অরুণ কুমার : ভারতে করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের আঘাতের ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মাঝেই, কেন্দ্র চিঠি লিখেছে দেশের পাঁচ রাজ্যকে। চলতি সপ্তাহে এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ বলেছেন এই রাজ্যগুলি থেকেই ভারতের মোট কেসলোড এবং উচ্চ হারে সংক্রমণের মধ্যে সবথেকে বেশি সংক্রমণ আসছে। সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্রিয়াকলাপের উপর বিধি নিষেধ তুলে দেওয়ার আগে ঝুঁকির মূল্যায়ন করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র।

এই পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে রয়েছে দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ,মহারাষ্ট্র এবং মিজোরাম। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সমস্ত রাজ্যকে সংক্রমণের বিস্তারের উপর নজরদারি চালিয়ে যাওয়ার এবং কোভিড -১৯ সংক্রমণের দ্রুত এবং কার্যকর রোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছে ভিড় জায়গায় মাস্ক পরার উপর বিশেষ জোর দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়াও রাজ্যগুলিকে পরীক্ষা- ট্র্যাক- ট্রিট- টিকাকরণ এবং কোভিডের উপযুক্ত আচরণের এই পাঁচ কৌশল চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উদ্বেগজনক ক্ষেত্রগুলিতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং তাৎক্ষনিক ফলোআপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি চিঠিতে জানিয়েছেন। চিঠিতে ভূষণ আরও বলেছেন, যে রাজ্যগুলিকে অবশ্যই কঠোর নজরদারি বজায় রাখতেই হবে এবং সংক্রমণের যে কোনও বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অগ্রিম পদক্ষেপ নিতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে সে বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত জানা না গেলেও আপাতত এই রাজ্যে কোভিড প্রটোকল বিধি নিষেধ বলবৎ থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও উল্লিখিত রাজ্যগুলি থেকে যারা এই রাজ্যে আসবেন তাদের জন্য এই বিধি নিষেধ কার্যকর হতে পারে।
এদিকে স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েব সাইটে প্রাপ্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে ক্রমশ কমছে করোনা সংক্রমণ। শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৬। পাশাপাশি, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কোভিড বুলেটিন থেকে জানা গিয়েছে, বাংলায় মোট সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২০,১৭,৯০০। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৯ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৯,৯৬,৪৫৫ জন। এই মুহূর্তে রাজ্যে করোনা মৃত্যুর সংখ্যা ২১,২০০ এবং করোনায় মৃত্যু হার এসে দাঁড়িয়েছে ১.০৫ শতাংশে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিভৃতবাসে রয়েছেন ২১৮ জন। সেফ হোমে অবশ্য কোনও করোনা রোগী নেই। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৭ জন করোনা আক্রান্ত। বৃহস্পতিবার মোট ৯,৫৭৮টি করোনা নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৪,৯৫৬,৯৯৩ নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ৯৪,৩৭৯টি করোনা প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে।
তবে কলকাতা মহানগর এলাকায় এই মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ যে ভাবে পদে পদে কোভিড-বিধি লঙ্ঘন করছেন, তাতে চিন্তায় পড়েছে কলকাতা পুরসভা কতৃপক্ষ। মাস্ক না পরা, শারীরিক দূরত্ব বিধি না মানা, এই প্রবণতা আবার বিপদ ডেকে আনতে পারে। মাস্ক পরায় বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে পুরসভাগুলিকে ফের প্রচারে নামার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। একমাত্র শ্বাসকষ্টের রোগী ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা প্রায় সমস্ত রোগীর থেকেই নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা করা হবে।
দেশে কিছু রাজ্যে করোনা বাড়ছে। কিন্তু রাজ্যে নিঃশব্দে করোনা সংক্রমণ ঘটিয়ে বড় বিপদ ঘনিয়ে আসার আগে করোনার হাল হকিকত জানতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, জেলায় জেলায় সাধারণ মানুষের করোনা পরীক্ষা করিয়ে রাজ্যে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা হবে। করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর সময় থেকেই দেশ-বিদেশের অতিমারি বিশেষজ্ঞরা বেশি করে করোনা পরীক্ষা করানোর উপর জোর দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতর একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে জেলায় জেলায় হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসবেন যে সব রোগী, তাঁদের করোনা পরীক্ষা করানো হবে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, রোগীদের থেকে প্রাপ্ত নমুনার পরীক্ষা করেই রাজ্যে করোনা সংক্রমণের এখনকার পরিস্থিতি কী, সে সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
কী ভাবে হবে পরীক্ষা? এবিষয়ে স্বাস্থ্য ভবনের বিবৃতিতে বিশদে জানিয়ে বলা হয়েছে, একমাত্র শ্বাসকষ্টের রোগী ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা প্রায় সমস্ত রোগীর থেকেই নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা করা হবে। অস্ত্রোপচারের রোগী, এমনকি দাঁতের চিকিৎসা জন্যও যাঁরা আসছেন, তাঁদেরও হবে পরীক্ষা। এ জন্য বিভিন্ন জেলার এক একটি হাসপাতাল নির্বাচন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৮টি জেলার ২৮টি হাসপাতালে ৪০০ জন করে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করবে স্বাস্থ্য বিভাগ। তার পর সেই সব নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হবে রাজ্যে করোনার পরিস্থিতি কী রকম। আগামী ২৭ তারিখ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে নমুনা সংগ্রহের কাজ। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সমস্ত নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নোডাল অফিসারের কাছে।
এবিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের অগোচরে কোভিড বাড়ছে কি না, বা কোভিড আন রিপোর্টেড থেকে যাচ্ছে কি না, তা জানা যাবে এই পরীক্ষায়।’’ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এই পরীক্ষাকে বলা হচ্ছে ‘সেন্টিনেল সারভেল্যান্স’ । করোনার উপর নজরদারি করার এই পরীক্ষার সবে প্রথম রাউন্ডের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হাতে সময় থাকতে এই ধরনের নজরদারির যথেষ্ট উপযোগিতা রয়েছে। বিশেষ করে উপসর্গহীনদের থেকে করোনা ছড়ানোর যে ঝুঁকি থাকে, তা-ও এড়ানো যাবে এই ধরনের নজরদারি পরীক্ষায় বলে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
Photo source- Pixabay.