পিনাকীরঞ্জন পাল
কম্পিউটার মানুষের এক অবিস্মরণীয় আবিষ্কার। এর বর্তমান ব্যাপ্তি ও ভবিষ্যতের প্রসারতার কথা চিন্তা করলে আমাদের সেই রূপকথার আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের কথা মনে পড়ে যায়। অর্থাৎ এই মন্ত্রটিকে যদি যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা ও সংগঠিত করা যায় তা হলে দেখা যাবে এর কর্মদক্ষতা ওই আলাদিনের জিনের অসীম ক্ষমতার সঙ্গে তুলনীয়।
কম্পিউটারের আবিষ্কর্তা চালর্স ব্যাবেজ এই যন্ত্রটির ভবিষ্যৎ কার্যক্ষমতা সম্পর্কে এতই আস্থাশীল ছিলেন যে, তিনি একবার বলেছিলেন, তিনি যে কোন দিন মরতে রাজী আছেন যদি কেউ পাঁচশো বছর পর তাঁকে মাত্র তিনদিনের জন্য পৃথিবীতে আসার ব্যবস্থা করে দেন। উদ্দেশ্য এই কয়েক শ’ বছর পর কম্পিউটারের অগ্রগতি দেখা। ব্যাবেজ তখন ভাবতেও পারেননি, তাঁর মৃত্যুর মাত্র একশ’ বছরের মধ্যে কম্পিউটার পৃথিবীতে প্রযুক্তির বিপ্লব আনবে। যাইহোক আজ কম্পিউটার সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর দেওয়া হল।
প্রশ্ন (১) : কম্পিউটারের আদিপুরুষ কাকে বলা হয়?
উত্তর : কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক চার্লস ব্যাবজ-এর ১৮৯০ সালে উদ্ভাবিত যন্ত্রগণককে।
প্রশ্ন (২) : পৃথিবীর প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার কোনটি ?
উত্তর: অধ্যাপক হাওয়ার্ড আইকেন পরিকল্পিত ‘হাভার্ড মাক এক’ (১৯৩৪)।
প্রশ্ন (৩) : পৃথিবীর প্রথম সার্বিক ইলেকট্রনিক্স ডিজিটাল কম্পিউটারের নাম কি?
উত্তর : পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জে পি ইকার্ট এবং জে ম্যাকলি নির্মিত ‘হনিয়্যাক’ (১৯৪৬ খ্রিঃ)।
প্রশ্ন (৪) : হনিয়্যাক এর পুরো নাম কি?
উত্তর : ইলেকট্রনিক নিউমেরিক্যাল ইনটিগ্রেটার অ্যান্ড ক্যালকুলেটর।
প্রশ্ন (৫) : হনিয়্যাক এর আকার কি রকম?
উত্তর : এতে ছিল ১৮,০০০ ভ্যাকুয়াম টিউব, ৭০,০০০ রেজিস্ট্যান্স, ১০,০০০ ক্যাপাসিটর এবং ৬,০০০ সুইচ। এটি দৈর্ঘ্যে ছিল ১০০ ফুট উচ্চতায় ১০ ফুট এবং প্রস্থে ৩ ফুট এবং ওজন ছিল ৩০ টন।
প্রশ্ন (৬) : বাইনারি সিস্টেম কাকে বলে?
উত্তর : সাধারণত আমরা ০, ১, ২, ৩…. ইত্যাদি ৯ পর্যন্ত মোট দশটি অঙ্ক দিয়ে সমস্ত সংখ্যা প্রকাশ করে থাকি। একে দশমিক ব্যবস্থা বলা হয়। আবার সমস্ত সংখ্যাকে মাত্র দু’টি অঙ্ক ০ এবং ১ দিয়েও প্রকাশ করা সম্ভব। একে বলে বাইনারি সিস্টেম বা দ্বিরাশি ব্যবস্থা। আজ সমস্ত কম্পিউটারে এই বিরাশি ব্যবস্থা ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রশ্ন (৭) : বাইনারি সিস্টেমে নির্মিত বিশ্বের প্রথম কম্পিউটারের নাম কি?
উত্তর : এডভ্যাক (Electronic Discrete Variable Automatic Computer)।
প্রশ্ন (৮) : এডভ্যাক নির্মাণ করেন কে?
উত্তর : ১৯৪৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এম ভি উইলকিন্স এটি নির্মাণ করেন।
প্রশ্ন (৯) : কম্পিউটারের প্রথম চারটি প্রজন্মের মূল উপাদান কি কি?
উত্তর : যথাক্রমে ভ্যাকুয়াম টিউব প্রযুক্তি (প্রথম প্রজন্ম, ১৯৪২-৫৫), ট্রানজিস্টার ও প্রিন্টেড সার্কিট প্রযুক্তি (দ্বিতীয় প্রজন্ম,১৯৫৫-৬৪), ইনটিগ্রেটেড সার্কিট ‘প্রযুক্তি (তৃতীয় প্রজন্ম, ১৯৬৪-৭৫), ভেরি লার্জস্কেল ইনটিগ্রেটেড প্রযুক্তি (চতুর্থ প্রজন্ম ১৯৭৫-) ।
প্রশ্ন (১০) : কম্পিউটারের পঞ্চম প্রজন্মের মূল উপাদান কি?
উত্তর: কৃত্রিম মগজ বা আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স।
প্রশ্ন (১১) : মাইক্রোপ্রসেসর কোন প্রজন্মের আবিষ্কার?
উত্তর : চতুর্থ প্রজন্মের।
প্রশ্ন (১২) : কম্পিউটার কয় ধরনের ও কি কি?
উত্তর : তিন ধরনের। অ্যানালগ, ডিজিটাল এবং হাইব্রিড।
প্রশ্ন (১৩) : আকারের দিক থেকে কম্পিউটার কয় ধরনের এবং কি কি?
উত্তর : চার ধরনের। মাইক্রো, মিনি, মেইনফ্রেমস এবং সুপার কম্পিউটার।
প্রশ্ন (১৪) : বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক কম্পিউটার কে তৈরি করেন?
উত্তর: ১৯৫১ সালে এম ভি উইলকিন্স তৈরি করেন প্রথম বাণিজ্যিক কম্পিউটার ‘লায়ন্স ইলেকট্রনিক অফিস’ (লিও)।
প্রশ্ন (১৪) : কম্পিউটারের উপাদানগুলিকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি?
উত্তর : দু’ভাগে। হার্ডওয়্যার সফটওয়্যার।
প্রশ্ন (১৫) : পি সি কি?
উত্তর : মাইক্রো কম্পিউটারগুলিকে প্রায়শ পার্সোনাল কম্পিউটার বা পি সি বলা হয়। কারণ, এগুলি মূলত অফিস ও বাড়িতে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তৈরি।
প্রশ্ন (১৬) : পি সি’র জনক কে?
উত্তর : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার ন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস্।
প্রশ্ন (১৭) : ‘সফটওয়্যার সম্রাট’ বলে পরিচিত কে?
উত্তর : মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস।
প্রশ্ন (১৮) : বিল গেটস-এর পুরো নাম কি?
উত্তর : উইলিয়াম হেনরি গেটস।
প্রশ্ন (১৯) : সফটওয়্যার সম্রাট বিল গেটস-এর জন্ম হয় কবে?
উত্তর: ১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর।
প্রশ্ন (২০) : বিল গেটস কত সালে আই বি এম এর কাজ থেকে পি সি ডস-এর স্বত্ব কিনে নেন?
উত্তর: ১৯৮০ সালে। পরের বছরই বাজারে এল- এম এস ডস ১.০।
প্রশ্ন (২১) : উইন্ডোজ ৯৫ কবে আত্মপ্রকাশ করে?
উত্তর: ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট।
প্রশ্ন (২২) : উইন্ডোজ-এর সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ কবে হয়েছিল?
উত্তর: ১৯৮৩ সালে।
প্রশ্ন (২৩) : ডস, ডি-বেস, ওয়ার্ডস্টার, লোটাস, উইন্ডোজ এগুলি কি?
উত্তর : বিভিন্ন সফটওয়্যার।
প্রশ্ন (২৪) : সফটওয়্যার কাকে বলে?
উত্তর: কতকগুলি ইন্সট্রাকশন পরপর এমনভাবে সাজান যা কিনা কম্পিউটারকে বুঝতে সাহায্য করে কখন, কিভাবে, কি করতে হবে।
প্রশ্ন (২৫) : অপারেটিং সিস্টেম কাকে বলে?
উত্তর: বিশেষ ধরনের এক সফটওয়্যার যা কম্পিউটারের যাবতীয় কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন—ডস, ইউনিক্স, উইন্ডোজ প্রভৃতি।
প্রশ্ন (২৬) : কোন্ অপারেটিং সিস্টেমকে আদর করে বলা হয় ‘Plug and play?
উত্তর : উইন্ডোজ ‘৯৫-কে।
প্রশ্ন (২৭) : বুটিং কাকে বলে?
উত্তর : মাইক্রো কম্পিউটারে বিদ্যুৎ সরবরাহের সুইচ টেপার সময় প্রথমে কার্যনিবাহক যন্ত্রাবলী প্রয়োগ করতে হয়। এই পদ্ধতিকে বলে বুটিং।
প্রশ্ন (২৮) : কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?
উত্তর : দুটো বা তার বেশি কম্পিউটার যখন কোন মাধ্যমের সাহায্যে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে তখন তাকে বলে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক।
প্রশ্ন (২৯) : কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত ধরনের হয়?
উত্তর : দুই ধরনের। লোকাল এরিয়া এবং ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক।
প্রশ্ন (৩০) : ইন্টারনেট কি?
উত্তর : এটি হল নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ ইন্টারনেট হল মাকড়সার জালের মত ছড়ান এক বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার যোগাযোগ ব্যবস্থা।
প্রশ্ন (৩১) : ইন্টারনেট ব্যবস্থা কবে শুরু হয়?
উত্তর : ১৯৬৯ সালে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর এই ব্যবস্থা প্রথম চালু করে।
প্রশ্ন (৩২) : ইন্টারনেটকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয় কবে?
উত্তর : ১৯৯৩ সাল থেকে।
প্রশ্ন (৩৩) : ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে কি বলে?
উত্তর : ক্লায়েন্ট।
প্রশ্ন (৩৪) : ‘ব্রাউজার’ কি?
উত্তর : একটি সফটওয়্যার যা বিশেষ একটি ওয়েব খুঁজে পেতে এবং সেখানে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন (৩৫) : ‘কমান্ড’ কি?
উত্তর : এমন কিছু শব্দ যেগুলি কম্পিউটার বুঝতে পারে। যেগুলি টাইপ করলে কম্পিউটার কাজ করবে। যেমন—ডি আই আর, সি এল এস প্রভৃতি (এগুলি ডস কমান্ড)।
প্রশ্ন (৩৬) : ‘ডস’-এর সম্পূর্ণ নাম কি?
উত্তর : ডিস্ক অপারেটিং সিস্টেম।
প্রশ্ন (৩৭) : ডস ক’টি ফাইল নিয়ে গঠিত ও কি কি?
উত্তর : তিনটি। আই ও সিস, এম এস ডস.সিস এবং কমান্ড, কম।