পিনাকী রঞ্জন পাল : ২০২৪ সালের সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ঝাড়খণ্ডের অলরাউন্ডার অনুকূল রায় আবারও প্রমাণ করলেন কেন তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের একটি উজ্জ্বল প্রতিভা। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে তার ৪৪ বলে ৯১ রানের ইনিংস শুধু তার দলকেই জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যায়নি, বরং তাকে একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আইপিএল তারকা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ঝাড়খণ্ডের ইনিংস শুরু হয় ধাক্কা দিয়ে। ২৩ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ব্যাটিং অর্ডারের পঞ্চম স্থানে নামেন অনুকূল রায়। এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অনেক ব্যাটার যেখানে চাপে পড়ে ভুল করে বসেন, অনুকূল সেখানে নিজের সংযম এবং ব্যাটিং দক্ষতার পরিচয় দেন। তিনি ২০৬.৮২ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করে ঝাড়খণ্ডের ইনিংস পুনর্গঠন করেন। তার ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ৭টি ছক্কা, যা তার বিস্ফোরক ব্যাটিং সামর্থ্যের নিদর্শন।
উত্তরপ্রদেশ ১৬০ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছিল। ঝাড়খণ্ডের অন্য ব্যাটারদের ব্যর্থতার মাঝেও অনুকূল তার ইনিংসটি এমনভাবে সাজান যে ঝাড়খণ্ড জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। যদিও দল শেষ পর্যন্ত ১০ রানে হেরে যায়, অনুকূলের ইনিংস সবার মন জয় করে নেয়।
অনুকূল রায় শুধু একজন ব্যাটার নন; তিনি একজন দক্ষ বোলার হিসেবেও পরিচিত। ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তিনি যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছিলেন, যা তার অলরাউন্ড দক্ষতার প্রমাণ। প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটে ঝাড়খণ্ডের হয়ে খেলার সময় তিনি ৯টি ম্যাচে ৩০টি উইকেট নিয়েছিলেন, যা টুর্নামেন্টে তার দলের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স ছিল।
২০২৫ সালের আইপিএল নিলামে কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) অনুকূলকে ৪০ লক্ষ টাকায় কিনে দলে যোগ করে। কেকেআর-এর হয়ে অনুকূলের সম্ভাবনা নিয়ে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উন্মাদনা দেখা দিয়েছে। তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স তাকে শুধু দলের ব্যাকআপ খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, বরং প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সক্ষম খেলোয়াড় হিসেবে প্রমাণ করেছে।
বিহার রাজ্যের সমস্তিপুরের জেলার ছোট্ট শহর রোসেরা থেকে উঠে এসে আজকের মঞ্চে নিজের জায়গা করে নেওয়া অনুকূল রায় তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার নাম। চাপের মুহূর্তে পারফর্ম করার ক্ষমতা, ব্যাট ও বলে সমান দক্ষতা, এবং দলের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি তাকে ভবিষ্যতে ভারতীয় ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
শক্তিশালী উত্তরপ্রদেশের বিপক্ষে অনুকূল রায়ের ৪৪ বলে ৯১ রানের ইনিংস তার প্রতিভার প্রতিফলন। তার মতো খেলোয়াড়রা শুধু দলের সাফল্য নয়, ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করতেও সক্ষম। আসন্ন আইপিএল মরসুমে কেকেআর-এর হয়ে অনুকূলের মাঠে নামার অপেক্ষায় রয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীর। এমন একটি প্রতিশ্রুতিশীল প্রতিভার কাছ থেকে ভারতীয় ক্রিকেট অনেক কিছু আশা করতেই পারে।