বুড়ির ঘর বা ভেড়ার ঘর বা ন্যাড়া পোড়ানো

লেখক পঙ্কজ সেন

এই বছর হোলি উৎসব পালিত হবে ৭ই মার্চ, মঙ্গলবার। অর্থাৎ ৬ই মার্চ, সোমবার সন্ধ্যায় পালিত হবে বুড়ির ঘর বা ভেড়ার ঘর। প্রতিবছর দোল পূর্ণিমার আগের দিন সন্ধাবেলা বুড়ির ঘর বা ভেড়ার ঘর বা ন্যাড়া পোড়ানোর এক আলাদা আনন্দ রয়েছে আমাদের বাংলায়। পাড়ার বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা শুকনো পাতা, বাঁশ, গাড়ির বা সাইকেলের টায়ার, নারকেল বা সুপাড়ির ঢোঙ্গল ইত্যাদি সহযোগে বানানো হয় এই ঘর। তারপর সন্ধ্যেবেলা কাসর-ঘন্টা বাজিয়ে পাড়ার সকল ছেলে-মেয়েরা একত্রিত হয়ে জড়ো হয় এই স্থানে। তারপর আবির সহ ফুল, ফল, নকুল দানা, বাতাসা দিয়ে উলু ও শঙ্খ ধ্বনির মাধ্যমে দেবতার উদ্দেশ্যে পূজো নিবেদন করে সাত পাক ঘুরে আগুন দেওয়া হয় বুড়ির ঘরে। কোন কোন স্থানে আবার পুরোহিত সহযোগে মন্ত্র পড়িয়েও এই পূজা করা হয়। দোলযাত্রা শুরু হওয়ার আগে এই অনুষ্ঠানটি একটি আনন্দ এনে দেয় আমাদের মধ্যে। বর্তমানে অবশ্য দিন দিন এই সকল পুরানো সংস্কৃতি কমে আসছে।

ন্যাড়া পোড়ানোর পিছনে অবশ্য লুকিয়ে আছে বিষ্ণু ভক্ত প্রহ্লাদের এক অসাধারণ ভক্তির গল্প। রাক্ষস বা অসুর রাজা হিরণ্যকশিপুর ছেলে প্রহ্লাদ ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর একজন অন্যতম পরম ভক্ত। কিন্তু তার পিতা হিরণ্যকশিপু পুত্রের এই বিষ্ণু প্রীতি একদমই পছন্দ করতেন না। তিনি তার পুত্রকে এই বিষ্ণুভক্তি থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রহ্লাদ পিতার এই প্রস্তাবে রাজি হননি। অবশেষে হিরণ্যকশিপুর তার নিজ বোন হোলিকার সাহায্য চেয়ে পুত্র প্রহ্লাদকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। হোলিকার এমন একটি পোশাক ছিল যা আগুনেও পুড়তো না। হোলিকা সেই পোশাক পরিহিত হয়ে প্রহ্লাদকে তার সঙ্গে আগুনে বসাতে রাজি করান। অগ্নি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রহ্লাদ তাকে রক্ষা করার জন্য ভগবান বিষ্ণুর কাছে ভক্তি ভরে প্রার্থনা করেন। এই সময় ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদের প্রাণ রক্ষা হয় এবং হোলিকা সেই আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায়।

হিন্দু পুরাণ অনুসারে হোলিকার পূজা করলে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে সমৃদ্ধি আসে।লোকেরা বিশ্বাস করে যে, হোলিকার পূজা করার পর সমস্ত ধরনের ভয়কে তারা জয় করতে পারে এবং সকল রকমের নেতিবাচকতা দূরীভূত হয়।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : গুগল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *