পানিহাটি পুরসভার নতুন পুরপ্রধান সোমনাথ দে; ঘিরে বিতর্ক ও তোপ দাগলেন অভয়ার বাবা

বিশ্বজিৎ নাথ : শুক্রবার পানিহাটি পুরসভায় নতুন পুরপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত হলেন সোমনাথ দে। তিনি পুরসভার পূর্ত দপ্তরের সিআইসি এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। বিধায়ক নির্মল ঘোষের উপস্থিতিতে হওয়া বোর্ড মিটিংয়ে ৩৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৩২ জন উপস্থিত ছিলেন। সর্বসম্মতিক্রমে সোমনাথ দে-কে বিদায়ী পুরপ্রধান মলয় রায়ের স্থলাভিষিক্ত করা হয়। তবে এই নিয়োগকে ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

নতুন পুরপ্রধানের অগ্রাধিকারে উন্নয়ন

সোমনাথ দে

নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর সোমনাথ দে বলেন, “পানিহাটির মানুষের উন্নত পরিষেবা প্রদানই আমার প্রথম লক্ষ্য। পাশাপাশি, শহরের দীর্ঘদিনের ময়লা-আবর্জনার সমস্যার সমাধান করাও আমার অন্যতম অগ্রাধিকার।”

কিন্তু কেন সরানো হলো মলয় রায়কে?

গত সোমবারই পানিহাটি পুরপ্রধানের পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেন মলয় রায়। শুক্রবার নতুন পুরপ্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে— আসল কারণ কী? প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং দাবি করেছেন, এই সিদ্ধান্ত ছিল পূর্বপরিকল্পিত।

অর্জুন সিং

তিনি বলেন, “আমি আগেই বলেছিলাম, অভয়ার দেহ দ্রুত দাহ করার জন্য যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী হয়েছিল, তাকেই পুরস্কার দেওয়া হবে। সেটাই আজ মিলে গেল।” তিনি আরও দাবি করেন, “আর জি কর কাণ্ডে সিবিআই সোমনাথ দে-কে একাধিকবার জেরা করেছে, যাতে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা পুলিশের উচ্চপদস্থ অফিসার বিনীত গোয়েলের নাম না নেন। আর এজন্যই তাঁকে পুরপ্রধানের পদ দেওয়া হয়েছে।”

নির্মল ঘোষের গুরুত্ব কমেছে, বেড়েছে পার্থ ভৌমিকের প্রভাব

অর্জুন সিং-এর দাবি, পানিহাটিতে বিধায়ক নির্মল ঘোষের গুরুত্ব আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে। উনি নিজের ঘনিষ্ঠ কাউকে পুরপ্রধান করতে চাইলেও ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ, এখানে বর্তমানে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের প্রভাব অনেকটাই বেড়েছে। অর্জুন সিং-এর অভিযোগ, “নির্মল ঘোষ উপার্জিত টাকার বড় অংশ দলীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছায় না, তাই তাকে গুরুত্ব কমিয়ে সোমনাথ দে-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

বিক্ষোভে অভয়ার পরিবার, সরব অভয়ার বাবা

Abhaya's father stirs controversy and controversy surrounding Panihati Municipality's new mayor Somnath Dey
অভয়ার বাবা

সোমনাথ দে-কে পুরপ্রধান করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভয়ার বাবা। তিনি বলেন, “আমার মেয়ের দেহ তড়িঘড়ি দাহ করা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে, আর সেই নির্দেশেই পুরপ্রধান হলেন সোমনাথ দে। এটা ‘প্রাইজ পোস্টিং’ ছাড়া কিছুই নয়।”

তিনি আরও বলেন, “শিয়ালদহ আদালতের রায়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, বিধায়ক নির্মল ঘোষ, কাউন্সিলর সোমনাথ দে এবং প্রাক্তন কাউন্সিলর সঞ্জীব মুখার্জি অভয়ার মৃত্যুর তদন্তে তথ্য-প্রমাণ লোপাটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তা সত্ত্বেও সোমনাথ দে-কে পুরপ্রধান করা হলো!”

অভয়ার বাবা অভিযোগ করেন, “আমরা যখন দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের দাবি নিয়ে থানায় অপেক্ষা করছিলাম, তখন আমাদের আড়ালে রেখে দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি, মৃত্যুর শংসাপত্রেও সোমনাথ দে-র নাম রয়েছে।”

রাজনৈতিক অস্থিরতা তুঙ্গে, তদন্তের দাবি উঠছে

সোমনাথ দে-র পুরপ্রধান হওয়া ঘিরে পানিহাটির রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিরোধীরা দাবি তুলছে, অভয়ার মৃত্যুর তদন্ত নতুন করে হওয়া উচিত। অন্যদিকে, সোমনাথ দে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর উন্নয়নই আমার মূল লক্ষ্য। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে।”

এই ঘটনা ঘিরে আগামী দিনে পানিহাটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নিয়ে এখন কৌতূহলী রাজনৈতিক মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *