নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি:- কালের অমোঘ নিয়মে অস্তিত্ব সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী জলপাইগুড়ি শহরের ফ্রেন্ডস ড্রামাটিক ক্লাব বা বান্ধব নাট্য সমাজ। এর বর্তমান পরিস্থিতি আপনাকে যে নস্টালজিক করে তুলবে- সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এর বাস্তব চিত্র জলপাইগুড়িবাসীকে পীড়া দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বর্তমানে চারিদিকে বিল্ডিংয়ের ভগ্নদশা। ভগ্ন বিল্ডিং এ জন্মেছে গাছ। ভগ্নপ্রায় বিল্ডিংয়ের অনেকাংশই। এক সময় যে জায়গাটা জমজমাট ছিল, আজ সেখানকার পরিবেশ সংস্কৃতি প্রেমীদের চোখে জল এনে দেয়। জলপাইগুড়ি বান্ধব নাট্য সমাজকে তাই বাঁচানোর আর্জি জানিয়েছেন এই ক্লাবের প্রবীণ সহ-সভাপতি থেকে শুরু করে শহরের সংস্কৃতি প্রিয় ব্যক্তিবর্গরা। বর্তমানে বান্ধব নাট্য সমাজের পাশে মিনি বান্ধব নাট্য সমাজ নামে একটি হলঘরে টিমটিম করে চলছে সংস্কৃতি চর্চা। সেখানে টুকটাক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

এ বিষয়ে জলপাইগুড়ি শহরের সংস্কৃতি ব্যাক্তিত্ব জ্যোতি প্রসাদ রায় বলেন, বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও সংস্কৃতির শহর জলপাইগুড়িতে নাট্য চর্চা এখনো বিদ্যমান। বান্ধব নাট্য সমাজের বর্তমান ভগ্ন দশা একজন সংস্কৃতি প্রেমী হিসাবে যথেষ্ট পীড়াদায়ক। বান্ধব নাট্য সমাজকে সরকারি অনুদান দিয়ে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

বান্ধব নাট্য সমাজের সহ-সভাপতি প্রবীণ ব্যক্তিত্ব প্রদীপ কুমার বোস বলেন, এটি একটি ঐতিহ্যপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এর একটি গৌরব রয়েছে। শহরের বিশিষ্ট জনেরা জড়িত ছিলেন বান্ধব নাট্য সমাজের সাথে। ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এটি। বর্তমানে শতবর্ষের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আমাদের এই ক্লাব। জলপাইগুড়ি শহরের প্রাণকেন্দ্র কদমতলায় মোট ২৪ কাঠা জমির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। প্রদীপ বাবু বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ সরকার যদি ক্লাবের জন্য একটি ছোট হলঘর তৈরি করে বাকিটা সরকারি কাজে ব্যবহার করে তাহলে এই ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠান রক্ষা পাবে। প্রদীপ বাবুর আশঙ্কা এভাবে পরে থাকলে বিভিন্নভাবে এটি দখল হয়েও যেতে পারে। তাই সেই সমস্যা এড়াতে সরকারের এই প্রতিষ্ঠান রক্ষায় এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

বান্ধব নাট্য সমাজের সামনে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবসা করে আসছেন শিব চন্দ্র মাহাতো। শিব বাবুর বাবা এখানে চায়ের দোকান করতেন, বর্তমানে শিব বাবু সেই দোকান চালান। শিব বাবু বলেন, দীর্ঘদিন আমরা এই হলে সিনেমা দেখেছি। সেই সময় কত জমজমাট থাকতো এই এলাকাটা। শুধু সিনেমাই নয় নাটক সহ নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত এই বান্ধব নাট্য সমাজ হলে। কিন্তু বর্তমান অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগছে।

এ বিষয়ে বান্ধব নাট্য সমাজের বর্তমান সম্পাদক সোমনাথ পাল টেলিফোনে আমাদের জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারকে এখানে একটি সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য অনুরোধ আগেও করা হয়েছে, ফের এরজন্য নতুন করে প্রয়াস শুরু করা হচ্ছে।

শহরবাসীরাও মনেপ্রাণে চান বান্ধব নাট্য সমাজ ফের সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র হয়ে উঠুক এবং এই কাজে এগিয়ে আসুক সরকার।