পিনাকী রঞ্জন পাল : ক্রিকেট দুনিয়ায় প্রতিভার অভাব নেই, কিন্তু প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও যারা সুযোগের অভাবে হারিয়ে যান, তাঁদের সংখ্যাও কম নয়। সেই তালিকায় একসময় যোগ হতে পারতেন হিমাংশু সাংওয়ান। কিন্তু নিজের লড়াই, ধৈর্য আর সংকল্প দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন—সফলতা তাদেরই জন্য, যারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যেতে জানে।
আরো পড়ুন : Cricket : উমর নাজির মীর – জম্মু-কাশ্মীরের উত্থানশীল ক্রিকেট তারকা
একটা স্বপ্ন, অনেক প্রতিকূলতা
হিমাংশুর ক্রিকেট-যাত্রা শুরু হয়েছিল দিল্লির নাজাফগড়ে, যেখানে ভারতের প্রাক্তন ওপেনার বীরেন্দ্র সহবাগের বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই তার চোখে ছিল স্বপ্ন—দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলার। দিল্লির বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ পাওয়ার পর তিনি মনে করেছিলেন, এবার হয়তো স্বপ্নের পথটা একটু সহজ হবে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। দিল্লির সিনিয়র দলে জায়গা না পেয়ে তিনি হরিয়ানার হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেখানেও ভাগ্য সহায় হয়নি। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও সুযোগের অভাবে তিনি প্রায় হারিয়ে যাচ্ছিলেন।
অন্ধকার থেকে আলোতে ফেরার লড়াই
জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো একটা সময় এসেছিল, যখন হিমাংশু রেলওয়ের স্পোর্টস কোটায় টিকিট কালেক্টর হিসেবে চাকরি নেন। সাধারণত, এখান থেকেই অনেক ক্রিকেটারের স্বপ্ন থেমে যায়। কিন্তু হিমাংশু হাল ছাড়েননি। রেলের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
অনূর্ধ্ব-২৩ সিকে নাইডু ট্রফিতে ৩৭টি উইকেট নেওয়ার পর তার প্রতিভা আবারও নতুন করে আলোচনায় আসে। এরপর ২০১৯ সালে রঞ্জি ট্রফিতে প্রথমবার রেলের সিনিয়র দলে সুযোগ পান তিনি। প্রথম ম্যাচেই তিনি আজিঙ্কা রাহানে সহ মুম্বাইয়ের পাঁচজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানকে আউট করে নিজের দক্ষতার পরিচয় দেন।
গ্লেন ম্যাকগ্রার পরামর্শ আর নিজের বিশ্বাস
হিমাংশুর ক্রিকেট-যাত্রায় সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা। এমআরএফ ফাউন্ডেশনে প্রশিক্ষণের সময় ম্যাকগ্রা তাকে বলেছিলেন, “চেষ্টায় কোনো ফাঁক রাখবে না। মাথা ঠান্ডা রাখবে আর ধৈর্য ধরে লেগে থাকবে। যখনই সমস্যায় পড়বে, ফিরে যাবে তোমার ক্রিকেটের প্রাথমিক শিক্ষায়।” এই কথাগুলোই হয়তো হিমাংশুকে বারবার প্রেরণা দিয়েছে, যখন তিনি সংকটে পড়েছেন।
সবচেয়ে বড় মুহূর্ত: বিরাট কোহলির উইকেট
রেলের হয়ে খেলার যাত্রায় অনেক বড় ব্যাটসম্যানদের আউট করলেও, ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি দিনটা হিমাংশুর জীবনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে তিনি শিকার করেন বিরাট কোহলির উইকেট। একজন তরুণ বোলারের কাছে এ যেন এক স্বপ্নপূরণের মুহূর্ত। ক্রিকেট দুনিয়া হঠাৎ করেই তাঁর নাম জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। গুগলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাই জানতে চায়—কে এই হিমাংশু সাংওয়ান?
আরো পড়ুন : Cricket : রঞ্জি ট্রফিতে অঘটন: তারকাসমৃদ্ধ মুম্বাইকে হারাল জম্মু-কাশ্মীর
একজন প্রকৃত লড়াকুর গল্প
আজকের দিনেও, যখন প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা সুযোগের অভাবে হাল ছেড়ে দেন, হিমাংশু সাংওয়ান যেন তাঁদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। ক্রিকেটের প্রতি তাঁর অবিচল বিশ্বাস, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রম তাকে এনে দিয়েছে এই সাফল্য।
হিমাংশুর গল্প আমাদের শেখায়—প্রতিভা থাকলেই সফল হওয়া যায় না, তার সঙ্গে চাই ধৈর্য, লড়াই করার মানসিকতা আর কখনো না হার মানার জেদ। জীবন সুযোগ দেয়, কিন্তু সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করাটাই আসল চ্যালেঞ্জ। হিমাংশু সেই চ্যালেঞ্জে সফল হয়েছেন।
আজ হয়তো তিনি ভারতীয় দলে সুযোগ পাননি, কিন্তু তাঁর এই যাত্রা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সফলতা রাতারাতি আসে না, কিন্তু যারা নিজের স্বপ্নের প্রতি অবিচল থাকে, তাদের কাছেই একদিন সফলতা এসে ধরা দেয়।