অরুণ কুমার : এটা এমনটাই সত্যি যে এক অভাবী যুবক নতুন প্রজন্মকে পরিবেশ সচেতনতাবোধ জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে পাঁচ শতাধিক অশোক গাছের বীজ নিয়ে ধরণী শীতল করার বার্তা নিয়ে প্রখর গ্রীষ্মের মধ্যেই রিকশা চালিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নাকতলা থেকে দার্জিলিং এর উদ্যেশ্যে রওনা দিয়েছেন সত্যেন দাস।
অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা খুব বেশি করা হয়নি তবে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হোক বা রাজ্যের প্রতিটি ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের সত্যেন দাস। অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা বাধ সাধতে পারেনি ভ্রমণপিপাসু এই রিক্সাচালককে। উপার্জনের মাধ্যম একমাত্র রিক্সা নিয়েই শুধু ভ্রমণ করেন তাই নয়, পরিবেশ রক্ষার একটি বিশেষ বার্তা নিয়ে রওনা হয়েছেন তিনি।
এবার বিশ্ব উষ্ণায়নে মানুষের ভূমিকা নিয়ে দক্ষিন ২৪ পরগনার বারইপুর থেকে দুদিন আগে রওনা হয়েছেন দার্জিলিংয়ের উদ্দেশ্যে। সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, সাহিত্য পরিষদের দায়ীত্বে থাকা সুশান্ত মঠ তাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শান্তিপুপুর সংকল্পের সদস্যরা তাকে উৎসাহিত করে। সত্যেন বাবু বলেন, তার পরিবারে বাবা- মা, স্ত্রী এবং এক মেয়ে বর্তমান। বারুইপুরে থাকলেও রিকশা চালান দক্ষিণ কলকাতার নাকতলা গীতাঞ্জলির কাছে। মেয়ে এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে পড়াশোনা করবে ইংরেজি নিয়ে। পরিবেশের বিভিন্ন বার্তা নিয়ে তার এই ভ্রমণ, পরিবারের থেকেও উৎসাহ পান তিনি।
তিনি বলেন, তাঁর প্রথম যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। মাত্র আড়াই দিনে পুরি, পাঁচদিনে দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াং, ১২ দিনে হরিদ্দার, ৪০৩ দিন ধরে সারা ভারত ভ্রমণ করেন। তবে তখন ছিলেন একা এবং ভ্রমণ করেছিলেন সাইকেল চালিয়ে। বিবাহের পরে স্ত্রী এবং আড়াই বছরের মেয়েকে নিয়ে পাঁচ দিনের জন্য মধুচন্দ্রিমায় গিয়েছিলেন পুরীতে। তারপর কিছুদিন কাটতেই স্ত্রীর অনুরোধে ২০০৭ সালে দূষণ মুক্ত পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে মেয়েকে নিয়ে ছয় দিন ধরে রিক্সা চালিয়ে গিয়েছিলেন আবারো পুরীতে। গয়া, আগ্রা, আজমির, অমৃতসর, কুলু-মানালী এইরকম ২১ টি বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করেন ছয় মাস ধরে রিকশা চালিয়ে। তবে এবার তার যাত্রাপথে এক শুভাকাঙ্ক্ষী বিকাশ নস্কর তাকে একটি নতুন রিক্সা উপহার দেন। অপর আর এক শুভাকাঙ্ক্ষী কোন্ননগর নিবাসী রুমা চক্রবর্তী আনুমানিক ৫০০ টি অশোক গাছের বীজ তাকে উপহার দেন বিভিন্ন এলাকার পরিবেশপ্রেমী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। নৈহাটির উপর দিয়ে আসার সময় বহুপ্রাচীন এবং ঐতিহ্যপূর্ণ “বড়মা” পূজা কমিটি তাকে বেশ কিছু সরঞ্জাম সহ মায়ের একটি প্রতিকৃতি উপহার দেন, যা তিনি রিক্সার সিটে বসিয়ে বাড়তি মনোবল পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তবে সত্যেন বাবু বলেন, রাতে নয় দিনেই, প্রখর রৌদ্রকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই তার কষ্টকর যাত্রা, তবেই মিলবে সফলতা।
আগামী প্রজন্মকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে তাঁর এই অভিযান শুরু হয়েছে। অশোক বীজের সুফল পাবেন এই বিশ্বাস নিয়েই তিনি গত ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে রওনা দিয়েছেন শান্তিপুর থেকে। ইতিমধ্যেই তিনি মালদা রায়গঞ্জ হয়ে ইসলামপুর পৌঁছে গিয়েছেন। আগামীকাল তিনি শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। শিলিগুড়িতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাথে যোগাযোগ হয়েছে । সেখানে একদিন বিশ্রাম নিয়ে পরের দিন দার্জিলিং এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাবেন সত্যেন বাবু বলে জানা গিয়েছে।
পথে প্রশাসন থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এমনকি ব্যবসায়িক সংস্থাও পর্যন্ত তাকে সহযোগিতা করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমের দ্বারা এই আবেদন রেখেছেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং রুখতে সন্তানের মতো করেই প্রতিপালন করুন মাত্র দুটি বৃক্ষ। রুখে দাঁড়ান গাছ কাটার বিরুদ্ধে। রক্ষা করুন ধরণীকে, প্রজন্মের জন্য উপহার দিন বসবাসযোগ্য শীতল পৃথিবী।
এই আবেদন নিয়ে সত্যেন দাস এগিয়ে চলেছেন নাকতলা থেকে দার্জিলিং এর উদ্দেশ্যে। তার এই প্রচেষ্টা দেশ সমাজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে এক অনন্য নজির হয়ে থাকবে আগামী দিনে। এই উদ্দেশ্যে তিনি সফল হন জলপাইগুড়ি নিউজ এর পক্ষ থেকে তার জন্য রইল শুভেচ্ছা।