নিজস্ব সংবাদদাতা : কোভিড সুরক্ষা বিধি মেনে আজ সোমবার থেকে শুরু হল এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হবে আগামী ১৬ই মার্চ। জলপাইগুড়ি জেলাতে এবছর মোট ১২৫টি পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি প্রধান পরীক্ষা কেন্দ্র। জেলায় মোট পরীক্ষার্থী ৩০ হাজার ৪৯৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৩,২৬৪ জন এবং ছাত্রী সংখ্যা ১৭,২৩৫ জন। এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় জলপাইগুড়ি জেলায় ১৯-টি কেন্দ্রকে স্পর্শকাতর হিসেবে রাখা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। জেলায় এপর্যন্ত মোট দুজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা দেবে বলে জানা গেছে। এখবর জানিয়েছেন এবছরের (২০২২) জলপাইগুড়ি জেলা মাধ্যমিক কনভেনর সুব্রত রায়। তিনি বলেন, ধুপগুড়ি হাসপাতাল ও জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে একজন করে মোট দুজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে, যেহেতু তারা অসুস্থ রয়েছে।

জলপাইগুড়ি রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা সাহা বলেন, সবার মধ্যে ভালো লাগা এবং উত্তেজনা রয়েছে। গত দুবছর থেকে আশঙ্কা আতঙ্ক কেটেছে। এবছর পড়ুয়ারা বসে পরীক্ষা দিতে পারচ্ছে স্কুলে। সামাজিক দূরত্ব এবং সরকারি নিয়ম মেনে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুটো আইসোলেশন সেন্টারের পাশাপাশি শিক বেল্ট রয়েছে আশা কর্মীরা রয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে আসা অভিভাবক বলেন , দুই বছর করোনা কাল থাকায় স্কুল বন্ধ ছিল । মেয়েরা নবম ও দশম শ্রেণীতে অনলাইন ও বাড়িতেই পড়াশোনা করেছে। আশা করি ভালই পরীক্ষা দেবে । জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক ( মাধ্যমিক) বালিকা গোলে পড়ুয়ারা সবাই বিভিন্ন সেন্টারে চলে গেছে পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

প্রথম দিনের এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা নির্বিঘ্নে শেষ হল। পড়ুয়ারা পরীক্ষা শেষে জানান আজকে বাংলা পরীক্ষা ছিল ভালো হয়েছে। প্রশ্নপত্র ভালো হয়েছে। আরেক পরীক্ষার্থী জানান জীবনের প্রথম পরীক্ষা। প্রথমে একটু ভয় ভয় ছিল। পরীক্ষার পর ভয় কেটে গেছে। যা পড়াশোনা হয়েছিল তার মধ্যেই প্রশ্নপত্র এসেছে । পরীক্ষা ভালো হয়েছে কোন অসুবিধা হয়নি। আশা করছি সব পরীক্ষাই ভালো হবে। আগামীকাল ইংরেজি পরীক্ষা।

অন্যদিকে পরীক্ষার দিনই কন্যা-সন্তানের জন্ম দিল এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সদ্যোজাত কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়ে হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে মা। আজ থেকে শুরু হওয়া পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সারা রাজ্যের প্রায় কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নজর কাড়লো সবার। পরীক্ষার দিন সকালে সন্তান প্রসব করে ওই পরীক্ষার্থী। আর সদ্যোজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা দেয় সে। ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায়। এখানকার নানারাই গ্রামের বাসিন্দা আনজারা খাতুন (১৮) হরিশ্চন্দ্রপুর কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল বিবাহিত আনজারা। দশম শ্রেণীতে সন্তান সম্ভবা হলেও মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডাক্তার তার সন্তান প্রসবের সময় দিয়েছিল ১৬ তারিখ। কিন্তু আজ প্রথম পরীক্ষার দিন সকালেই অসহ্য প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হয় সে। সকাল সাতটায় কন্যা সন্তান হয় তার। আর তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়ে পরীক্ষা দিতে বসে যায় আনজারা। আনজারার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পরীক্ষাতে ভালো ফল করার ব্যাপারেও আশাবাদী সদ্যোজাত কন্যা সন্তানের মা আনজারা।

পরীক্ষার্থী আনজারা খাতুন বলেন, আজ সকালেই আমার কন্যা সন্তান হয়েছে। কিন্তু আজকেই আমাদের পরীক্ষা শুরু। পরীক্ষা তো দিতেই হবে। হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আশাকরি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে ভবিষ্যতে কিছু একটা করতে পারবো।

হকিরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত বি-এম ও-এইচ শুভেন্দু ভক্ত বলেন, আমাদের হাসপাতালে একজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভর্তি ছিল। আজ সকালে সে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। তার পরেও সে হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দিতে চেয়েছে। এই জিনিসটা খুব ভালো লেগেছে। আমরাও সমস্ত রকম ব্যবস্থাপনা করে দিয়েছি যাতে তার কোন অসুবিধা না হয়।
একথা ঠিক আনজারা পূর্ণ বয়স্কের অনেক আগেই বিয়ে করে নিয়েছিল। যদিও সম্পূর্ণটা সে নিজের মতে করেছিল। কিন্তু তারপরেও সে যে ভাবে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার দিনই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে তা সত্যিই । মা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে পাশ থেকে দেখছে সদ্যোজাত তার খুদে কন্যা সন্তান।

পাশাপাশি মাধ্যমিকের এডমিট কার্ড না পাওয়ায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মুখে কালি লেপে দিলেন এক অভিভাবিকা। আজ থেকে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। আজ ছিল বাংলা পরীক্ষা। এদিকে মাধ্যমিকের এডমিট কার্ড না পাওয়ায় এক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে না পেরে আত্মহননের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। আর তাই পরীক্ষা শেষ হতেই ক্ষুব্ধ ছাত্র এবং তাদের অভিভাবকরা চড়াও হয় স্কুলে। অভিযোগ, শিক্ষকদের স্টাফ রুমে ঢুকে প্রধান শিক্ষক-সহ অন্যান্য শিক্ষকদের তারা মারধোর করে। তাছাড়া পুলিশের সামনেই প্রধান শিক্ষকের মুখে কালি লেপে দিলেন এক অভিভাবিকা। তবে পুলিশ কোনওক্রমে তপ্ত পরিস্থিতির সামাল দেয়।

ঘটনাটি ঘটেছে, উত্তর ২৪ পরগণার আগরপাড়া নেতাজী শিক্ষায়তন হাই স্কুলে। ওই স্কুলের ১৩ জন ছাত্র এডমিট কার্ড না পাওয়ায় সোমবার তারা পরীক্ষায় বসতে পারে নি। পরীক্ষায় বসতে না পেরে ওই স্কুলের ছাত্র রাহুল মন্ডল আত্মহণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। এরপরই প্রধান শিক্ষকের মুখে কালি লেপে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের সামনেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার ঘোষের মুখে কালি লেপে দিলেন রাহুলের মা রিঙ্কু মন্ডল। খড়দা থানার পুলিশ কোনওক্রমে তপ্ত পরিস্থিতির সামাল দেয়। যদিও পরীক্ষা শুরুর আগেই ওই ১৩ জন ছাত্র এবং তাদের অভিভাবকরা পরীক্ষা কেন্দ্র আগরপাড়া নীলগঞ্জ রোডের মহাজাতি বিদ্যাপীঠ স্কুলের গেটে বিক্ষোভ দেখায়। খড়দা থানার পুলিশ স্কুলের গেট থেকে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়। এদিন ক্ষুব্ধ রিঙ্কু দেবী বলেন, জীবনের প্রথম পরীক্ষায় ছেলে বসতে না পারেনি। এতেই নিরাশ হয়ে ছেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। রিঙ্কু দেবীর দাবি, ১৩ জন ছাত্র এডমিট কার্ড না পাওয়ার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক দায়ী। যদিও প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার ঘোষের পাল্টা দাবি, এনরোলমেন্ট ফর্মে সই না করার জন্য ওরা এডমিট কার্ড থেকে বঞ্চিত। তবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনও সুরাহা মেলেনি।