শাহিনুর চৌধুরী, ত্রিপুরা : অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট থাকার পরও দুই থেকে আড়াই বছর ধরে সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে না পঁচিশ বছরের এক যুবক। অসহায় মা কয়েক বার স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে CDPO অফিসে গেলেও কোনো কাজ হয় নি। নিরুপায় মা প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে আশার আলো গুনছেন কবে ছেলে আবার ভাতা পাবে বলে। ঘটনা ত্রিপুরার কৈলাসহরের সমরুরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়।

উল্লেখ্য, কৈলাসহরের চন্ডীপুর ব্লকের অধীনে সমরুরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের সাত নং ওয়ার্ড এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা পঁচিশ বছরের সুমন মজুমদারের। সুমনের বাবা বিগত দশ বছর পূর্বে মারা যান। সুমনের মা নিজে গ্রামের বিভিন্ন বাজারে গিয়ে মাছ বিক্রি করে খুব কষ্টে সংসার প্রতিপালন করেন। সুমন মজুমদাররা এতটাই গরীব যে তারা অন্তোদয় রেশন কার্ড ভুক্ত পরিবার। সুমনের মা কোনো কারণে বাজারে মাছ বিক্রি করতে না গেলে কিংবা সুমনের মা অসুস্থ হয়ে গেলে বাজারে গিয়ে মাছ বিক্রি করতে না পারলে পরিবারের সবাই অভুক্ত থাকতে হয়।

সুমন মজুমদার জন্মের পর থেকেই কথা বলতে পারে না এবং কানেও শোনে না। সুমন মজুমদার জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধী হওয়ায় কৈলাসহরের জেলা প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মীরা সুমনকে বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষা করার পর সুমনকে একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট পাওয়ার পর ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল অব্দি সুমন মজুমদার সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়েছিলেন।
২০২০ সালের করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে সুমনের প্রতিবন্ধী ভাতা বন্ধ হয়ে যায় এবং আজ অব্দি সুমন মজুমদার সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে না। কি কারণে সুমনের প্রতিবন্ধী ভাতা বন্ধ তা স্থানীয় পঞ্চায়েত কিংবা CDPO অফিসের আধিকারিকরা বলছে না বলে জানান সুমনের মা। তেরোই ডিসেম্বর মংগলবার নিজ বাড়িতেই সুমনের মা সংবাদ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে জানান যে, সুমনের প্রতিবন্ধী ভাতা বন্ধ হবার পর অনেক বার স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েতের প্রধান সহ পঞ্চায়েত সচিব এবং CDPO অফিসে গিয়ে খোঁজ খবর নিলেও কেউ কোনো ধরনের সদুত্তর দেয়নি। গরীব অসহায় সুমনের মা অনেক চেষ্টা করেও ছেলের সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা না পাওয়াতে নিরুপায় হয়ে গেছেন। সুমনের মা একটাই দাবি করছেন, অবিলম্বে ছেলের ন্যায্য সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হোক।

এ ব্যাপারে সমরুরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব আব্দুল সাত্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে উনিও স্বীকার করেন যে, সুমন মজুমদারের একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট থাকার পরও দেড় দুই বছর ধরে সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে না। পঞ্চায়েত সচিব আব্দুল সাত্তার এও জানান যে, সাম্প্রতিক কালে সুমনের ভাতার ব্যাপারে চন্ডীপুর ব্লকের বিডিও রিমি দেববর্মা পঞ্চায়েত সচিবকে আদেশ দিয়ে বলেন যে, সুমনের বাড়িতে গিয়ে সুমনের প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট, রেশন কার্ড এবং সুমন সহ সুমনের মার ছবি তোলে। সুমনের সমস্ত কিছু সার্ভে করে সেই সার্ভের রিপোর্ট চন্ডীপুর ব্লকের বিডিও রিমি দেববর্মার নিকট পাঠানোর জন্য। পঞ্চায়েত সচিব চন্ডীপুর ব্লকের বিডিও রিমি দেববর্মার এই আদেশ পাবার পর পঞ্চায়েত সচিব আব্দুল সাত্তার সার্ভে করে ইতিমধ্যেই সার্ভের রিপোর্ট চন্ডীপুর ব্লকের বিডিও রিমি দেববর্মার কাছে পাঠিয়েছেন বলেও জানান। তাহলে সুমন মজুমদার খুব শীঘ্রই সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে বলে আশা করা যায় এই প্রশ্ন করতেই পঞ্চায়েত সচিব আব্দুল সাত্তার জানান যে, এটা উনি বলতে পারবেন না কবে নাগাদ সুমন প্রতিবন্ধী ভাতা পাবে। এই প্রশ্নের উত্তর চন্ডীপুর ব্লকের বিডিও রিমি দেববর্মাই দিতে পারবেন বলেই জানান পঞ্চায়েত সচিব আব্দুল সাত্তার।

সাম্প্রতিক কালে বামপন্থী যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে চন্ডীপুর ব্লকের বিডিও রিমি দেববর্মার কাছে এই ঘটনার ব্যাপারে ডেপুটেশন দেওয়ার পর বিডিও রিমি দেববর্মা পঞ্চায়েত সচিবকে দিয়ে সার্ভে করে সার্ভের রিপোর্ট ফাইল বন্ধী হয়ে রয়েছে। আদৌ সুমন মজুমদার সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পাবে কি? কেউ এর উত্তর দিচ্ছে না। অথচ, সুমন মজুমদার প্রকৃত গরীব অসহায় নিরীহ দুঃস্থ হয়েও এমনকি অন্তোদয় রেশন কার্ড ভুক্ত হবার পরেও একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট থাকার পরও চন্ডীপুর ব্লকের বিডিও রিমি দেববর্মাদের মতো আধিকারিকরা একটু চেষ্টা করলেই সুমন মজুমদার সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পেতে পারতো। এতে করে রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে সমাজের সচেতন নাগরিকদের অভিমত।