অরুণ কুমার : কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের ডাকা দু’দিনের দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে আংশিক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।

বামেদের ডাকা বন্ধের দ্বিতীয় দিনে আংশিক প্রভাব সারা রাজ্যে। বন্ধের দিন বিক্ষিপ্ত অশান্তি হলেও প্রায় স্বাভাবিক ছিল জনজীবন। বাম কর্মী সমর্থকরা মঙ্গলবারও বন্ধ সফল করতে রাস্তায় নেমেছেন। তবে প্রভাব তেমন পড়ে নি। যদিও রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে। জ্বালানির ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি সহ মোদি সরকারের একাধিক নীতির বিরোধিতায় ২৮ ও ২৯ মার্চ ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছিল বামেরা। জনজীবনে যাতে ধর্মঘটের প্রভাব না পড়ে সেদিকে কড়া নজর ছিল রাজ্য প্রশাসনের। যদিও সোমবার সকাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে এসেছিল বিক্ষিপ্ত অশান্তির ছবি। তবে মঙ্গলবার পরিস্থিতি ভিন্ন। অবশ্য এদিন সকাল থেকেই যাদবপুরের ৮ বি, বিজয়গড় এলাকায় পথে নামে বামেরা। বাঘাযতীন মোড়ে দফায় দফায় চলে বিক্ষোভ। কলকাতায় ধর্মঘটীদের বাধার মুখে পড়ে একাধিক বাস। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়।

উত্তরবঙ্গের বিভাগীয় শহরে সকাল থেকে ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচার সেই সঙ্গে পিকেটিং অব্যাহত রাখতে সক্রিয় ছিল আন্দোলনকারীরা। শহরের প্রাণকেন্দ্র কদমতলা এলাকায় ধর্মঘটকে উপেক্ষা করে একটি শপিং মল খোলা হয়েছিল এদিন। মলটি বন্ধ করাকে কেন্দ্র করে সাময়িক সময়ের জন্য ধর্মঘট সমর্থনকারীদের সঙ্গে বচসা হয়। এরপর ওই মলের বাইরে লাল ঝান্ডা লাগিয়ে মলটি বন্ধ করে দেয় আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে এদিন সকাল থেকে শহরের দোকানপাট খুব একটা খুলেনি। বেসরকারি বাসও রাস্তায় দেখা যায়নি। তবে সরকারি বাসের পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল।

শহরের কদমতলা, ডিবিসি রোড, মার্চেন্ট রোডে চলছে মিছিল ও পিকেটিং। বেসরকারি বাস রাস্তায় দেখা যায়নি এদিনও। তবে সরকারি বাসের পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল।
অন্যদিকে ব্যাঙ্ক, আদালত, পোস্ট অফিস ও সরকারি অফিসের সামনে ধর্মঘট সমর্থনকারী নেতা কর্মীদের চলছে পিকেটিং ও অবস্থান বিক্ষোভ। অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। জলপাইগুড়ি বামফন্টের জেলা আহ্বায়ক সলিল আচার্য বলেন,” সাধারণ মানুষ খেটে খাওয়া মানুষের দাবি আদায়ের জন্য এই ধর্মঘট। দেশ ব্যাপী খুব ভাল সাড়া পড়েছে জলপাইগুড়ি শহরে। সকলে ধর্মঘটের সমর্থন করেছে। এই কারণে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
বামেদের শ্রমিক সংগঠনগুলোর ডাকা ৪৮ ঘন্টা বন্ধের দ্বিতীয় দিন জলপাইগুড়ি শহরে বনধ সর্বাত্মক সফল করতে পথে নামে সিটুর নেতা কর্মীরা। গতকাল ডিবিসি রোডের একটি পেট্রল পাম্প বন্ধ থাকলেও সকালে ফের খোলা হয় বলে অভিযোগ। এদিন বনধ সর্মথকরা পেট্রল পাম্প বন্ধ করার অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে সিটু নেতা শুভাশিস সরকার বলেন, এই বনধে ব্যাপক সাড়া মানুষ দিয়েছেন। ডিবিসি রোডের একটি পেট্রল পাম্প খোলা হয়েছিল, পরে তা বন্ধ করে পাম্প কর্তৃপক্ষ। বেলা বাড়তেই লাল পতাকা হাতে বনধ সমর্থকদের দাপাদাপি শহর জুড়ে। বন্ধ করে দেওয়া হল পেট্রোল পাম্প, সহ দোকানপাট।
জলপাইগুড়ি শহরে বনধ এর দ্বিতীয় দিনের সকালে স্বাভাবিক জনজীবন থাকলেও, বেলা বাড়তেই লাল পতাকা হাতে দলীয় কর্মী সমর্থকেরা পথে নেমে একে একে বন্ধ করে দেয় পেট্রোল পাম্প সহ বিভিন্ন জায়গায় দোকানপাট। বনধের দ্বিতীয় দিনেও চলে নি ডুয়ার্সগামী বেসরকারি পরিবহন।
বাম ও কংগ্রেসে শ্রমিক ইউনিয়ন গুলির ডাকা দুদিনের ধর্মঘটের মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিন, তবে প্রথম দিনের তুলনায় অনেকটাই স্বাভাবিক জনজীবন। খুলেছে ছোটো দোকান বসেছে বাজার, চলছে ট্রেন। এই প্রসঙ্গে এক প্রবীণ বনধ সমর্থক জানান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর পর পর দুদিনের বনধ এর চাপ পড়ুক সেটা আমরা চাইছি না, তাই অনেকেই দোকানপাট খুলেছে।
যদিও বেলা বাড়তেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেলো লাল পতাকা নিয়ে স্লোগান ঝাঁপ বন্ধ করো, ঝাঁপ বন্ধ করো,,। আর এতেই এক শ্রেণীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে জলপাইগুড়ি পুলিশ প্রশাসনের ওপর জন্মালো ক্ষোভ। তবে বনধ এর দ্বিতীয় দিনেও জলপাইগুড়ি থেকে ডুয়ার্স অভিমুখে কোনো বেসরকারি বাস চলাচল করেনি। যার ফলে সমস্যায় পড়েছেন বহু যাত্রী।
যদিও এই সময়ে পুলিশ প্রশাসনকে দেখা যায় নি বনধ সমর্থকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে, যার ফলে বনধ এর দ্বিতীয় দিনের দুপুরে আবার কিছুটা বনধ এর প্রভাব লক্ষ করা যায় জলপাইগুড়ি শহরে।
আজ বনধ এর সমর্থনে একটি মিছিল বার করে বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। যার নেতৃত্ব দেন জেলা বামফ্রন্টের আহবাহক সলিল আচার্য্য, তিনি দুদিনের এই বনধ সফল বলে দাবি করার পাশাপাশি সমাজের সকল শ্রেণীর জনতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষ তারই প্রতিফলন হচ্ছে বনধ এর মধ্যে দিয়ে।
অপরদিকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বেশকিছু ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । সোমবার কোচবিহারে বাস ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠার পর মঙ্গলবার ভোর থেকেই সেখানে দেখা মিলছে না বেসরকারি বাসের। বাধার মুখে পড়েছে সরকারি বাসও। কোচবিহারে বাস আটকাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়েও পড়ে বন্ধ সমর্থকরা। সেই সঙ্গে আলিপুরদুয়ার, মালবাজার, ধূপগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। রাস্তাঘাটও প্রায় জনশূন্য। বন্ধের সমর্থনে মহিষাদলের কাছে হলদিয়া মেচেদা রাজ্য সড়কে বাম সমর্থকরা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। যদিও তার প্রভাব খুব একটা পড়েনি। তবে হালতুতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বন্ধ সমর্থকরা। ইতিমধ্যেই ৪০ জন বন্ধ সমর্থনকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বন্ধের প্রথম দিনে কিছু জায়গায় ট্রেন অবরোধের ঘটনা সামনে এসেছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে বেশিরভাগ জায়গাতেই সাধারণ কর্মব্যস্ত দিনের মতোই ছবি সামনে উঠে এসেছে। আন্তঃজেলা বাস চলাচলও অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। তবে বন্ধের দ্বিতীয় দিনেও ব্যাঙ্কিং পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটেছে। দেশের অন্যান্য রাজ্যেও বন্ধের আংশিক প্রভাব পড়েছে।