নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ : আগামী ২৭শে ফেব্রুয়ারি জলপাইগুড়ি পুরসভায় নির্বাচন। শহরবাসী নির্বাচন করবেন তাদের স্থানীয় প্রশাসক কে। বর্তমানে ভোট প্রচার তুঙ্গে। সব দলই জিততে মরিয়া। জলপাইগুড়ি পুরসভার নির্বাচনী প্রচার সংক্রান্ত কয়েকটি খবর নিয়েই এই বিশেষ প্রতিবেদন।
(১)
রাস্তা ও ড্রেনের দাবীতে ভোট বয়কটের ডাক ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের

প্রতিবারই ভোটের সময় প্রার্থীরা আশ্বাস দেন ভোটের পরে সব করে দেওয়া হবে। কিন্তু ভোট আসে, ভোট যায় কিন্তু স্থানীয় মানুষদের সমস্যার সমাধান হয় না। বছরের পর বছর সমস্যার সাথেই ঘর করছেন তারা। তাই এবার আসন্ন পুর ভোটের আগে আবার একত্রিত হয়ে নিজেদের সমস্যা সমাধানের দাবীতে ভোট বয়কটের ডাক দিলেন জলপাইগুড়ি পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কালিতলা রোডের বাসিন্দারা। রাজ্যের শাসকদল উন্নয়নের ভিত্তিতেই ভোট প্রার্থনা করে থাকে। কিন্তু তাদের এত উন্নয়নের মাঝেও কেন বঞ্চিত কালিতলা রোডের বাসিন্দারা? প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি পুরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কালিতলা রোডের মহিলারা রীতিমতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এদিন এলাকাবাসীদের একাংশ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন – ভোটের আগে রাস্তা ও ড্রেন না হলে আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে ভোট দেওয়া থেকে তারা বিরত থাকবেন। পুরসভাকে একাধিকবার এবিষয়ে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা। স্থানীয় মহিলা সুদীপ্তা পাল ও কাজল দেবনাথরা বলেন, দুই দশক পার হয়ে গেলেও তাদের কথায় কেউ কর্ণপাত করেনি। তাই তাদের দাবি না মানা হলে আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে ভোটদান থেকে বিরত থাকবেন বলে তারা জানান।
(২)
দাবী, পাল্টা দাবীতে ভোট প্রচার সরগরম

বিগত বছরগুলোতে জলপাইগুড়ি পুরসভার ৫নং ওয়ার্ডে বিশেষ কোন উন্নয়ন হয় নি দাবী বিজেপির। ৫ নং ওয়ার্ড উন্নয়নের তিলোত্তমা হয়েছে বলে পাল্টা দাবী তৃণমূল কংগ্রেসের।
জলপাইগুড়ি সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত কুমার রায় পুরভোটের প্রচারে বের হলেন বৃহস্পতিবার। এদিন জলপাইগুড়ি শহরে কয়েকটি ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ভোট প্রচার করলেন সাংসদ। কিছু ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন থেকে কাজ হচ্ছে না এমনটা অভিযোগ পেয়েছেন সাংসদ বলে জানালেন। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী মনোজ কুমার শাহকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ভোট প্রচার সারলেন সাংসদ।
সাংসদ বলেন, জলপাইগুড়ি শহরে জল নিকাশি ও পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। বেশ কিছু জায়গার বাসিন্দারা সেই সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে উন্নয়নের কাজ কিছুই হয়নি। বিধানসভা ভোটে শহরে আমরা প্রচুর ভোট পেয়েছি। এই কারণে আমরা আশাবাদী এবার পুর বোর্ড বিজেপি দখল করবে।
৫ নং ওয়ার্ডের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা সৈকত চ্যাটার্জীর পাল্টা দাবী, ৫ নং ওয়ার্ড উন্নয়নের তিলোত্তমা হয়েছে। আর পুর ভোটে জলপাইগুড়ি ৫ নং ওয়ার্ডে বিজেপি তিন নম্বরে থাকবে বলে জানান সৈকত বাবু।
(৩)
ভোট প্রচারের পাশাপাশি চলছে যোগদান পর্ব

পুরসভা ভোট প্রচারের মাঝেই যোগদান পর্ব জারী রয়েছে। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি মেহেরুন্নেসা বিদ্যালয়ের মাঠে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচার মিছিলের আগে বিভিন্ন দল থেকে প্রায় ৩২ জন নেতাকর্মী তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করলেন বলে তৃণমূল সূত্রে দাবি। এ বিষয়ে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মহুয়া গোপ বলেন, আজ ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর সমর্থনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি ৬ নম্বর ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড এ বিজেপি ও কংগ্রেস থেকে ৩২জন তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন বলে তিনি জানান। সভার শেষে একটি মিছিল ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।
(৪)
রাজনীতিতে সৌজন্যের পরিচয় দিলেন জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ

মাটিতে পরে থাকা তৃণমূল প্রার্থীর পতাকা তুলে রাখলেন বিজেপি সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত কুমার রায় । রাজনৈতিক সৌজন্যতা দেখা গেল বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি ৫নং ওয়ার্ডের দিনবাজারে । এদিন
পুরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী মনোজ শাহের হয়ে প্রচার করছিলেন জলপাইগুড়ির সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত কুমার রায়। দিনবাজার এলাকায় প্রচারে গিয়ে দেখেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সন্দীপ মাহাতোর সমর্থনে লাগানো তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা মাটিতে পরে রয়েছে। সেটা দেখেই সাংসদ তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা তুলে রাখেন।
সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত কুমার রায় বলেন,তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে বিরোধ থাকলেও মানবিকতার দিক থেকে আমরা এক।
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সন্দীপ সন্দীপ মাহাতো জানান এটাই জলপাইগুড়ি। এটাই জলপাইগুড়ির রাজনৈতিক সৌজন্য।
(৫)
পুরসভার ভোটে অশান্তি সৃষ্টি করে কি কোনো ফায়দা তোলার মতলব করছে জলপাইগুড়ি শহরের দুষ্কৃতীরা ?

শহরের বেশ কিছু ওয়ার্ডে বিভিন্ন দলের পোস্টার, ব্যানার, ফ্লেক্স নষ্ট করে দেবার খবর পাওয়া যাচ্ছে, অভিযোগের তীর দুষ্কৃতীদের দিকেই।
পুরসভার ভোটে অশান্তি সৃষ্টি করে কি কোনো ফায়দা তোলার মতলব করছে জলপাইগুড়ি শহরের দুষ্কৃতীরা ?
আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে জলপাইগুড়ির পঁচিশটি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশ কিছু ওয়ার্ড থেকে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো দলের ভোট প্রচারের জন্য লাগানো পোস্টার, ব্যানার, ফ্লেক্স কে বা কারা নষ্ট করে দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার এমনই ঘটনা ঘটে তিন নম্বর ওয়ার্ডে।
এই প্রসঙ্গে তিন নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট শুভঙ্কর দেবনাথ, পরিস্কার জানিয়ে দেন, এই এলাকায় সব কয়টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একে অপরের সুসম্পর্ক। এটা দুষ্কৃতীরাই করছে এবং বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কে জানানো হচ্ছে।
অপরদিকে তিন নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভাপতি সোমনাথ চক্রবর্তীও একই কথা বলেন। সোমনাথ বাবু জানান, এগুলোর দিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।