সেন্ট্রাল উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও জলপাইগুড়ি

লেখক পঙ্কজ সেন

জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এর পথ চলা শুরু হয় ১৯৫৪ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি পার্শ্ববর্তী সোনাউল্লা বিদ্যালয়ের প্রাতঃ বিভাগে সকাল ছয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত মাত্র চারজন শিক্ষিকা এবং ৮২ জন ছাত্রীকে নিয়ে।

মুন্সী মহম্মদ সোনাউল্লা ছেলেদের বিদ্যালয় তৈরির জন্য এক সময় প্রচুর জমি দান করেছিলেন। সোনাউল্লা বিদ্যালয়ের উল্টো দিকে রাস্তার এ পাশে ০.৯২৫ একর জায়গা অব্যবহৃত ছিল। সেখানেই এই বালিকা বিদ্যালয় তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বিদ্যালয়টির প্রথম সভাপতি এবং সম্পাদক ছিলেন সত্যেন্দ্র প্রসাদ রায় এবং রুক্মিণী কান্ত ভৌমিক। রুক্মিণীবাবু আমৃত্যু সেই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন (১৯৮৫ সালের ৩১শে মে)। রুক্মিণী বাবুর মৃত্যুর পর পরিমল ঘোষ দীর্ঘ সময় বিদ্যালয়ের পরবর্তী সম্পাদক নিযুক্ত হন।

সোনাউল্লা বিদ্যালয়ের পরিচালক সমিতিতে রুক্মিণীবাবু বহুবার পদাধিকারী ছিলেন। সেই সাথে ধীরাজ মোহন সেন, তরণী মোহন চক্রবর্তী, ডক্টর চারুচন্দ্র সান্যাল প্রমুখ শহরের বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রচেষ্টায় এই বালিকা বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে জলপাইগুড়ি শহরের প্রাণপুরুষ সত্যেন্দ্র প্রসাদ রায় বা এস.পি রায় এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় (রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন ১৯৫২-৭০ সাল পর্যন্ত) এই বিদ্যালয়ের জন্য তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট থেকে প্রভূত আর্থিক সহায়তা আদায় করেছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫৫ সালে বাংলার শরণার্থীদের বিদ্যালয় তৈরীর জন্য ৬৫ হাজার টাকা দেন।

এই ক্ষেত্রে তৎকালীন ভারতের কেন্দ্রীয় উদ্বাস্তু পুনর্বাসন মন্ত্রী মেহের চাঁদ খান্নার অবদান অনস্বীকার্য। সেই টাকায় বিদ্যালয়ের ১১টি কক্ষ তৈরি হয়। যা ১৯৫৬-৫৭ সালে উদঘাটন করেন তৎকালীন ডি.আই ধীরেন্দ্র মোহন সেন। পরবর্তীতে জলপাইগুড়ির বাসিন্দাদের প্রদেয় অর্থে দোতলায় আরও দশটি ঘর তৈরি হয়। ২০০৫ সালে জিন্দাল ট্রাস্ট থেকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। সেই টাকা থেকে বিদ্যালয়টির বিজ্ঞান ভবন তৈরি করা হয়। বিদ্যালয়ের পরিচালক কমিটিতে এক দীর্ঘ সময় সভাপতি ছিলেন অখিল বন্ধু সরকার এবং পরবর্তীতে দেবপ্রসাদ রায়।

২০০৯ সাল থেকে বিদ্যালয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষার শাখা শুরু হয়েছে। এখানে কারিগরি শিক্ষা এবং গৃহ বিজ্ঞান উভয়ই আছে। মাধ্যমিক পাশ করে এই শাখায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ আছে। জরির কাজ এবং এমব্রয়ডারী শাখাও এই বিদ্যালয় আছে। সাবেক আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি এমব্রয়ডারি মেশিন পেয়েছিল। বিদ্যালয়টির প্রথম প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন গায়ত্রী ভট্টাচার্য। ১৯৫৮ সালে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিযুক্ত হন অপর্ণা গুহ। তিনি ১৯৯৪ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিলেন। ১৯৫৯ সালে বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মর্যাদা পায়। ১৯৬৫ সালে এখানে পুরানো উচ্চমাধ্যমিক চালু হয়। ১৯৮৫ সালে বিদ্যালয়ে উচ্চমাধ্যমিক পড়ানো শুরু হয়। এই বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্রীরা যারা প্রতিষ্ঠিত তারা হল : কস্তুরী সেনগুপ্ত, পূর্বে তিনি দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক ছিলেন। কস্তুরী সেনগুপ্ত ১৯৮৭ সালে মাধ্যমিকে জলপাইগুড়ি জেলায় প্রথম হন। জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর জয়ন্তী পাল এবং বর্তমান জলপাইগুড়ি পৌরসভার পৌর প্রশাসক পাপিয়া পাল এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী। এই বিদ্যালয় থেকে সর্ব প্রথম স্টার মার্কস পায় ১৯৮০ সালের মাধ্যমিক ব্যাচের ছাত্রী অপর্ণা রায়। ২০১৮ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের ছাত্রী নিধী চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে।


(বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্য)

ছবি লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *