ঘরের পাশেই এক টুকরো ইউরোপ: তাবাকোশি গ্রাম ভ্রমণ কাহিনী

প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যেতে চান? শহরের কোলাহল আর ব্যস্ততা থেকে একটু দূরে নিভৃত কোন এক গ্রামে সময় কাটানোর ইচ্ছে আছে? তাহলে তাবাকোশি আপনার জন্যই। দার্জিলিং জেলার ছোট্ট এই গ্রাম যেন প্রকৃতির আঁচল জড়িয়ে এক মায়াবী জায়গা। পাহাড়, নদী আর চা বাগানের সৌন্দর্যে ভরা এই গ্রামকে বলা যেতে পারে প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গ। তাবাকোশির টুকরেই (Tukrey) নামক একটি অংশ তো ইউরোপীয়ান শৈলীর সৌন্দর্য নিয়ে যেন আরও বেশি আকর্ষণীয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন আর কী দেখবেন।

তাবাকোশি: প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য

মিরিকের কাছেই অবস্থিত তাবাকোশি গ্রাম। মিরিক থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে রংভঙ নদীর পাশেই এই ছবির মতো গ্রামটি। চারদিকে সবুজ চা বাগান, পাহাড়ি নদীর কলকল ধ্বনি আর শান্ত পরিবেশ- সব মিলিয়ে এটি প্রকৃতির সঙ্গে মিতালির এক আদর্শ জায়গা। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে রাম্মামখোলা নদী, যার ঢালে দাঁড়িয়ে আপনি উপভোগ করতে পারবেন অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

ভ্রমণের সেরা সময়

তাবাকোশি আপনি সারা বছরই ভ্রমণের জন্য বেছে নিতে পারেন। তবে মার্চ থেকে জুনের মাঝামাঝি এবং অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি সময়টা বিশেষ উপযুক্ত। শীতের কুয়াশা ভরা সকালে বা বর্ষার সবুজে মোড়া পরিবেশে তাবাকোশির সৌন্দর্য যেন দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

কীভাবে পৌঁছাবেন?

তাবাকোশি পৌঁছানো বেশ সহজ। শিলিগুড়ি বা এনজেপি (NJP) থেকে মিরিকের শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায়, যার ভাড়া জনপ্রতি ১৫০-১৭০ টাকা। মিরিক থেকে তাবাকোশি যেতে শেয়ার গাড়ি বা ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। শেয়ার গাড়িতে জনপ্রতি ভাড়া ৫০-৭০ টাকা আর পুরো গাড়ি ভাড়া নিলে খরচ হবে ৭০০-৮০০ টাকা। আপনি চাইলে শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি গাড়ি বুকও করতে পারেন। এর জন্য স্কর্পিও বা বোলেরোর ভাড়া পড়বে দৈনিক ৩০০০-৩৫০০ টাকা এবং ইনোভা ৪০০০ টাকা।

A Piece of Europe Next Door: A Tabakoshi Village Travelogue

তাবাকোশিতে কী দেখবেন?

তাবাকোশির সৌন্দর্য সবুজের সমারোহে মোড়া। কমলালেবু, এলাচ, ভুট্টা আর আদার বাগান দেখার অভিজ্ঞতা আপনাকে মুগ্ধ করবে। চা বাগানের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নানা প্রজাতির পাখির ডাকে মন ভরে উঠবে। পাহাড়ি নদী রংভঙ আর তার পাশের মন্দিরগুলো ঘুরে দেখাও ভীষণ শান্তির।

গ্রামের উপরের চা বাগান থেকে নীচের রংভঙ নদীর দৃশ্য আর মিরিক লেক, মনেস্ট্রি ও আশপাশের অন্যান্য জায়গা দেখার সুযোগ পাবেন। যদি চান, খুব সকালে গাড়ি নিয়ে টারজাম এলাকাও ঘুরে আসতে পারেন, যা এখান থেকে মাত্র ৩০ মিনিটের পথ।

কোথায় থাকবেন?

তাবাকোশিতে থাকার জন্য রয়েছে দারুণ সব হোমস্টে। কিছু জনপ্রিয় হোমস্টে ও রিসর্ট হলো:

  1. Sungava Resort: ইউরোপীয়ান স্টাইলে কাঠের তৈরি ডুপ্লেক্স কটেজ। চারপাশে চা বাগান আর পিছনে রংভঙ নদী। খরচ: ২৫০০ টাকা/জন, থাকা ও খাওয়া সহ। যোগাযোগ: 96097 23680
  2. Sunakhari Homestay: সাজানো-গোছানো হোমস্টে, যেখানে রয়েছে নরমাল, ডিলাক্স এবং স্টোন কটেজ। যোগাযোগ: 09339516798
  3. Khushi Farmhouse, Jharna Homestay, এবং আরও অন্যান্য হোমস্টেগুলোতে প্রতিদিনের ভাড়া ১২০০-১৫০০ টাকা। এদের ভাড়ার মধ্যেই থাকা-খাওয়ার খরচ অন্তর্ভুক্ত।

তাবাকোশি এক টুকরো শান্তি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বর্গরাজ্য। শহরের কোলাহল আর ব্যস্ত জীবন থেকে মুক্তি পেতে এখানে কয়েকদিন কাটিয়ে আসুন। Tukrey-এর সৌন্দর্য, পাহাড়ি নদীর ধ্বনি আর চা বাগানের সবুজে নিজেকে নতুন করে চিনে নেবেন। প্রকৃতির সঙ্গে এমন মেলবন্ধনের সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *