এই রাজ্যে আসছে, বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’

সিতরাং, আম্ফান, ফণী, ইয়াসের মতো আগামী ২২শে মার্চ তাণ্ডব করতে এই রাজ্যে আসছে ঘূর্ণিঝড় “অশনি”। এনিয়েই লিখেছেন অরুনকুমার।

বিশেষ প্রতিবেদন : রোদের দাপটে নাজেহাল রাজ্যবাসী। এরই মধ্যে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’। সিতরাং, আম্ফান, ফণী, ইয়াসের মতো আগামী ২২শে মার্চ তাণ্ডব করতে এই রাজ্যে আসছে ঘূর্ণিঝড় “অশনি”।

পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক দূরে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়, তাই তেমন কিছু প্রভাব পড়বে না। তবে ২২ তারিখ রাজ্যে আংশিক মেঘলা থাকার সম্ভাবনা আছে।


তাপমাত্রা বাড়ার কারণে, গ্রীষ্মের দাবদাহ থাকবে। বেলা বাড়লে বাড়বে তাপমাত্রা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের খবর অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে। শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং জেলায় হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। বাকি রাজ্যের সমস্ত জেলায় শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে। রাতের তাপমাত্রার কোনও পরিবর্তন হবে না। রবিবার সকালে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় এটি শক্তি বাড়িয়ে ২০ তারিখ সকালে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। আগামী সোমবার এটি আরও উত্তরের দিকে শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। তারপর উত্তর-পূর্ব দিকে গিয়ে মায়ানমার ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের ওপর ২২ তারিখ নাগাদ পৌঁছবে বলে অনুমান মৌসম বিভাগের।

আসছে ঘূর্ণিঝড় অশনি, কতটা বিধ্বংসী? আগামী সপ্তাহেই ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা, বাংলায় কী প্রভাব? চলুন জেনে নেওয়া যাক অতীতের কথা থেকে।

এদিকে, ভারতীয় মৌসম ভবনের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৯১ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মার্চে বঙ্গোসাগরে ছ’টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। আরব সাগরে সেরকম ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ছিল দুই। ১৯০৭ সালে শ্রীলঙ্কার উপকূল পার করেছিল একটি ঘূর্ণিঝড়। তারপর ১৯২৬ সালে আরও একটি ঘূর্ণিঝড় তামিলনাড়ুর উপকূল পার করেছিল। এবার ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ আন্দামান উপকূল পার করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন।

জানা গিয়েছে, দীর্ঘ ১২৯ বছরের ইতিহাসে মার্চে বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে আটটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। ছ’টি সমুদ্রেই বিলীন হযে গিয়েছে। দুটি ঘূর্ণিঝড় উপকূল পার করেছে। যা শেষবার হয়েছিল ১৯২৬ সালে। অর্থাৎ আন্দামান উপকূল পার করলে ৯৬ বছর পর আবারও সেই কাজটা করতে চলেছে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’। এবারের “অশনি” ঝড়ের নামকরণ করেছে শ্রীলঙ্কা।

সাধারণত এপ্রিল এবং মে’তে উত্তর ভারতীয় মহাসাগরের উপর ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। নাম গোপন রাখার শর্তে ভারতীয় মৌসম ভবনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘জলবায়ুগতভাবে ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম নয় মার্চ। সেটা হল এপ্রিল এবং মে। মার্চে সাগর ঠান্ডা থাকে।’ মার্চে সূর্যের বিকিরণ বেশি হয় না বলে জানিয়েছেন ভারতীয় মৌসম ভবনের ওই আধিকারিক।

ভারতীয় মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী জানা গিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর যে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, তা রবিবার ২০ মার্চ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। পরদিন অর্থাৎ সোমবার, ২১ মার্চ তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন। রবিবার পর্যন্ত আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উপকূল বরাবর উত্তর দিকে যেতে পারে সেই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়। তারপর উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার সকালের দিকে বাংলাদেশ এবং উত্তর মায়ানমারের কাছে পৌঁছাতে পারে।

ব্রিটেনের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহবিদ অক্ষয় দেওরাস টুইটারে বলেছেন, ‘যদি পূর্বাভাস মিলে যায়, তাহলে প্রথম ঘূর্ণিঝড় হিসেবে মার্চে আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে আছড়ে পড়বে অশনি। কমপক্ষে শেষ ১৩২ বছরে এই এলাকায় একটিও ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় মার্চে আছড়ে পড়েনি।’

যদিও পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ রাজ্যের উপকূল এলাকায় যাবতীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখন দেখার বিষয় আগামী ২৪ ঘণ্টায় এই ঘূর্ণিঝড় কি আকার ধারণ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *