জলপাইগুড়ির পেটকাটি কালী মূর্তি আসলে বৌদ্ধ চন্ডিকা দেবীর মূর্তি !

সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ২৩ অক্টোবর : “এটি একটি বৌদ্ধ মূর্তি হলেও কালী মূর্তি হিসাবে পূজা করা হয়”- জানিয়েছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক তথা গবেষক উমেশ শর্মা। অদ্ভুত এই মূর্তিটির অবস্থান জলপাইগুড়ি জেলায়। প্রতি বছর কালী পূজার সময় এখানে বড় করে পূজা হয়, পূজাকে কেন্দ্র করে বসে মেলাও।

পেটকাটি মন্দির

অদ্ভুত এই দেবী দশভূজা। সাড়ে চার ফুট উঁচু। দেবী একটি প্রস্ফুটিত পদ্মের ওপর উপবিষ্টা। বামদিকের দুইটি হাত ভাঙ্গা ও বাকি তিনটি হাতে হাতি, নরকঙ্কাল ও বাদ্যযন্ত্র ধরা আছে। ডানদিকের একটি হাত ভাঙ্গা ও বাকি চারটি হাতে হাতি, নরমুন্ড, মনুষ্যমূর্তি ও ঘণ্টা ধরা আছে। দেবীর মাথার মুকুট সাপের,গলার অলঙ্কারও সাপের। কানের কুণ্ডলও সাপের। গলায় ঝুলছে নরমুন্ডের মালা। দেবীর নাক ভাঙা। আর তার পেট একদম তলানো, শিরদাঁড়ায় সাথে লাগানো। পেটে রয়েছে একটি বৃশ্চিক মূর্তি। এই মূর্তিটি কালো পাথরের। এই দেবী মূর্তির নিচে পায়ের দিকে উপবেশনরতা এক যক্ষিণী মূর্তি আছে। আর আছে শকুন, শেয়াল, ময়ূরের মূর্তি।

পেটকাটি মূর্তি

লোকমুখে কথিত মাটি খুড়তে গিয়ে কোদালের ঘা লেগে পেট কেটে গিয়েছিল তার। আর তা থেকেই নাম পেটকাটি দেবী বা পেটকাটি মাও নামে পরিচিত এলাকায়। তবে এই মূর্তিকে ধূমাবতি চন্ডী কালী দেবী হিসেবেই কালী পুজার সময় পুজা করা হয় বলে পুরোহিত বাবলু দেব শর্মা জানান। তিনি বলেন, কয়েক পুরুষ ধরে তারা এই মন্দিরে পুজো করে আসছেন। তবে এই মুর্তির বয়স কত তা অজানা।অত্যন্ত জাগ্রত এই দেবী। প্রায় দিনই দুরদুরান্ত থেকে মানুষ আসেন মন্দিরে। নিত্য পুজা না করলেও ভক্তেরা প্রতিদিন মন্দিরে এসে ধুপকাঠি, মোমবাতি জ্বালিয়ে দেন। উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি অসম, নেপাল ও ভূটান থেকেও বহু মানুষ এখানে পুজো দিতে আসেন।

মন্দিরের পুরোহিত বাবলু দেব শর্মা

পেটকাটি কালীমন্দির  পশ্চিমবঙ্গের  জলপাইগুড়ি জেলার  দোমহনী কাঁঠালবাড়ি গ্রামে অবস্থিত। কালো কষ্টি পাথরের মুর্তিটি দেখলে আজও শিহরন জাগে শরীরে। কালীপুজোর সময়ে মন্দিরকে ঘিরে বসে মেলা। প্রথমে কালো পাথরের মূর্তিটিকে পুজো করা হয়। তার পরে পাশের মন্দিরে পূজিতা হন শ্যামা কালী প্রতিমা।

উমেশ শর্মা

বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক তথা গবেষক উমেশ শর্মা এই পেটকাটি মূর্তি সম্পর্কে জানান, জলপাইগুড়িতে এককালে যে বৌদ্ধ প্রভাব খুব বিস্তৃত ছিল তার প্রমান পাওয়া গিয়েছিল স্যার জে ডি হুকারের হিমালয়ান জার্নাল। সেখানে তিনি বলেছিলেন, রংধামালির কাছেই একটা বৌদ্ধ স্তুপ ছিল। সেরকমই বৌদ্ধ একটা প্রভাব ময়নাগুড়ির পেটকাটি মন্দিরেও দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় 20/25 বছর আগে সেই অদ্ভুত মূর্তিটি স্থানীয় নদীখাতে পাওয়া যায়। একটি পদ্মের উপরে বসে থাকা দশভুজা এই মূর্তিটি কালো পাথরের এবং জানা যায় যেটা এটি হল বৌদ্ধ চর্চিকা দেবীর মূর্তি বা চামুন্ডা যাকে বলা হয় এবং বজ্রযানি এক দেবী মূর্তি। উমেশ বাবু বলেন, আসলে এটি একটি বৌদ্ধ মূর্তি, কিন্তু কালী মূর্তি হিসাবে পূজা করা হচ্ছে। একটা অদ্ভুত ধরনের কালী মূর্তি হিসাবে এখানে এটাকে পূজা করা হয়ে আসছে। একাদশ/ দ্বাদশ শতকের মূর্তি এটি।

দেখুন ভিডিও

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *