স্নান বৈচিত্র্য : জানেন কি কোথায় স্নান করাকে মূর্খতা আর পাগলের লক্ষণ মনে করা হত

স্নান করাটা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারি। কিন্তু একটা সময় পর্যন্ত স্নান করাটা ছিল মারাত্মক অপরাধ।এরপর স্নান করার প্রচলন শুরু হয়। জলের পরিবর্তে গাধার দুধ, দামী মদ বা শুদ্ধ আতর দিয়ে নিয়মিত স্নান করতেন অনেক রানীরা। স্নান বৈচিত্র্যের নানান কাহিনী নিয়েই লিখেছেন পিনাকী রঞ্জন পাল।

আমাদের দেশের মানুষ রোজ স্নান করে। শরীরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য স্নান করাটা ভীষণ জরুরি। কিন্তু পঞ্চম শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত ইউরোপে স্নান করার প্রচলন ছিল না। সে সময় ওখানে স্নান করাকে মূর্খতা আর পাগলের লক্ষণ মনে করা হত। যে স্নান করত তাকে একঘরে করে দেওয়া হত। জলবাহক আর নাপিতরাও তাকে বয়কট করত। তবুও কারও যদি স্নান করার খুব ইচ্ছা হত তবে সে চুপচাপ সকলের নজর বাঁচিয়ে স্নান সেরে নিত। বাড়িতে কিংবা সকলের সামনে স্নান করাটা সে সময় ছিল মারাত্মক অপরাধ।

তোমাদের হয়ত বিশ্বাস হবে না, কিন্তু এটাই সত্যি যে স্পেনের রানী ইসাবেলা সারা জীবনে মাত্র দুইবার স্নান করেছিলেন। প্রথমবার যখন জন্মগ্রহণ করেছিলেন আর শেষবার যখন তাঁর বিয়ে হয়েছিল তখন। এইরকমই ফ্রান্সের সম্রাট লুই জীবনে মাত্র একবার স্নান করেছিলেন। আবার ইংল্যান্ডের সম্রাট হেনরী সপ্তম জীবনে কোনদিনও স্নান করেননি।

ইউরোপে স্নান করার প্রচলনের উদ্যোক্তা রোমের রাজা শার্লমেন। তিনি অষ্টম শতাব্দীর রাজা ছিলেন। তিনি আদেশ জারি করেছিলেন যে, রোজ স্নান করতে হবে। স্নান করাটা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারি। আর এই আদেশ যাতে পালন করা হয় সে জন্য আইন তৈরি করেছিলেন। রোমের সমস্ত সার্বজনীন স্থানে সরকারি স্নানঘর তৈরি করা হয়। রাজা নিজের প্রাসাদেও স্নানঘর তৈরি করান। এখানে তিনি দরবারীদের সঙ্গে রোজ স্নান করতেন। তখন থেকেই ধীরে ধীরে স্নান করার প্রচলন ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।

ক্লিওপেট্রার নাম নিশ্চয় তোমরা শুনেছো। মিশরের এই অতীব সুন্দরী রানীর স্নান করার বিচিত্র শখ ছিল। তিনি জল দিয়ে স্নান করতেন না। সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য তিনি সর্বদা গাধার দুধ দিয়ে স্নান করতেন। একবার ক্লিওপেট্রা এক সফরে যাবার সময় ১৫০টি দুধ দেওয়া গাধা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।

ক্লিওপেট্রার মতই রোমের সম্রাট নীরোর প্রিয় রানী পম্পনিয়ার স্নানের জন্য প্রতিদিন ৫০০টি গাধার দুধ স্নান ঘরে রাখা হত আর রানী দীর্ঘসময় ধরে তা দিয়ে স্নান করতেন।

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের স্ত্রী’ও স্নান করতে ভীষণ ভালোবাসতেন। স্পেনের এক রানী নেপোলিয়নের স্ত্রীকে পরাজিত করার জন্য দামী মদ দিয়ে স্নান করতে শুরু করেন। আবার তাঁকে হারাবার জন্য ফ্রান্সের রানী শুদ্ধ আতর দিয়ে স্নান করতে শুরু করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক ফিল্ম অভিনেত্রী ঈষদুষ্ণ গরম কফি দিয়ে স্নান করতেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন যে, গরম কফি দিয়ে স্নান করলে শরীর মোলায়েম আর রঙ পরিষ্কার হয়। আজকাল তো ইউরোপে গরম বালু দিয়ে ঘষে ঘষে স্নান করার প্রচলন হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে বহুল প্রচলিত ‘সূর্যস্নান’। সমুদ্রের ধারে প্রখর রৌদ্রে তেল মেখে প্রায় উন্মুক্ত শরীরে শুয়ে থাকতে আমাদের দেশের সি-বিচগুলোতেও প্রচুর বিদেশীকে দেখা যায়। এই স্নানের প্রধান উদ্দেশ্য হল রৌদ্রের তাপে ত্বককে ঝলসে বাদামী করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *