও চায় না রক্ত ঝরুক। কখনও চাই না কেউ খুন হোক। যারা সরকারে থাকে না তারা চক্রান্ত করে যাতে সরকারের বদনাম হয়।” মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “বুধবারই তিনি সেখানে যেতেন, কিন্তু এইদিন সেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সদস্যরা যাওয়ায় তিনি বুধবার যান নি।”
রামপুরহাট- কাণ্ডে ‘ষড়যন্ত্রের’ তত্ত্বেই ‘সিলমোহর’ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করলেও, এ জন্য বিরোধী দলগুলির দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি।
বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে। এখন প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে মুখ্যমন্ত্রী ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খাড়া করছেন।’’
উল্লেখ করা যেতে পারে যে রামপুরহাটে উপপ্রধান খুন ও একের পর এক বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় টুইট করে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজ্যপাল তার টুইট বার্তায় লিখেছেন, “বীরভূমের রামপুরহাটে ভয়ঙ্কর হিংসা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রাজ্যে অরাজকতা ও হিংসার বাতাবরণের এটি একটি ইঙ্গিত। ইতিমধ্যেই ৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছ থেকে এব্যপারে জানতে চেয়েছি।”
এছাড়াও তিনি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে সরাসরি তোপ দেগে বলেন, “এখানে বসে রয়েছেন একজন লাটসাহেব। কথায় কথায় বলছে সবচেয়ে খারাপ বাংলা। প্রতিদিন সরকারকে গালাগাল দিচ্ছে।”
সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে তিনি বুধবার উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশের উদাহরণ টানেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন ,”একটা ঘটনা ঘটেছে তার নিন্দা করি। এখানের থেকে অনেক বেশি ঘটনা উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ,বিহার, রাজস্থানে হয়। এখানে রঙ না দেখে অ্যাকশন নেওয়া হবে।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও অভিযোগ, “হাথরাস, উন্নাওতে দল পাঠিয়েছিলাম ঢুকতে দেওয়া হয়নি।”
তবে বিজেপি বা অন্য কোনও দলের রামপুরহাট যাওয়ায় তিনি বাধা দিচ্ছেন না। মমতার কথায়, ‘‘উত্তরপ্রদেশে আমাদের এমপিদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমাদের এখানে এটা আমরা করি না। সবাইকে যেতে দিই। এটা আমাদের সহমর্মিতা, সহযোগিতা।’’
ঘটনার পর থেকে তিনদিন কেটে গেলেও এখনও আতঙ্ক কাটেনি গ্রামের। বগটুই গ্রাম জুড়ে চলছে পুলিশের টহলদারী। জয়গায় জায়গায় রয়েছে পুলিশ পিকেট।
Photo source- Facebook.