কোন্ পথে এবার কামতাপুর আন্দোলন ?


“দুই কঙ্কাল মিলিত হয়ে বিভ্রান্ত করছে ,ওরা বহিষ্কৃত” : অধীর; “জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সভাপতি আমি” : খুড়োকে চ্যালেঞ্জ ভাইপো অমিতের।

অরুণ কুমার : জ্যাঠা এবং ভাইপোর রাজনৈতিক লড়াই ক্রমশ জড়ালো হয়ে উঠতে আরম্ভ করেছে উত্তরবঙ্গে। কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টির প্রকৃত দাবিদারকে কেন্দ্র করে আবার উত্তরের রাজনীতি উত্তাপ সঞ্চার করতে আরম্ভ করেছে। সোমবার দিন জলপাইগুড়িতে আয়োজিত সংবাদ মাধ্যমের কাছে কোন রাগ ঢাক না করেই ধুপগুড়িতে আয়োজিত বৈঠকে চক্রান্ত ও দুই কঙ্কাল মিলন বলে কটাক্ষ করেছেন কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টির আরেক নেতা অধীর চন্দ্র রায়।

সোমবারের সাংবাদিক সম্মেলন

উল্লেখ করা যেতে পারে যে রবিবার দিন ধুপগুড়িতে দুই দল অতুল রায়ের পুত্র অমিত রায়ের কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টি ও নিখিল রায়ের কামতাপুর পিপলস পার্টি ইউনাইটেড মিলে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের জন্য “কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড ফোরাম” গঠন করেন।যার সভাপতি নির্বাচিত হন নিখিল চন্দ্র রায় আর সহ সভাপতি হন অমিত রায়। এই বৈঠকের পরপরই সক্রিয় হয়ে ওঠে অমিত রায় বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা প্রয়াত অতুল রায়ের অগ্রজ অধীর চন্দ্র রায়। যিনি নিজেকে কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টির সভাপতি বলে দাবি করে সোমবার দিন জলপাইগুড়িতে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ধুপগুড়ির বৈঠক আসলে কামতাপুর আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। এর প্রতিবাদে তারা আগামী দিনে সোচ্চার হবেন কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টির বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা এই নেতা অধীর চন্দ্র রায় জানিয়েছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে রবিবার দিন ধুপগুড়িতে কেপিপি নেতা নিখিল রায়ের বাড়িতে ‘কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড ফোরাম’ গঠনের ঘোষণা করেছেন তার একটা চক্রান্ত বলে তিনি অভিহিত করেছেন।

রবিবারের বৈঠক

এদিন সংবাদ মাধ্যমকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে
অধীর চন্দ্র রায় এর তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন যারা নিখিল রায়ের বাড়িতে গিয়ে বৈঠক করেছেন তারা মূল কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টি থেকে বহিষ্কৃত সদস্য। এর তিনি তীব্র নিন্দা করার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বৃহৎ জনগোষ্ঠী কামতাপুর আন্দোলনের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন পৃথক রাজ্য ও ভাষার দাবিতে যেখানে আন্দোলন চলেছে সেই আন্দোলনকে বিপথে পরিচালিত করে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে এই ফোরাম গঠিত হয়েছে বলে অধীর চন্দ্র রায় জলপাইগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন। তিনি আরো কটাক্ষ করে বলেন, দুই কঙ্কাল একত্র হয়ে চক্রান্ত মুলক কার্যকলাপ করছে। এই কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে তাদের কঙ্কালসার শরীরে মাংস বৃদ্ধি করে এই আন্দোলনকে একটা বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা বলে তিনি মনে করছেন । ভাইপো অমিত রায়ের এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তারা আইনের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি দাবি করে বলেন, ধূপগুড়ি সভায় সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন তারা সকলেই বহিষ্কৃত সদস্য। তারা দলের নীতি ও সংবিধান বহির্ভূত কার্যকলাপের ফলে বহিষ্কৃত হয়েছেন। নিজেকে দলের অর্থাৎ কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টির সেন্ট্রাল কমিটির চেয়ারম্যান রূপে দাবি করে অধীর চন্দ্র রায় রবিবারের ধুপগুড়ির বৈঠককে একটা তামাশা বলে অভিহিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও চিন্তা-ভাবনা করছেন বলে জানিয়েছেন।

অমিত রায়

অপরদিকে , জলপাইগুড়িতে আয়োজিত প্রেস কনফারেন্সে যে বক্তব্য অধীর চন্দ্র রায় রেখেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টির সভাপতি অমিত রায় কোন রকম রাগ ঢাক না করে জানিয়েছেন, যদি উনাদের দল যথার্থই কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টি হয়ে থাকে তাহলে তার যাবতীয় ডকুমেন্টস, রেজিস্ট্রেশন অডিট রিপোর্ট সহ ফাইল আমার কাছে রয়েছে , এই দলই নির্বাচন কমিশন দ্বারা স্বীকৃত। সেটা কি তাদের আছে? এই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি তিনি খুড়ো অধীর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, যদি তারাই আসল কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টি হয়ে থাকে তাহলে তারা মামলা করুক । অধীর চন্দ্র রায়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তারা আদালতে যাচ্ছেন না কেন? জোরালো প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন অতুল পুত্র অমিত রায়।

কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টির সভাপতি অমিত রায়কে ফোন এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে বলেন, তিনিই হলেন সাংবিধানিকভাবে রীতিনীতি মেনে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত দলীয় সভাপতি। তাঁর কাছে নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি সহ রেজিস্ট্রেশন সহ অডিট রিপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র রয়েছে। যদি তার দল সংবিধানিক রীতিনীতি না মেনে সভাপতি হয়ে থাকে তাহলে তিনি অধীর বাবুকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, তাহলে কেন ওনারা আমার বিরুদ্ধে আইনের দ্বারস্থ হচ্ছেন না? উনারাই বিষয়টিকে জল ঘোলা করছেন জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন সাংবিধান সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজ তিনি শুরু করেছেন। তিনি আরো বলেন, কামতাপুর পার্টি ইউনাইটেড এর সভাপতি কামতাপুর আন্দোলনের নেতা বর্ষীয়ান নিখিল রায় একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতা এবং সেই দলের সভাপতি সেই সঙ্গে বিচক্ষণ ব্যক্তিও। রীতিনীতি মেনেই কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টির সঙ্গে যৌথভাবে মিলিত হয়ে যে ফোরাম গঠন করেছেন। তিনি এমনটা না করে অন্য কারো সাথে মিলিত হয়ে এই ফোরাম বা জোট গঠন করতে পারতেন? সুতরাং অধীর বাবুরা যে দাবি করছেন তা কোন ভিত্তি নেই বলে অমিত রায় জানিয়েছেন। ধুপগুড়ির বৈঠককে তামাশা ও কঙ্কাল দুই নেতাকে কঙ্কাল এর মিলন বলার পরিপেক্ষিতে অমিত রায় বলেন, কে কঙ্কাল না কর্মক্ষম, এটা বৈঠকি তামাশা এর উত্তর তো জনগণ দেবে ,সময় কথা বলবে বলে তিনি জানিয়েছেন। অর্থাৎ কামতাপুর আন্দোলনের প্রয়াত নেতা অতুলচন্দ্র রায়ের গঠিত কামতাপুর পিপলস পার্টি পরবর্তীতে কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টির আসল দাবিদার কে – এই বিষয়কে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গের কামতাপুর আন্দোলন আগামী দিনে কোন পথে যাবে তা হয়তো সময় কথা বলবে।

বর্তমানে খুড়ো ভাইপো লড়াইয়ে জেরবার কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টি । অপরদিকে বর্ষিয়ান নেতা নিখিল রায়ের কামতাপুর পিপলস পার্টি ইউনাইটেড দলের সাথে যৌথভাবে ‘কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড ফোরাম’ গঠনের পর এই দাবি নিয়ে আন্দোলন কোন পথে যাবে তাও আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে ও পরবর্তী সময়ে স্পষ্ট হবে যার জন্য আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। একদিকে দলের দুই দাবিদারকে কে ঘিরে বিতর্ক ও দুই দলের আঁতাতে “Kamtapur State Demand Forum”(KSDF) গঠনকে ঘিরে রাজনৈতিক সমীকরণ কোন দিকে গড়ায় সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায় উত্তরের ভূমিপুত্র থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *