গৌরীহাটের বারুনী মেলা ও জলপাইগুড়ি

লেখক পঙ্কজ সেন

জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন মোহিত নগর এলাকায় জাতীয় সড়কের পাশে করলা নদীর তীরে একটি সুন্দর মনোরম পরিবেশে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী গৌরীহাট। প্রতি মঙ্গলবার এখানে একটি বড় হাট বসে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তাজা শাকসবজি, মাছ-মাংস সহ অন্যান্য যাবতীয় সামগ্রী ন্যায্যমূল্যে পেতে হলে গৌড়িহাট খুবই উপযোগী। এই হাট ধনী-গরীব সকল প্রকৃতির মানুষের জন্যই উন্মুক্ত।

গৌরীহাট বারুণী মেলার জন্য জলপাইগুড়ি শহর তথা জেলায় খুবই বিখ্যাত ও জনপ্রিয়। ১৮ ই মার্চ, ২০২৩ রবিবার থেকে এখানে শুরু হয়েছে ৭দিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বারুনী মেলা। জানা যায় অতি প্রাচীনকাল থেকেই এখানে বহমান উত্তরবাহী করলা নদীর ঘাটে পবিত্র বারুণী স্নান এবং মেলার আয়োজন অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। অতিমারি করোনার জন্য ২০২০ ও ২০২১ সালে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি।

প্রতি বছর চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের দ্বাদশ তিথিতে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করলা নদীর উত্তরবাহী স্রোতে পবিত্র পুণ্য স্নানে সামিল হন বহু দূর-দূরান্ত থেকে আসা পুণ্যার্থীরা। নারী পুরুষ, ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে এই পুণ্যস্নানে অংশগ্রহণ করে। মস্তক মুন্ডন করে পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে নদীর জলে তর্পণ করেন তারা। কথিত আছে, এই বারুণী স্নান করলে নাকি পূর্বপুরুষের আত্মা শান্তি পায়। এই জলে স্নান করলে মানুষের সকল রকম পাপ-কলূষতা দূরীভূত হয়ে যায়, মন পবিত্র হয় এবং সকল রকম কামনা বাসনা পূর্ণতা পায়। নদীতে স্নান সেরে দই চিড়া খাবার রীতি এখানে প্রচলিত।

করলার জলে পুণ্য স্নান সেরে ভক্তরা এসে উপস্থিত হন মেলা প্রাঙ্গনে থাকা গঙ্গা ও কালী মন্দিরে। সেখানে পুজো দিয়ে ধূপ ও মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন সুখ শান্তি ও ইচ্ছা পূরণের আশায়। পুণ্যার্থীরা ছাড়া অনেক সাধারণ দর্শনার্থীরাও গঙ্গা ও কালী মন্দিরে মায়ের উদ্দেশ্যে ভক্তি ভরে পূজো নিবেদন করেন। মন্ডপ প্রাঙ্গনে অনেক পান্ডা উপস্থিত থাকেন। তারা পুজো দিতে আসার সকল মানুষের কপালে তিলক ও হাতে পবিত্র সুতো বেঁধে দেন। নদীর ঘাটে প্রচুর ভিক্ষাজীবী ও সাধু বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষ উপস্থিত থাকেন। প্রথা অনুযায়ী তাদের মুড়ি চিড়া ও দক্ষিণা প্রদান করেন আগত ভক্তরা।

গঙ্গা ও কালী মন্দিরের থেকে সামান্য কিছু দূরেই অবস্থিত ভারত সেবাশ্রম সংঘ অনুমোদিত পবিত্র হিন্দু মিলন মন্দির। সেখানে প্রতি বছর পূর্ণার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে খিচুড়ি প্রসাদের।

Baruni Mela and Jalpaiguri of Gaurihat

সাত দিনের এই মেলাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য মানুষের জনসমাগমে ইতিমধ্যেই জমজমাট হয়ে উঠেছে গৌরিহাটের এই এলাকা। মেলা প্রাঙ্গণে রকমারি জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। মেলায় নাগরদোলা সহ ছোটদের মনোরঞ্জনের সকল রকম আয়োজন করা হয়েছে। আর থাকে হরেক রকমের মিষ্টি ও মুখরোচক খাবারের দোকান। তবে সব থেকে বেশি বিক্রি হয় গরম গরম জিলিপি। জলপাইগুড়ি শহরবাসীর কাছে আবেদন আপনারা সপরিবারে এই মেলায় অংশগ্রহণ করে নিজেদের এই আনন্দের শরিক করে তোলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *