ভাগ্যশ্রী: ‘ম্যানে পেয়ার কিয়া’ থেকে বলিউডের আড়ালে এক নায়িকার গল্প

পিনাকী রঞ্জন পাল : ভারতের বলিউড জগতে বহু তারকা তাদের প্রতিভা দিয়ে রাতারাতি খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছেন। কিন্তু খুব কম তারকাই আছেন, যারা সেই খ্যাতিকে ধরে রাখতে পারেননি। এমনই একজন ভাগ্যশ্রী—যার জীবন যেন এক চলচ্চিত্রের মতোই নাটকীয়। সালমান খানের বিপরীতে ‘ম্যানে পেয়ার কিয়া’ দিয়ে রাতারাতি সুপারস্টার হওয়া এই অভিনেত্রী নিজেই নিজের অভিনয়জীবনের ইতি টেনেছিলেন।

১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া রাজশ্রী প্রোডাকশনের ব্লকবাস্টার ছবি ‘ম্যানে পেয়ার কিয়া’। এই ছবিতে সালমান খানের বিপরীতে একেবারে নতুন মুখ ভাগ্যশ্রীকে দেখা যায়। সহজ-সরল অভিনয়, মিষ্টি চেহারা আর চমৎকার রসায়নে দর্শকদের মন জয় করেন তিনি। ছবির বিপুল সাফল্যের পর ভাগ্যশ্রী বলিউডে যেন এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেন।

তবে ভাগ্যশ্রীর ক্যারিয়ারে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তার ব্যক্তিগত জীবন। ‘ম্যানে পেয়ার কিয়া’ শুটিংয়ের সময়ই তিনি প্রেমে পড়েন ব্যবসায়ী হিমালয় দাসানির। পরিবারের আপত্তি উপেক্ষা করে তিনি লুকিয়ে বিয়ে করেন। ভাগ্যশ্রী তখন ভাবতেন, তার স্বামীই তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন।

বিয়ের পর ভাগ্যশ্রী সিদ্ধান্ত নেন, স্বামীর সঙ্গেই সব কাজ করবেন। প্রযোজকদের শর্ত দেন, তার ছবিতে স্বামী হিমালয়কেও রাখতে হবে। কিন্তু এই শর্ত কেউই মেনে নিতে পারেননি। একের পর এক বড় ছবির প্রস্তাব তার সামনে এলেও তিনি অভিনয় না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। বলিউডে যখন তার উত্থান, তখনই নিজ সিদ্ধান্তে তিনি আলোচনার কেন্দ্র থেকে সরে দাঁড়ান।

অভিনয় থেকে সরে গিয়ে ভাগ্যশ্রী সংসার জীবনেই মন দেন। যদিও হিমালয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে একাধিকবার বিতর্ক দেখা দেয়। এক সাক্ষাৎকারে ভাগ্যশ্রী বলেন, “আমি সবকিছু নিজের ইচ্ছায় করেছি। হয়তো কিছু ভুল করেছি, কিন্তু সেই ভুলও আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।”

অনেক বছর পর ভাগ্যশ্রী তার স্বামী হিমালয়ের সঙ্গে রিয়ালিটি শো ‘স্মার্ট জোড়ি’-তে অংশ নেন। সেখানে নিজের জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। তবে ভাগ্যশ্রী আর কখনোই বলিউডে নিজের সেই উজ্জ্বল অবস্থানে ফিরে যেতে পারেননি।

ভাগ্যশ্রী সেই সময়কার বলিউডের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় নায়িকাদের একজন ছিলেন। তার অভিনয় দক্ষতা এবং সৌন্দর্য তাকে শীর্ষে নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের সিদ্ধান্ত এবং শিল্পজগৎ থেকে দূরে থাকার কারণেই তিনি নিজের উজ্জ্বল ক্যারিয়ারকে পিছনে ফেলে দেন।

আজ ভাগ্যশ্রী এক স্মৃতি, এক গল্প। ‘ম্যানে পেয়ার কিয়া’ আজও তাকে মনে করিয়ে দেয় বলিউডের সেই সময়ের স্বপ্নময় দিনগুলোর কথা। তবে তিনি তার জীবন নিয়ে কোনো আক্ষেপ রাখেন না। নিজের পথে চলার স্বাধীনতাই তার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *