সংবাদদাতা জলপাইগুড়ি : আসন্ন পুরভোটের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী জলপাইগুড়িবাসী। এক নির্দল প্রার্থী পুলিশী বাধায় জমা দিতে পারলেন না মনোনয়ন। এমনকি সেই প্রার্থী হাইকোর্ট থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া অনুমতি নিয়ে এলেও তাঁকে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে দেওয়া হয় নি। বরাবরই সৌজন্যের রাজনীতিতে বিশ্বাসী জলপাইগুড়িবাসী এই ধরনের ঘটনা পূর্বে কখনো দেখে নি। তবে এই ঘটনায় এবার জলপাইগুড়ি পুরভোটের রিটার্নিং অফিসার সুদীপ পাল, যিনি জলপাইগুড়ির সদর মহকুমাশাসকও বটে তাঁকে আগামী সোমবার সশরীরে আদালতে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রবিকিষাণ কপুর। হাইকোর্ট বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে। কেন হাইকোর্টের নির্দেশ মানা হল না? তা জানতে চান ক্ষুব্ধ বিচারপতি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তৃণমূলের ঘোষিত পুরভোটের প্রার্থী তালিকায় প্রথমে জলপাইগুড়ির ১ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী হিসেবে নাম ছিল প্রাক্তন জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা তথা তৃণমূলের দীর্ঘদিনের কর্মী মলয় ব্যানার্জীর, পরে সেই তালিকা বাতিল করে নতুন তালিকা প্রকাশ করা হলে মলয় বাবুর নাম বাদ যায় প্রার্থী হিসেবে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মলয় ব্যানার্জী।

এরপর গত মঙ্গলবার মলয় বাবু মনোনয়ন জমা দিতে যান, কিন্তু সেদিন তাকে বারবার আটকে দেয় পুলিশ। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় শেষ হলে পুলিশ ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ মলয় বাবুর। ফলে সেদিন মনোনয়ন দাখিল করতে পারেন নি তিনি।

বুধবার ফের মলয় বাবু ওরফে শেখর বাবু তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা করতে যান। তখন আবার পুলিশী বাধার মুখে তাকে পড়তে হয়। পুলিশের সাথে তার ও আইনজীবীদের ধস্তাধস্তিও হয়। পুলিশ মলয় বাবুকে কোভিড বিধি ভঙ্গ ও সরকারি কাজ বিঘ্নিত করার অভিযোগে জোর করে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে জলপাইগুড়ি শহর ঘুরিয়ে শহর সংলগ্ন ৭৩ মোড়ের কাছে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ।

অন্যদিকে এই ঘটনার পর মলয় বাবুর আইনজীবীরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট সেদিন দুপুরে জরুরি ভিত্তিতে মামলার শুনানির ব্যবস্থা করে বিচারপতি রবিকিষাণ কপুরের সিঙ্গেল বেঞ্চে। মামলার শুনানি শেষে আবেদনকারী যাতে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন প্রশাসনকে তার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি রবিকিষাণ কপুর। পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তায় প্রার্থী সহ তিনজনকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের সেই নির্দেশ নিয়ে আইনজীবীদের সাথে বুধবার দুপুর সওয়া দুটো নাগাদ মলয় ব্যানার্জী মনোনয়ন জমা দিতে গেলে ফের তাঁকে আটকে দেয় পুলিশ। প্রায় পঁয়ত্রিশ মিনিট দফায় দফায় আটকে রাখার পর মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর মলয় বাবুদের ছেড়ে দেয় পুলিশ বলে অভিযোগ। আর সেদিনই ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। ফলে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন নি নির্দল প্রার্থী মলয় ব্যানার্জী।
এরপর বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা মলয় ব্যানার্জী অভিযোগ করেন, জলপাইগুড়ির জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি সৈকত চ্যাটার্জির নির্দেশে পুলিশ প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং অফিসারের বদান্যতায় তিনি মনোনয়নপত্র জমা করতে পারেন নি।
পুরো বিষয়টি জানিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার একবার ফের হাইকোর্টে আবেদন করেন মলয় ব্যানার্জীর আইনজীবীরা। শুক্রবার মামলার শুনানিতে বিচারপতি রবিকিষাণ কপুর বলেন, আদালতের নির্দেশ অবমাননা করার এমন দুঃসাহস হয় কী করে ? পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কী চলছে এসব ? সরকার পক্ষের আইনজীবীকে বিচারপতি জানান, ঘটনাটিকে আদালত মোটেই হালকা ভাবে নিচ্ছে না। কেন, কোন পরিস্থিতিতে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা গেল না তা পুর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারকে সশরীরে আদালতে এসে জানাবার নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট। উল্লেখ্য, জলপাইগুড়ি পুর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার হলেন সদর মহকুমা শাসক সুদীপ পাল।
