রুটির সংগ্রহশালা (Bread Museum)

পিনাকী রঞ্জন পাল

জার্মানির (Germany) প্রাচীন শহর ফ্রীসিটি অফ উল্ম’-এ ডানিয়ুব নদীর তীরে এক পাহাড়ের ওপরে তৈরি হয়েছে অভিনব রুটির সংগ্রহশালা (Bread Museum)। ১৯৫৫ সালে সেনেটর উইলি আইজলেন এর প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর নিজের বাড়িতে। মানুষ এবং তার সভ্যতার জন্য রুটির মহত্ব প্রচারেই এই সংগ্রহশালা নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে প্রদর্শিত অধিকাংশ রুটি তাদের তৈরির নিয়মাবলি সহ রয়েছে। এরই সঙ্গে এটাও প্রদর্শিত হয়েছে যে রুটি না থাকলে কী হত !

এই সংগ্রহশালা দেখার জন্য প্রতি বছর প্রায় ২০,০০০ পর্যটক এখানে আসে। সংগ্রহশালার বাগানে একটা নীচু কুঁড়েঘর আছে। যার ছাদ লাল স্লেটের পাথর দিয়ে তৈরি। কুঁড়েঘরে ১৯০০ সালের কাছাকাছি নির্মিত ব্ল্যাক ফরেস্ট থেকে আনা একটি উনান আছে। এই উনানে এক পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করা যায়। এর পাশে জোরিকো (Zoriko) থেকে আনা হস্তালিত একটি যাঁতা রাখা আছে এটিকে বাইবেলের (The Bible) সমকালীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কুঁড়েঘরের একপাশে একটি ঘোড়ায় টানা গাড়ি দাঁড় করানো আছে। কুঁড়েঘরের বাইরের দিকে একটি লম্বা বারান্দা আছে, যার দেয়ালে মিশর থেকে আনা রুটি তৈরি করার চিত্র খোদিত রয়েছে।

সংগ্রহশালায় প্রদর্শিত সমস্ত বস্তুই রুটির সঙ্গে সম্পর্কিত। এখানে ‘ক্লাইকোটনর’ নামের একটি কাঠের তৈরি কুৎসিত মানুষের প্রতিকৃতি আছে, যার মুখ থেকে অনবরত ভুসি পড়তে থাকে। দ্বিতীয় ঘরে ধাতু এবং চিনামাটির তৈরি ‘সিপরজল’ (রুটির চ্যাপটা পাতলা টুকরো) রাখা আছে, যাদের বিভিন্ন ছাঁচে ঢেলে বিচিত্র আকার দেওয়া হয়েছে। কোনোটার ওপরে সুন্দর নারী মুখ, কোনোটায় প্রজাপতি, ফুলদানি, চরকা কাটতে ব্যস্ত স্ত্রী প্রভৃতি। এই ছাঁচে তৈরি রুটিগুলোকে বিভিন্ন সবজি দ্বারা রঙিন করা এবং সুগন্ধের জন্য মৌরি প্রভৃতি মশলা ব্যবহৃত হত।

সংগ্রহশালার তৃতীয় কামরায় প্রস্তর যুগে ব্যবহৃত কিছু যন্ত্রপাতি আছে। আর সংগ্রহশালার ফোটো গ্যালারিতে মেশিনের সাহায্যে তিনজন ব্যক্তির ১০,০০০টি রুটি এক ঘণ্টায় প্রস্তুত করার ছবি রাখা আছে। বর্তমানে এই সংগ্রহশালা থেকে প্রেরণা নিয়ে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া এবং নেদারল্যান্ডেও রুটির সংগ্রহশালা খোলা হয়েছে। এই সংগ্রহশালার শেষ কামরায় এমন মানচিত্র আছে যাতে রুটি দুষ্প্রাপ্য এমন অঞ্চলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই মানচিত্রের পাশেই এক বিশেষ পয়সা রাখা আছে যা ১৮১৬ সালে জার্মানিতে ক্ষুধার্ত লোকদের রুটি দেওয়ার জন্য চালু করা হয়েছিল। এই পয়সা দিয়ে কোনো পানীয় কেনা যেত না। সংগ্রহশালা দ্বারা আন্তর্জাতিক শিশুবর্ষ উপলক্ষ্যে একটি পুস্তক প্রকাশ করা হয়েছিল। যা থাকে প্রাপ্ত অর্থ অভুক্ত শিশুদের সাহায্যের জন্য ইউনিসেফকে (UNICEF) দেওয়া হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *