তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদে ক্রমশই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে জলপাইগুড়িতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ৬ মে ২০২২ : তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদে ক্রমশই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে জলপাইগুড়িতে। বারোপাটিয়া নতুন বস গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা কৃষ্ণ দাসের অনুগামী দাবি করে আইএনটিটিইউসির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি রাজেশ লাকরা ঘনিষ্ঠ তৃণমূল শ্রমিক নেতাকে পরিবার সহ খতম করার হুমকি। অপরাধীকে গ্রেফতারের জন্য ১২ ঘন্টা সময় দিল  পুলিশকে রাজেশ লাকরা। অভিযোগ উড়িয়ে মানহানির মামলা করার কথা বললেন কৃষ্ণ দাস।

থানায় স্মারকলিপি প্রদান

বেশ কিছু সময় থেকেই জলপাইগুড়ি তৃণমূল কংগ্রেসের দুই প্রভাবশালী নেতার মধ্যে ক্রমশই বাড়ছিল উত্তাপ। একদিকে তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায় অপরদিকে তৃণমূল দলের এসটি/ এসসি/ ওবিসি  সেলের জেলা সভাপতি তথা বারোপাটিয়া নতুন বস গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কৃষ্ণ দাসের মধ্যে। এই উত্তাপে আরো ইন্ধন যোগায় সম্প্রতি রাণীনগর শিল্প তালুকের একটি সমাবেশ থেকে কৃষ্ণ দাস সরাসরি বিধায়কের ঘরে বধূ নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করে নেতা বদলের দাবিকে ঘিরে।

থানায় ঢুকছেন রাজেশ লাকরা সহ অন্যান্যরা

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের জলপাইগুড়ি টাউন ব্লক সভাপতি এবং ই রিক্সা সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্নব্রত মিত্র ওরফে ডাব্বুকে এক কৃষ্ণ দাস অনুগামী প্রথমে ফোনে পরে বাড়িতে গিয়ে চরাও হয় কয়েকজন দুষ্কৃতী বলে অভিযোগ। পূর্নব্রত বাবুকে পরিবার সহ মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন পূর্নব্রত মিত্র। ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিবাদে সামিল হলেন টোটো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত টোটো চালকরা। এর প্রতিবাদে শুক্রবার মিছিল করে কোতোয়ালি থানায় হাজির হলেন জলপাইগুড়ি জেলা আইএনটিটিইউসি সভাপতি রাজেশ লাকরা। পাশাপাশি এই মর্মে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হল থানায়।

পূর্নব্রত মিত্র

পূর্নব্রত মিত্র বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে এক যুবক দিলীপ সরকার আমাকে ফোন করে প্রথমেই বলে শুক্রবার থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের ই রিক্সা ইউনিয়নটি তার হাতে তুলে দিতে হবে। এরপর আমি তাকে প্রশ্ন করি আপনি তৃণমূলের কোন দায়িত্বে আছেন, তখন দিলীপ সরকার বলে, কোনো দায়িত্বে নেই, কৃষ্ণ দাস বলেছে তাই শুক্রবার থেকে আইএনটিটিইউসির ই – রিকশা ইউনিয়ন আমার হাতে তুলে দিতে হবে। এছাড়াও সে বলে, বিগত সময়ে মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে যে বর্তমানে জেলে রয়েছে সে ছাড়া পেলেই আমার গোটা পরিবারকে শেষ করে দেওয়া হবে।

রাজেশ লাকরা

অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক ইউনিয়নের টাউন ব্লক সভাপতির ওপর এই হুমকির কথা শুনেই জলপাইগুড়ি ছুটে আসেন তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সভাপতি রাজেশ লাকরা। শুক্রবার রীতিমতো মিছিল করে কোতয়ালি থানার সামনে দাঁড়িয়ে সংগঠনের নেতার ওপর হামলার হুমকি প্রদানকারি সহ এর পেছনে থাকা তৃণমূল নেতা কৃষ্ণ দাসকে  ১২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে এক প্রকার সময় বেঁধে দেন।

বক্তব্য রাখছেন রাজেশ লাকরা

এই ঘটনা প্রসঙ্গে ডুয়ার্স সহ সমগ্র জেলার প্রভাবশালী শ্রমিক নেতা রাজেশ লাকরা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে তৃণমূলের এক নেতা এই জেলা সহ শহরে মাদক কারবারিদের মদত দিয়ে আসছে। এছাড়াও সেই নেতা কৃষ্ণ দাস কিছুদিন আগে এক সভা মঞ্চ থেকে প্রকাশ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির চেয়ারম্যান খগেশ্বর রায়কে অপমান করেছে এবং বৃহস্পতিবার রাতে আমার সংগঠনের টাউন ব্লক সভাপতিকে পরিবার সহ মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে ওই কৃষ্ণ দাস এর অনুগামী পরিচয় দিয়ে। এর একটা বিহিত করতেই হবে। তাই আমি পুলিশকে ১২ ঘন্টা সময় দিয়েছি অপরাধীদের গ্রেফতার করার জন্য।

কৃষ্ণ দাস

অপরদিকে যার বিরুদ্ধে এত অভিযোগের তীর ছুড়লেন রাজেশ লাকরা। সেই কৃষ্ণ দাস এক ভিডিও বার্তায় পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দেন, আমার নাম ব্যবহার করে কেউ যদি অন্যায় করে, তবে তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু না জেনে আমার নামে যে ভাষায় কথা বলেছেন আইএনটিটিইউসি জেলা সভাপতি রাজেশ লাকরা, আমি তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। মানহানির  মামলার পাশপাশি জেলা ও রাজ্যের নেতৃত্বকেও বিষয়টি জানাবো।

শ্যাম প্রসাদ

জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের দুই নেতার বিরোধ প্রসঙ্গে জেলা বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শ্যাম প্রসাদ বলেন, যা ঘটেছে সেটাই স্বাভাবিক, আর বেশিদিন এই তৃণমূল দলটিই থাকবে না। তৃণমূলই মারবে, তৃণমূলই মরবে, আর কিছু তৃণমূল জেলে পচবে। দিদিমণি একা সিংহাসনে বসে রাজত্ব করবেন।

দেখুন ভিডিওতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *