গোয়েন্দা গল্প : ব্যাঙ্কের নথি চুরির রহস্যের সমাধান

লেখক : পিনাকী রঞ্জন পাল

প্রথম অধ্যায় : পরিচয়

উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি শহরটি শান্তিপ্রিয় এবং সুন্দর। এই শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে করলা নদী। এই নদীর ধারেই বসবাস করে সেন পরিবার। সেন পরিবারের সবচেয়ে চঞ্চল এবং মেধাবী সদস্য হলো ইধিকা সেন। ইধিকা শহরের এক নামী বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী, তবে তার পরিচিতি শুধু এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। সে একজন খুদে গোয়েন্দা, যার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর বিশ্লেষণী ক্ষমতা ইতিমধ্যে শহরের অনেক জটিল রহস্যের সমাধান করেছে।

ইধিকার বাবা, দেবাশীষ সেন, একজন বড় পুলিশ অফিসার। ইধিকার মধ্যে গোয়েন্দাগিরির আগ্রহ জাগানোর পিছনে তার বাবার পেশার একটি বড় ভূমিকা আছে। বাবার কাজের গল্পগুলো শুনতে শুনতে ইধিকা রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠে। ইধিকার দুই বন্ধু পায়েল এবং অনুরাগ সবসময় তার সাথে থাকে এবং রহস্য ভেদে তাকে সহায়তা করে।

দ্বিতীয় অধ্যায় : নতুন রহস্য

একদিন, ইধিকার বাবা একটি নতুন রহস্যের মুখোমুখি হন। শহরের প্রধান ব্যাংক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরি হয়েছে। নথিটিতে ব্যাংকের অনেক গোপন আর্থিক তথ্য ছিল, যা প্রকাশ পেলে ব্যাংকের সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে। খবর পেয়েই ইধিকার বাবা ঘটনাস্থলে যান এবং ইধিকাকেও সঙ্গে নিয়ে যান।

ব্যাংকের ম্যানেজার, মিস্টার ভট্টাচার্য্য, জানান যে নথিটি ছিল ব্যাংকের সবচেয়ে নিরাপদ সেফে। সেফের চাবি কেবলমাত্র ম্যানেজার এবং প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার কাছে ছিল। সেফে কোনো ভাঙচুরের চিহ্ন ছিল না, তাই চাবি দিয়ে সেফ খোলা হয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া হয়।

ইধিকা সেফের আশেপাশে পর্যবেক্ষণ শুরু করে। সে দেখতে পায় সেফের পাশে একটি ছোট্ট ছিদ্র, যা সাধারণ দৃষ্টিতে চোখে পড়ার কথা নয়। ছিদ্রটি দেখে ইধিকার মনে হলো কেউ হয়তো সেখান দিয়ে কোনো কৌশলে সেফ খুলেছে। ইধিকা তখন সেফের চাবি পরীক্ষা করে দেখে যে সেটিতে কোনো স্ক্র্যাচের চিহ্ন নেই, যা নির্দেশ করে যে চাবি ঠিকঠাকই ছিল।

তৃতীয় অধ্যায় : অনুসন্ধান

ইধিকা তার বন্ধু পায়েল আর অনুরাগকে ডেকে পাঠায়। তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংকের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবে। মিস্টার বসু, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা, জানান যে তিনি সারা রাতই ব্যাংকের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন এবং কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু তার উত্তরে ইধিকার কিছুটা সন্দেহ হয়, কারণ তার চোখে ক্লান্তির ছাপ ছিল না, যা নির্দেশ করে যে তিনি হয়তো সারা রাত জেগে ছিলেন না।

ইধিকা, পায়েল আর অনুরাগ মিলে মিস্টার বসুর ঘরটি পরীক্ষা করে। সেখানে গিয়ে ইধিকা আবিষ্কার করে একটি খালি ঘুমের ওষুধের বোতল, যা নির্দেশ করে যে মিস্টার বসু হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ইধিকা তখন নিশ্চিত হয় যে চুরির সময় মিস্টার বসু ঘুমিয়ে ছিলেন।

ইধিকা তার বাবার অনুমতি নিয়ে মিস্টার বসুর মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে। সেখানে দেখতে পায় এক অজানা নম্বর থেকে একটি মেসেজ এসেছে, যা নির্দেশ করে যে সেই রাতেই কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ইধিকা তার বাবাকে সব জানায় এবং সেই নম্বর ট্রেস করার ব্যবস্থা করে।

চতুর্থ অধ্যায় : রহস্য উদ্ঘাটন

মিস্টার বসুকে জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে। তিনি স্বীকার করেন যে সেদিন রাতে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু চুরির বিষয়ে কিছু জানেন না। তবে একটি কথা তিনি জানান, যা ইধিকার সন্দেহ আরও বাড়ায়। কয়েকদিন আগেই, তার এক পুরোনো বন্ধু হঠাৎ করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অদ্ভুতভাবে নানা প্রশ্ন করতে থাকে। মিস্টার বসু প্রথমে ভেবেছিলেন বন্ধুটি স্রেফ কৌতূহল থেকে জানতে চাইছে, কিন্তু এখন তার মনে সন্দেহ হচ্ছে।

ইধিকার বাবা সেই বন্ধুটির মোবাইল নম্বর ট্রেস করতে নির্দেশ দেন। নম্বরটি ট্রেস করা হলে দেখা যায় যে সেই বন্ধুটি বর্তমানে শহরে রয়েছে এবং তার গতিবিধি সন্দেহজনক। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ভয়ে সব স্বীকার করে।

বন্ধুটি জানায়, যে তার উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। ব্যাংকের বরখাস্ত হওয়া এক পুরনো কর্মচারী, যার নাম রঞ্জিত, তাকে ব্ল্যাকমেইল করেছিল। রঞ্জিত তাকে জানায় যে যদি সে মিস্টার বসুর কাছ থেকে ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে সাহায্য না করে, তবে তার একটি পুরনো অপরাধ ফাঁস করে দেবে। বন্ধুটি ভয়ে এবং নিজের সুরক্ষার জন্য মিস্টার বসুকে ফাঁদে ফেলে তার কাছ থেকে নিরাপত্তা সম্পর্কিত তথ্য বার করার চেষ্টা করে।

এই তথ্য পাওয়া মাত্রই ইধিকা বুঝতে পারে, যে রঞ্জিতই হচ্ছে পুরো ঘটনার মূল হোতা। সে মিস্টার বসুর বন্ধুকে ব্যবহার করে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের করেছে এবং সেই অনুযায়ী চুরির পরিকল্পনা করেছে।

পঞ্চম অধ্যায় : রহস্য সমাধান

রঞ্জিতকে খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। কিছুদিনের মধ্যেই রঞ্জিতকে শহরের বাইরে একটি ছোট্ট গ্রামে ধরে ফেলা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে যে তার উদ্দেশ্য ছিল ব্যাংকের ক্ষতি করা, কারণ তাকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল বলে তার বিশ্বাস ছিল।

সে আরও জানায়, যে মিস্টার বসু এবং তার বন্ধুকে ব্ল্যাকমেইল করেই সে পুরো পরিকল্পনাটি সফলভাবে কার্যকর করেছিল। সেফের চাবির ডুপ্লিকেট তৈরি করেছিল সে এবং সেই রাতেই নথিটি চুরি করে।

ষষ্ঠ অধ্যায় : ইধিকার কৃতিত্ব

ইধিকার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং তার বন্ধুরা পায়েল ও অনুরাগের সহযোগিতায় রহস্যের সমাধান হয়। ম্যানেজার মিস্টার ভট্টাচার্য্য ইধিকার প্রশংসা করেন এবং তার বাবা দেবাশীষ সেন গর্বিত হন তার মেয়ের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তায়।

ইধিকার এই সাফল্যের পর তার আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়, আর সে দৃঢ়ভাবে সংকল্প করে যে একদিন সে দেশের সেরা মহিলা গোয়েন্দা হবে।

© পিনাকী রঞ্জন পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *