মর্মান্তিক : নয়া পাড়ায় ট্রাকের ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু, উত্তেজনায় ফুঁসছে এলাকা

জলপাইগুড়ি : আরও একটি মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনা! নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আর সেই গাফিলতির বলি হলো মাত্র চার বছরের শিশু রবি রাউত। শনিবার সকালে জলপাইগুড়ির ৭৩ মোড় সংলগ্ন নয়া পাড়া এলাকায় সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় শিশুটির। এই ঘটনার পর এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। ক্ষুব্ধ জনতা জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নয়া পাড়ার একটি প্রাথমিক স্কুলের সামনে দিয়ে হাঁটছিল রবি, হঠাৎই দ্রুতগতির এক সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক তাকে ধাক্কা মেরে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় সে। স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকটিকে আটক করে এবং পুলিশের কাছে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।

এর আগেও এই এলাকায় একাধিক পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, হিমঘরের সামনে আলু বোঝাই লরিগুলোর বিশৃঙ্খল অবস্থানের কারণেই রাস্তায় যানজট ও দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। শনিবারও হিমঘরে আলু রাখার জন্য প্রচুর গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল, যার জেরে ট্রাফিক জ্যাম হয় এবং তার মধ্যেই ঘটে যায় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা।

নয়া পাড়া জুনিয়র স্কুলের শিক্ষক অভিজিৎ দাসগুপ্ত আক্ষেপের সুরে বলেন, “প্রতিদিন আমাদের স্কুলের শিশুরা এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু এখানে কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। আজকে একটি নিষ্পাপ প্রাণ চলে গেল। কতবার বলেছি স্কুলের সামনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কিন্তু কেউ শোনে না!”

স্থানীয় বাসিন্দারাও ক্ষোভ উগড়ে দেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এক প্রতিবাদী বলেন, “এর আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছে এখানে। আমরা বারবার বলেছি, ট্রাক ও লরির জন্য আলাদা পার্কিং ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু প্রশাসন শুধু আশ্বাসই দিয়েছে, কাজের কাজ কিছু হয়নি। আজকের মৃত্যুর জন্য পুরোপুরি প্রশাসন দায়ী।”

এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলও সরব হয়েছে। সিপিআইএম জেলা সম্পাদক পীযুষ মিশ্র জানান,
“আমরা ১০ তারিখেই জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিলাম, এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই আজ একটি শিশুর প্রাণ গেল। আমরা চাই, অবিলম্বে এখানে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি হোক, নয়তো বড় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।”

ঘটনার খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “আমরা তদন্ত করছি। ট্রাকটিকে আটক করা হয়েছে, চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পাশাপাশি, এলাকাবাসীর দাবি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই দুর্ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, সড়ক নিরাপত্তার অভাব এবং প্রশাসনিক উদাসীনতা কীভাবে প্রাণ কেড়ে নিতে পারে। স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কি এবার কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে, নাকি আরও একটি আশ্বাসের বৃত্তেই আটকে থাকবে এই ঘটনা? এখন সেটাই দেখার।

ভিডিওতে শুনুন বক্তব্যগুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *