জলপাইগুড়ি : টোটোর যাত্রী ভাড়া জলপাইগুড়ি শহরে বৃদ্ধি করা নিয়ে পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে কোন আলোচনা হয়নি। কাউন্সিলরদের অন্ধকারে রেখেই কয়েকজনের সিদ্ধান্তে টোটোর ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরকমই অভিযোগ তুললেন শাসকদল ও বিরোধী পুর প্রতিনিধিরা। পুরসভার টোটোর ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধীতা করছেন শহরবাসী ও টোটো যাত্রীরা। টোটো যাত্রীদের সঙ্গে কথা না বলে এক তরফাভাবে টোটোর যাত্রী ভাড়া নূন্যতম পনেরো টাকা করার প্রতিবাদ উঠছে শহরজুড়ে। জোর করে টোটোর বর্ধিত ভাড়া শহরের সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন শহরবাসী। পুরসভার এই অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন তারা। এবার শহরবাসীর প্রতিবাদের সাথে গলা মেলালেন শাসকদল ও বিরোধী পুর প্রতিনিধিরা।
উল্লেখ্য দিনকয়েক আগে জলপাইগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ পুলিশ, টোটো সংগঠনদের সঙ্গে বৈঠক করে। সেই বৈঠকে পুরসভা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে টোটোয় উঠলেই যাত্রীদের ভাড়া দিতে হবে ১৫ টাকা! আগামী ১লা সেপ্টেম্বর থেকেই বর্ধিত এই ভাড়া কার্যকর হতে চলছে বলে জানা গেছে। শহরবাসীর দাবি, রাজ্যের সব শহরে টোটোর নূন্যতম যাত্রী ভাড়া দশ টাকা রয়েছে। তাহলে জলপাইগুড়ি শহরে কেন যাত্রী ভাড়া পনেরো টাকা করা হচ্ছে। পুরসভার দাবী জিনিস পত্রের মূল্যবৃদ্ধির জন্য তারা টোটোর ভাড়া বৃদ্ধি করছেন।
টোটো ব্যবহারকারীদের দাবী, জিনিস পত্রের মূল্যবৃদ্ধি কি শুধু জলপাইগুড়ি শহরে হয়েছে। দেশের অন্যত্র হয়নি। তাহলে মূল্যবৃদ্ধির দোহাই দিয়ে শুধু জলপাইগুড়ি শহরে কেন টোটোর ভাড়া বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তাদের আরো দাবি, পাশের শহর ময়নাগুড়ি ও শিলিগুড়িতে টোটোর ন্যূনতম ভাড়া 10 টাকা, সেখানে জলপাইগুড়িতে কেন টোটোর ন্যূনতম ভাড়া 15 টাকা করা হচ্ছে। পুরবাসীরা বলছেন, ভাড়া না বাড়িয়েও টোটো চালকদের আয় বৃদ্ধি করা যেত। শহরে প্রায় 10 হাজারের উপর টোটো চলাচল করে। টোটোর দৌরাত্ব এ শহরে পায়ে হেঁটে চলাচল করে কষ্টকর হয়ে উঠেছে। পুরসভা শহরে যানজট কমাতে টোটোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে 5 হাজারের মতো করার কথা বলছে। তাহলে শহরে যদি 10 হাজারের পরিবর্তে 5 হাজার টোটো চলাচল করে তাহলে টোটো চালকদের আয় স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে। এভাবে জোর করে বর্ধিত ভাড়া চাপিয়ে দেওয়ার দরকার ছিল না।
জলপাইগুড়ি পুরসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শহরে টোটোর বর্ধিত ভাড়া ১ সেপ্টেম্বর থেকে লাঘু হবে। প্রথম দুই কিলোমিটার রাস্তা পনেরো টাকা তারপর থেকে প্রতি কিলোমিটার পাঁচ টাকা করে ভাড়া এর সাথে যুক্ত হবে। উল্লেখ্য এর আগেও একবার পনেরো টাকা নূন্যতম টোটোর যাত্রী ভাড়া করেছিল পুরসভা। সমাজ মাধ্যমে পুরসভার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ তুলে ধরতেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে পুরসভা।
এ বিষয়ে এদিন পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের শাসক দলের পুর প্রতিনিধি তপন ব্যানাজি বলেন, “পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে টোটোর যাত্রী ভাড়া বাড়ানো নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল। রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রী পেট্রল ডিজেলের বারবার দাম বৃদ্ধির পরেও রাজ্যে বাস ভাড়া বাড়ান নি, তখন এই শহরে টোটোর ভাড়া বৃদ্ধি কেন করা হল সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। আমরা কাউন্সিলর হওয়ার পরেও কিভাবে যাত্রী ভাড়া বাড়ানো হল জানতে পারলাম না এটা দুর্ভাগ্যজনক।”
অন্যদিকে এ বিষয়ে পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস পুর প্রতিনিধি অম্লান মুনসি বলেন, “পুরসভার পুরমাতা হিটলারি কায়দায় একক সিদ্ধান্তে পুর প্রতিনিধিদের না জানিয়ে টোটোর যাত্রী ভাড়া বাড়িয়েছেন। আমরা সংবাদ মাধ্যমে পরে তা জানতে পারছি। পুরমাতার এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র যে জলপাইগুড়ির মানুষকে আহত করেছে তা নয়, পুরসভার নির্বাচিত কাউন্সিলরদের পরোক্ষভাবে অপমান করেছেন এবং সর্বোপরি উনি উনার দলের নেত্রী তথা রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে অবজ্ঞা করার চেষ্টা করেছেন”।