দাগা পরিবার ও জলপাইগুড়ি

পঙ্কজ সেন : জলপাইগুড়ি জেলা গড়ে ওঠার সময়কালে ব্যবসার সূত্রে সুদূর রাজস্থান থেকে জলপাইগুড়ি জেলা শহরে এসেছিলেন শ্রীমোহনলাল দাগা মহাশয়। তবে এর সময়কাল সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে এ কথা নিশ্চিত দাগা পরিবার জলপাইগুড়ি শহরের একটি অন্যতম বনেদি পরিবার। মোহন বাবুর পুত্র শ্রীরামচন্দ্র দাগা এবং অপর পুত্র শ্রীসীতারাম দাগা কলকাতার নামকরা বিড়লা পরিবারের কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। রামচন্দ্র দাগার জ্যেষ্ঠ হল পুত্র রামদিন দাগা এবং কনিষ্ঠপুত্র ভগবান দাগা। রামদিন দাগা ১৯২৯ সালে প্রথম জলপাইগুড়ি পৌরসভার সদস্য পদ লাভ করেন এবং ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছর অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে দায়িত্বভার সম্পন্ন করেছিলেন।

জলপাইগুড়িতে দাগা পরিবারের অনেক অবদান। শহরের রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের জমিতে ছিল দাগা পরিবারের সুবিশাল বাগানবাড়ি। ঐ জমি শ্রীবংশীধর দাগা আশ্রমকে দান করেছিলেন বলে জানা যায়। জলপাইগুড়ি ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিও দাগা বাড়ির অনুদানে গড়ে উঠেছিল। পাওয়ার হাউস গড়ে উঠেছিল মোহনলাল রামচন্দ্র দাগার নামে। জলপাইগুড়ি শহরের বুকে “রূপশ্রী” হল গড়ে উঠেছিল এই দাগা পরিবারের হাত ধরেই। দাগাবাড়ির সামনের বসার ঘরে আজো দেখা যায় “নর্থ বেঙ্গল ফিল্ম কোম্পানি” নামক বোর্ড। সীতারাম দাগা ছিলেন রাজনীতির জগতে একটি অন্যতম পরিচিত নাম। তিনি রাজ্য সভায় এম.পি ছিলেন। এই পরিবারের ভগবানদাস দাগা একজন উল্লেখযোগ্য শিল্পপতি ছিলেন। গৌরীশংকর দাগার বাড়িটি বিশ্বাস পেট্রোল পাম্প এর পাশে অবস্থিত এবং ‘সানাই’ নামে পরিচিত। শ্রীরামানন্দ দাগা প্রতিষ্ঠিত উকিলপাড়ার সুবিশাল দাগা বাড়িটি আজো তাদের বনেদিয়ানার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। অবশ্য প্রতিবছর এই বাড়ির সামনের বিশাল খোলা প্রাঙ্গণে উকিলপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি অত্যন্ত জাঁকজমক সহকারে দুর্গাপূজা করে থাকে। দাগা পরিবারের বর্তমান সদস্যরাও তাতে অংশগ্রহণ করেন। অবশ্য বর্তমানে এই পরিবারের বহু সদস্য কলকাতা সহ-সারা ভারতে ছড়িয়ে আছেন।

ব্যবসা ছাড়াও জলপাইগুড়ির বনেদি পরিবারগুলোর ঐতিহ্য মেনে দাগা পরিবারও চা বাগান পত্তন করে চা শিল্পপতির খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। অবশ্য এই ক্ষেত্রে রামানন্দ দাগার বিশেষ অবদান রয়েছে। পরিবারটির মূল ব্যবসা ছিল চা বাগান। দাগা পরিবারের মোট চারটি চা বাগান ছিল, তরাই অঞ্চলে সয়েদাবাদ ও মেরিভিউ এবং ডুয়ার্স এলাকায় ধলাঝোরা ও কোহিনুর চা বাগান। পরবর্তীতে প্রথম তিনটি বাগান বিক্রি হয়ে গেলেও ২০০৫-০৬ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল কোহিনুর চা বাগান। যার অফিস ছিল শহরের থানা মোড় এলাকায়। ২০০৬ সালে সেটিও বিক্রি হয়ে যায়।

সূত্র : জলপাইগুড়ি পৌরসভা : ১২৫ বছরের ইতিবৃত্ত (উমেশ শর্মা) এবং নিজস্ব সংগৃহীত তথ্য।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : সৌরভ দে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *