পিনাকী রঞ্জন পাল : লাফটার ইজ দি বেস্ট মেডিসিন। এই ধারনার ওপরে ভিত্তি করেই আজ থেকে ২৫ বছর আগে জলপাইগুড়ি শহরে গড়ে উঠেছিল একটি “লাফিং ক্লাব”। শহরের অরবিন্দ নগরের বাসিন্দা প্রয়াত অঞ্জন পাল কলকাতায় গিয়ে এই “লাফিং ক্লাব” দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের শহরে ফিরে এসে জনা কয়েক বন্ধুদের নিয়ে আনন্দ চন্দ্র কলেজের মাঠে ১৯৯৬ সালে এই ক্লাবের সূচনা করেছিলেন। এখানে এক্সাসাইজের মাধ্যমে দীর্ঘক্ষণ ধরে ইচ্ছাকৃত ভাবে হাসা হয়। “হাস্যযোগ” ধারনার ওপরে ভিত্তি করেই এই লাফিং ক্লাব গড়ে উঠেছে। দাবী করা হয়, ইচ্ছা করে হাসলেও স্বতঃস্ফুর্ত হাসির মতোই শারীরবৃত্তীয় ও মানসিক উপকার মেলে।
ইতিহাস
জানা যায়, চিকিৎসক ডাঃ মদন কাটারিয়া হাস্যযোগকে এদেশে জনপ্রিয় করেছিলেন। হাস্যযোগের উপর তাঁর লেখা একটা বই আছে, যার নাম “লাফ ফর নো রিজন”। বইটি ২০০২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। এই বইটা ডাঃ কাটারিয়া তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লিখেছেন। বর্তমানে ৫৩টি দেশে হাস্যযোগে অভ্যাস করা হয়। বিশ্বে প্রায় ৫,০০০ লাফটার যোগ ক্লাব আছে।
পদ্ধতি
লাফিং ক্লাবগুলোতে অন্যান্য এক্সাইজের মতো হাস্যযোগও মৃদু ওয়ার্ম-আপের সঙ্গে শুরু করা হয়। যেমন, স্ট্রেচিং ও শরীর নাড়াচাড়া করা। এর সঙ্গে চলে স্তব, হাততালি, চোখের সঙ্গে চোখের যোগাযোগ। ওয়ার্ম-আপের ফলে শরীরের প্রাথমিক জড়তা কেটে যায়। ব্রিদিং এক্সাসাইজের সাহায্যে ফুসফুসকে হাসির জন্য তৈরি করা হয়।
উপকারিতা
হাস্যযোগ কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনার মুড ভাল করে দিতে পারে। হাস্যযোগের ফলে মানুষের স্ট্রেস কমার পাশাপাশি উদ্যম ও জীবনশক্তি ফিরে আসে। হাস্যযোগের ফলে জীবনের গুণগত মান বাড়ে, শারীরিক যন্ত্রণা কমায়। প্রতিদিন হাস্যযোগ অনুশীলন করলে সমস্ত নেতিবাচক পরিস্থিতিকে পেছনে ফেলে মন একটা ইতিবাচক অবস্থায় থাকে। হাস্যযোগের ফলে শরীরের সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরালো হয়। তার ফলে চট করে রোগ হয় না।
জলপাইগুড়ি

বুধবার (১৬/১১/২০২২) জলপাইগুড়ি অরবিন্দ নগরের লাফিং ক্লাবের ২৫তম বর্ষ এবিপিসির মাঠে সাফল্যের সাথে উদযাপিত হল। ক্লাবের মোট ৪৫জন সদস্য সদস্যার মধ্যে এদিন ১৮জন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অমর (বেনু) মজুমদার এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত অঞ্জন পাল এবং অন্য ছয় জন সদস্যের প্রতি শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। এরপর তাঁদের উদ্যেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ১৯৯৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৫ বছরের এই ক্লাবের অগ্রগতির বিষয়ে আলোকপাত করেন অমর মজুমদার। এরপর লাফিংয়ের উপকারিতা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন দ্বারকা নাথ গায়েন। পরিশেষে সুবল চন্দ্র দাস এই লাফিং ক্লাবের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের শেষে মাঠে যারা উপস্থিত ছিলেন সবাইকে মিষ্টির প্যাকেট বিতরণ করা হয়।