লেখক : পিনাকী রঞ্জন পাল
প্রথম অধ্যায়: জাদুকরের আগমন
শীতকাল এলেই জলপাইগুড়িতে একধরনের উৎসবের আবহ তৈরি হয়। নীল আকাশ, টলটলে রোদ, আর শীতল বাতাস—সব মিলিয়ে যেন চারপাশে এক আলাদা পরিবেশ সৃষ্টি করে। শহরের মানুষের মুখে হাসি, শিশুদের চাহনি—সব কিছুতেই এক নতুন উচ্ছ্বাস দেখা যায়। মেলা, ফাংশন, পিকনিক—এগুলো যেন শীতকালের অপরিহার্য অংশ। আর এবার, শহরবাসীর আনন্দের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে, জলপাইগুড়িতে এসেছে একটি বিশেষ ম্যাজিক শো।
সারা শহরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ছোট থেকে বড়, সবাই টিকিট কেটে ম্যাজিক শো দেখতে ছুটে চলেছে। কারণ, দেশের বিখ্যাত জাদুকর—ডায়মন্ড কুমার, যিনি তার অসাধারণ জাদুর কৌশলে দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলেন। তার জাদুতে নাকি রয়েছে একটি রহস্যময় বই, যার ক্ষমতা সম্পর্কে চারপাশে নানান গুজব। কেউ বলছে, বইটিতে আছে এমন সব কৌশল যা মানুষকে অবাক করে দিতে পারে। আর সেই বইটি নিয়েই শুরু হয়েছে আলোচনা।
আরো পড়ুন : গোয়েন্দা গল্প : ব্যাঙ্কের নথি চুরির রহস্যের সমাধান
একদিন, ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগের মনে হয়েছিল, এই ম্যাজিক শো একবারে মিস করা উচিত নয়। তাই তারা সকলে মিলে একসাথে শো-এর জন্য বের হয়। শহরের মিলন ময়দান, যেখানে শো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেখানে পৌঁছানোর সাথে সাথে তারা চারপাশে দেখতে পায় উচ্ছ্বসিত দর্শকদের ভিড়। রঙ-বেরঙের পোশাক পরিহিত শিশুদের কোলাহল, তাদের আনন্দিত হাসি—সবকিছুই যেন উৎসবের মহোৎসব বয়ে এনেছে।
ময়দানে প্রবেশ করার পর তাদের চোখে পড়ে বিশাল এক তাঁবু, যেখানে সোনালী রঙের লাইটিংয়ের মাধ্যমে পুরো জায়গা জাদুকরী হয়ে উঠেছে। তাঁবুর প্রবেশদ্বারে গিয়ে তারা টিকিট দেখায় এবং একদম সামনের সারিতে বসার সুযোগ পায়। দর্শকদের ভিড়ের মধ্যে বসে শো-এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
জাদুকর ডায়মন্ড কুমারের নাম ঘোষণা হতেই সবার মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই জাদুকর মঞ্চে উপস্থিত হয়। সে একটি কালো কোট পড়া, মাথায় একটি সোনালী টুপি, আর হাতে একটি লম্বা বাঁশি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে আত্মবিশ্বাসীর হাসি এবং চোখে একটি রহস্যময় দৃষ্টি।
আরো পড়ুন : গোয়েন্দা গল্প : গয়না চুরির রহস্য উদঘাটন
জাদুকর তখন শুরু করে তার অভিনব সব কৌশল। একের পর এক জাদুর খেলা দেখাতে শুরু করে, দর্শকরা হতবাক হয়ে যায়। প্রথমেই একটি সাধারণ টেবিলের ওপর একটি গোলাপী রুমাল রাখে এবং সেখান থেকেই একের পর এক অসংখ্য ফুল বের করতে থাকে। এরপর সে একটি খাঁচা নিয়ে আসে, যা দিয়ে সে দর্শকদের সামনে ছোট ছোট আলোয় ভরা গোলক তৈরি করে।
তবে সবসময়ই সেই কালো বাক্সটির দিকে তার মনোযোগ থাকে। দর্শকরা জানে, এই বাক্সটির মধ্যেই কিছু বিশেষ রহস্য লুকানো আছে, কিন্তু ডায়মন্ড কুমার তা কোনোক্রমেই প্রকাশ করে না।
শো চলাকালীন, দর্শকদের মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়। কেউ বলছে, জাদুকরের সাফল্যের পেছনে সেই রহস্যময় বইয়ের অবদান রয়েছে। আর কেউ বলছে, আসলে সেই বইটি শুধুমাত্র জাদুর জন্য নয়, বরং এটি একটি প্রাচীন জাদুকরী শক্তির সাথে সম্পর্কিত।
তাদের মধ্যে একজন দর্শক জিজ্ঞেস করে, “ডায়মন্ড কুমার কি সত্যিই অসাধারণ?” অন্য একজন উত্তর দেয়, “অবশ্যই! তবে সেই বইটি আমাদের জানাতে হবে, কারণ সেটা ছাড়া তার জাদুর রহস্য জানা যাবে না।”
হঠাৎ করেই জাদুকর ডায়মন্ড কুমার মঞ্চের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বললেন, “এখন আমি আপনাদের এমন একটি জাদু দেখাতে যাচ্ছি, যা ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ীভাবে লেখা থাকবে। এই বিশেষ জাদুটি করার জন্য আমার প্রয়োজন একটি বিশেষ বস্তু—আমার রহস্যময় বই।” তার গম্ভীর কণ্ঠ শুনে দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা ও কৌতূহল বেড়ে গেল।
আরো পড়ুন : গোয়েন্দা গল্প : নায়েক ভিলার রহস্য
ডায়মন্ড কুমার তার কালো বাক্সটির দিকে এগিয়ে গেলেন, ধীরে ধীরে বাক্সটি খুলে ভেতর থেকে একটি সোনালী আভায় ঝলমল করা বই বের করলেন। সেই মুহূর্তে পুরো ঘরটি যেন এক অদ্ভুত আলোর ঝলকে ভরে গেল। দর্শকরা নিস্তব্ধ হয়ে দেখছে, যেন সময় থেমে গেছে। বইটি মঞ্চে তোলা মাত্রই চারপাশে মৃদু গুঞ্জন ও ফিসফিসানি শোনা যাচ্ছে, যা রহস্যময় পরিবেশকে আরও ঘনীভূত করছে।
বইটি খোলার পর ডায়মন্ড কুমার আড়ম্বরপূর্ণ ভঙ্গিতে মন্ত্রোচ্চারণ শুরু করলেন। তার প্রতিটি শব্দ যেন ঘরের বাতাসে স্রোতের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। মন্ত্রের প্রভাবে বইটির পৃষ্ঠাগুলো নিজে থেকেই ওল্টাতে শুরু করল। এরপর, বইটির পৃষ্ঠাগুলো থেকে ধোঁয়া ও রঙিন আলো বেরিয়ে এসে আকাশে বিভিন্ন আকার তৈরি করতে লাগল—বাঘ, হাতি, আগুনের রথ—এগুলোর একটার পর একটা অবয়ব ফুটে উঠছে।
হঠাৎ, বই থেকে বের হওয়া আলো একটি নির্দিষ্ট চক্রে আবর্তিত হতে শুরু করল এবং মঞ্চে এক বিস্ফোরণের মতো আওয়াজ হল। সেই মুহূর্তে মঞ্চের মাঝখানে একটি বড়, সোনালী দরজা প্রায় আবির্ভূত হল। দরজার উপরে লেখা, “রহস্যের রাজ্য”। দর্শকরা অবাক হয়ে ভাবতে থাকে, এ কি শুধুই এক কৌশল, নাকি সত্যিই কোনো অলৌকিক ঘটনার সূচনা?
এরপর, ডায়মন্ড কুমার রহস্যময় দরজাটির সামনে দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে বললেন, “আজকের জন্য এইটুকুই। তবে এই দরজার পিছনে কী রহস্য লুকিয়ে আছে, তা জানতে হলে আপনাদের আবারও আসতে হবে।”
আরো পড়ুন : গোয়েন্দা গল্প : অষ্টধাতুর মূর্তি চুরি
তার কথা শেষ হতে না হতেই দরজাটি ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল, এবং মঞ্চের সমস্ত আলো নিভে গেল। কিছুক্ষণ পরে পুরো হলঘর আবার স্বাভাবিক আলোয় ভরে উঠল, কিন্তু দর্শকদের মনে তখনও সেই দরজা আর রহস্যময় বইয়ের মায়াবী প্রভাব। সবাই যেন নিজের অজান্তেই সেই অভিজ্ঞতা থেকে বের হতে পারছিল না। শো-এর শেষ ঘোষণা শোনার পর ধীরে ধীরে সবাই বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু করল।
ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগও তখনও হতবাক, একে অপরের দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে ফিসফিসিয়ে কথা বলতে লাগল।
“তুমি কি মনে করো, সত্যিই ওই দরজা দিয়ে কোথাও যাওয়া যায়?” পায়েল চাপা গলায় প্রশ্ন করল।
“জানি না, তবে কিছু তো রহস্য আছেই,” অনুরাগ চোখ বড় করে বলল, “কিন্তু জাদুকর দরজাটি মিলিয়ে দিল কেন?”
ইধিকা একটু গম্ভীরভাবে বলল, “আমার মনে হচ্ছে, এই রহস্যের পেছনে কিছু বিশেষ কিছু লুকিয়ে আছে, যা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। ডায়মন্ড কুমারের সেই সোনালী বই আর কালো বাক্স—এগুলোর মধ্যে একটা অদ্ভুত রহস্য আছে, যা সাধারণ জাদু নয়।”
তাদের মনের মধ্যে কৌতূহল আর উত্তেজনা নিয়ে তারা তিনজন বাড়ির পথে রওনা দিল। শীতের ঠাণ্ডা বাতাসে শহরের আলো-আঁধারি পথ ধরে হেঁটে যেতে যেতে তাদের মনে ঠিক করল, এই রহস্যের আসল কারণ বের করতেই হবে। রহস্যময় সেই বইটি নিয়ে আরও অনেক জিজ্ঞাসা তাদের মনে জাগতে থাকল।
সেদিনের শো-এর স্মৃতি এবং অদ্ভুত অভিজ্ঞতা তাদের মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। তারা জানে না, সামনের দিনগুলোতে কী ঘটতে চলেছে, কিন্তু এই ঘটনার মধ্যেই তাদের সামনে অপেক্ষা করছে এক চমকপ্রদ অভিযানের শুরু।
দ্বিতীয় অধ্যায়: হঠাৎ নিখোঁজ
পরদিন সকালে জলপাইগুড়ি শহরে যেন হঠাৎ করেই বোমা পড়েছে। শহরের পথে পথে শোরগোল, মানুষের মুখে মুখে একটাই কথা—”জাদুকর ডায়মন্ড কুমার কোথায় গেলেন?” গত রাতের ম্যাজিক শো-এর পর থেকে তিনি একেবারে উধাও! তার আশ্চর্য সেই সোনালী বইটিও নেই, আর রহস্যময় কালো বাক্সটাও উধাও হয়ে গেছে।
আরো পড়ুন : গোয়েন্দা গল্প : মূর্তি রহস্যের সমাধান
ডায়মন্ড কুমারের দলের কর্মচারীরা প্রথমে এই ব্যাপারে কিছু বলতে চায়নি। তাদের মুখে অস্বস্তি, চোখেমুখে সন্দেহের ছাপ। যখন স্থানীয়রা তাদের প্রশ্ন করে, তখন তারা প্রচার করতে শুরু করে যে ডায়মন্ড কুমার বিশ্রাম নিতে শহরের বাইরে গেছেন। তবে কারও সঙ্গেই স্পষ্ট কিছু বলছে না। কিন্তু জলপাইগুড়ির মানুষ তো জানে, ডায়মন্ড কুমার কোনোদিন এমনভাবে না বলে-কয়ে কোথাও যান না।
ইধিকা যখন সকালে খবরটা শোনে, তার মনে প্রবল কৌতূহল জেগে ওঠে। সে ভাবে, “কাল রাতেই তার সেই দরজা আর বইটা নিয়ে এত রহস্য তৈরি হল, আর আজকেই তিনি উধাও?” পায়েল আর অনুরাগকে এই খবর জানাতেই ওরাও অবাক হয় এবং পুরো বিষয়টা সন্দেহজনক মনে হয়। তারা তিনজন স্থির করে, পুরো ব্যাপারটা খতিয়ে দেখতেই হবে।
সন্ধ্যাবেলায় ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগ ম্যাজিক শোয়ের তাঁবুর কাছে পৌঁছে যায়। ভেতরে ঢোকার সময় তারা দেখে, অনেক দর্শকও এই ঘটনায় চঞ্চল, কেউ কেউ কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে।
ইধিকা একজন কর্মচারীর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে, “আমরা ডায়মন্ড কুমারের ভক্ত। কাল তার জাদু শো দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম, কিন্তু শুনলাম তিনি আজ হঠাৎ শহর ছেড়ে চলে গেছেন! সত্যিই কি তিনি বিশ্রামের জন্য গেছেন?”
কর্মচারীটি একটু থমকে গিয়ে বলে, “হ্যাঁ, মানে… সেটা তো জানি না। আসলে ম্যাজিশিয়ানদের এই রকম মাঝেমাঝে চলে যেতেই হয়।”
আরো পড়ুন : গোয়েন্দা গল্প : করলার স্রোতে রহস্যের স্রোত
ইধিকা একটু গম্ভীর মুখে তাকে বলে, “তবে আমরা শুনেছি তিনি যে বইটি ব্যবহার করতেন, সেটা কীভাবে হারিয়ে গেল?”
কর্মচারীর মুখ মুহূর্তের জন্য ফ্যাকাসে হয়ে যায়। তারপর সে দ্রুত বলে, “তোমরা বেশি কৌতূহলী হচ্ছ, ছোটরা নিজেদের কাজে মন দাও।”
কর্মচারীটি এড়িয়ে চলে গেলে ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগ একে অপরের দিকে তাকিয়ে বুঝে যায়, এখানে সত্যিই কিছু লুকোনো রহস্য আছে। তখনই অনুরাগ বলে, “এই কর্মচারীদের মধ্যে কেউ সত্যি কিছু জানে, কিন্তু ভয়ে বলছে না। আমরা এমন কাউকে খুঁজে বের করতে হবে যে বলতে পারে।”
তারা আশেপাশে খুঁজতে খুঁজতে এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন পুরোনো কর্মচারীর দিকে নজর দেয়। লোকটি বয়সে বৃদ্ধ এবং দেখতে অবসন্ন। তার মুখে এক ধরনের উদ্বেগের ছাপ। ইধিকা লোকটির কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে, “কাকু, আমরা ডায়মন্ড কুমারের ভক্ত। তিনি ঠিক আছেন তো?”
লোকটি প্রথমে চমকে যায়, কিন্তু ইধিকার করুণ চোখে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “ডায়মন্ড কুমার ঠিক নেই। আর তার সেই বইটা—হায় হায়, সেই বইটাতে যেন অভিশাপ ছিল। তিনি সব সময় বলতেন, এই বই তাকে অনেক কিছু দিয়েছে, কিন্তু একদিন এই বই তাকে ধ্বংস করবে।”
ইধিকা চমকে উঠে বলে, “ধ্বংস করবে মানে?”
লোকটি কাঁপা গলায় বলে, “ডায়মন্ড কুমার বইটির রহস্য নিয়ে আমাদের খুব কমই বলতেন। তবে এটা জানি, সেই বইয়ের প্রতি তার এমন একটা আকর্ষণ ছিল যে সেটি ছাড়া তিনি থাকতে পারতেন না। গত রাতের শো-এর পর আমরা সবাই যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখন গভীর রাতে একটা প্রচণ্ড আওয়াজ হয়েছিল। আমরা ছুটে গিয়ে দেখি, ডায়মন্ড কুমার নেই, আর সেই সোনালী বইটিও গায়েব।”
পায়েল উদ্বিগ্ন হয়ে বলে, “তাহলে কি তিনি কোনো বিপদে পড়েছেন?”
আরো পড়ুন : গোয়েন্দা গল্প : প্রথম রহস্যের সমাধান
বৃদ্ধ লোকটি মাথা নাড়ল, “সেটাই তো ভয়। তবে আমাদের নির্দেশ আছে, যেন কাউকে এসব না বলি।”
লোকটির মুখ থেকে এতটুকু তথ্য পেয়ে ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগের মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়। ডায়মন্ড কুমার কি সত্যিই সেই বইয়ের কারণে বিপদে পড়েছেন? নাকি তার উধাও হওয়ার পেছনে অন্য কেউ জড়িত? তিনজনেই স্থির করে, এই রহস্যের গিঁট খোলার জন্য তাদের আরও গভীরে অনুসন্ধান করতে হবে।
তারা সিদ্ধান্ত নেয়, এই রহস্যময় বইটি নিয়ে তাদের আরও খোঁজখবর করতে হবে। হয়তো ডায়মন্ড কুমারের ঘরের আশেপাশে কোনো সূত্র পাওয়া যেতে পারে। ইধিকা বলে, “আজ রাতেই আমরা আবার এখানে আসব। হয়তো তার ঘরের আশেপাশে কিছু সূত্র লুকিয়ে আছে।”
তৃতীয় অধ্যায়: তদন্তের শুরু
ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগ জানত, ডায়মন্ড কুমারের নিখোঁজ রহস্য সমাধান করা সহজ হবে না। গতকাল রাতের সেই জাদুকরের চমকপ্রদ প্রদর্শনীর পর হঠাৎ তার উধাও হয়ে যাওয়া এবং সোনালী বইটির হারানো, সবই যেন রহস্যময় ধোঁয়াশায় ঘেরা। তারা ঠিক করে, ডায়মন্ড কুমারের নিখোঁজ হওয়ার আগে তার শেষ শো-তে উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলেই প্রথমে সূত্র খুঁজবে।
সকালে ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগ আবার সার্কাসে ফিরে যায়। শো চলাকালে যারা backstage বা পর্দার আড়ালে কাজ করছিল তাদের কয়েকজনকে খুঁজে বের করে কথা বলতে শুরু করে। অনেকেই কৌতূহল প্রকাশ করে, কিন্তু একটি বিশেষ তথ্য মেলে এক সহকারী কর্মচারীর কাছ থেকে। সহকারীটি জানায়, শো চলাকালীন সে একটি অচেনা লোককে বারবার জাদুকরের বাক্সের দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকাতে দেখেছিল। লোকটির চেহারা, হাবভাব বেশ অদ্ভুত ছিল। সহকারী বলে, “আমাদের এখানে অনেকেই আসে, কিন্তু সেই লোকটির দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছিল সে কিছু চুরি করতে পারে। তবে তার চেহারা এমন নয় যে খুব সহজে মনে রাখা যায়, শুধু মনে আছে, তার হাতে একটি ছোট্ট নোটবুক ছিল।”
আরো পড়ুন : ঝড়ের গল্প : আশার আলেয়া
এই কথাটি শুনে ইধিকা আর পায়েলের মনের মধ্যে কৌতূহল আরো জেগে ওঠে। তারা ভাবে, লোকটি যদি সত্যিই কিছু করার চেষ্টা করে থাকে, তাহলে আশপাশেই তাকে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। তারা শহরের কাছে ছোট্ট দোকানগুলিতে খোঁজখবর শুরু করে। কয়েকজন দোকানদার জানায় যে লোকটি প্রায় প্রতিদিনই ম্যাজিকের তাঁবুর আশপাশে ঘোরাঘুরি করত এবং বারবার ম্যাজিকের তাঁবুর দিকে তাকিয়ে থাকত। তবে তার আসল পরিচয় বা উদ্দেশ্য কেউ বুঝতে পারেনি।
কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর তারা ফিরে আসে ম্যাজিকের তাঁবুর কাছে। তখন পায়েলের মনে হয়, জাদুকরের backstage-এর জিনিসপত্র হয়তো কিছু সূত্র দিতে পারে। তারা বুদ্ধি করে সার্কাসের কর্মচারীদের অনুরোধ করে backstage-এ ঢোকার অনুমতি পায়। সেখানে তাদের একটি ছোটো ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে ডায়মন্ড কুমারের কয়েকটি ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রয়েছে। ঘরটি বেশ নির্জন, আর সেখানে জাদুকরের পোশাক ও অন্য জিনিস রাখা ছিল।
অনুরাগ বলে, “যদি তিনি সত্যিই কোনো বিপদে পড়ে থাকেন, তবে হয়তো তার জিনিসপত্রের মধ্যে এমন কিছু থাকতে পারে যা আমাদের সেই রহস্যময় লোকটির বিষয়ে সাহায্য করতে পারে।”
তারা ঘরটি তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে। ইধিকার চোখে পড়ে ঘরের এক কোণে একটি ছোটো ডেস্ক। ডেস্কের উপরে একটি কাগজের টুকরো পড়ে ছিল, যা অন্য সবকিছু থেকে একটু আলাদা মনে হয়। ইধিকা কাগজটি তুলে দেখে, সেখানে কিছু অদ্ভুত সংকেত লেখা আছে—মাঝে মাঝে কিছু ইংরেজি অক্ষর, কিছু সাংকেতিক চিহ্ন, এবং কিছু সংখ্যা। কাগজটি দেখে মনে হয় যেন এটি কোনো গোপন সংকেত, যা সাধারণ চোখে পড়লে কেউ কিছুই বুঝতে পারবে না।
আরো পড়ুন : গল্পের নাম : সাজের আড়ালে
পায়েল বিস্মিত হয়ে বলে, “এটা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু, দেখতেই তো অদ্ভুত লাগছে।”
ইধিকা কাগজটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে এবং মনে মনে ভাবে, “ডায়মন্ড কুমার কি নিজের জন্য এই সংকেত লিখেছিলেন? নাকি এটা সেই সন্দেহজনক লোকটি রেখে গেছে?”
এই সংকেতটি নিয়ে ইধিকা আরও জানতে চায়, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে না। তাই সে সংকেতটি সযত্নে রেখে দেয় এবং ঠিক করে, সন্ধ্যায় আবার লোকটির খোঁজ করতে হবে। আর সেই সময় তাদের নিজেদের ছোটো দলের মধ্যেই এই সংকেতটি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
তারা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সিদ্ধান্ত নেয় যে, সন্ধ্যায় এসে ম্যাজিকের তাঁবুর আশেপাশে সেই রহস্যময় লোকটির খোঁজ করা হবে। কারণ লোকটি যদি সত্যিই কিছু গোপন পরিকল্পনা করে থাকে, তাহলে সে হয়তো এখনও কাছাকাছি কোথাও থাকবে।
চতুর্থ অধ্যায়: গোপন টানেলের সন্ধান
ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগ সংকেতটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করতে থাকে। সংকেতটির প্রতিটি চিহ্ন, অক্ষর আর সংখ্যা তাদের আরও কৌতূহলী করে তোলে। কিছুক্ষণ পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণের পর ইধিকা কিছু অদ্ভুত সম্পর্ক খুঁজে পায়। সে দেখে, সংকেতের চিহ্নগুলো এমনভাবে সাজানো যে, তা সম্ভবত এক ধরনের নির্দেশনা বা গোপন পথের মানচিত্র নির্দেশ করছে। ইধিকা নিজের চিন্তাগুলো সবার সঙ্গে ভাগ করে নেয়।
পায়েল অবাক হয়ে বলে, “এতদিন ধরে এই ম্যাজিক শো চলছিল, আর তার নিচেই কি এমন কিছু লুকানো থাকতে পারে?”
অনুরাগও উৎসাহিত হয়ে ওঠে, “তাহলে দেরি না করে চল এই সংকেতের নির্দেশনা ধরে এগিয়ে যাই। হয়তো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সন্ধান মিলবে।”
তারা সংকেতের প্রতিটি চিহ্ন ধরে ধরে জায়গাগুলিকে মিলিয়ে দেখে এবং অবশেষে একটি নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করতে পারে, যেটি ম্যাজিক শো-এর পশ্চাদপটে অবস্থিত একটি ছায়াচ্ছন্ন কোণ। সেই স্থানে গিয়ে ইধিকা লক্ষ্য করে যে, মেঝের একদিকের একটি অংশ হালকা ফাঁক রয়েছে, যেখানে হাত দিয়ে চাপ দিলে একটু সরে যায়। কৌতূহলী হয়ে তারা তিনজনেই ধীরে ধীরে সেই ফাঁক দিয়ে একটি সরু গোপন পথ দেখতে পায়।
আরো পড়ুন : হাসির গল্প : গদাধর দাদু আর মোটরসাইকেলের মহাকাণ্ড
সাহস সঞ্চয় করে তারা সেই সরু পথে প্রবেশ করে। গোপন পথটি একটি নির্জন টানেলে নিয়ে যায়, যেটি সরাসরি ম্যাজিকের তাঁবুর নিচ দিয়ে শহরের বাইরে চলে গেছে। টানেলটি দেখতে বেশ পুরনো এবং ধূলি-মলিনে ভরা, যা বহুদিন অব্যবহৃত ছিল বলে মনে হয়। পথের দু’ধারে ছায়া ভরা, এবং সেখানে কেবল ইধিকার ছোটো টর্চের আলোই তাদের পথ দেখায়। টানেলটিতে হেঁটে যেতে যেতে তাদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, তারা জানে না কী অপেক্ষা করছে সামনে।
টানেলের শেষে একটি ছোট্ট লোহার দরজা চোখে পড়ে। দরজাটি খানিকটা ভাঙাচোরা, তবে শক্তপোক্ত। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে তারা নিজেদের একটি পুরোনো, স্যাঁতসেঁতে ঘরে দেখতে পায়। ঘরটিতে কিছু অদ্ভুত জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে—কয়েকটি পুরোনো জাদুর সরঞ্জাম, কিছু বিশালাকৃতির বইয়ের আলমারি, এবং একটা ছোটো টেবিলের ওপর ছাইয়ের স্তূপ।
ঘরের মধ্যে হঠাৎ ইধিকার চোখে পড়ে একটি বিশেষ বই, যা সোনালী অলঙ্করণে আবৃত। বইটির ওপর এমন কিছু চিহ্ন আঁকা রয়েছে, যা তাদের শো-এর রাতে দেখা সেই সোনালী বইয়ের সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। তারা বোঝে যে, এটি ডায়মন্ড কুমারের সেই রহস্যময় বই, যা নিয়ে শহরের মানুষ এতদিন গুজব শুনে এসেছে।
অনুরাগ বলে, “এই বইটা এখানে কেন? আর এখানে আসলেই ডায়মন্ড কুমার এসেছিলেন কিনা!”
পায়েল কৌতূহল নিয়ে বইটির দিকে এগিয়ে যায় এবং বইটি খুলে দেখতে চেষ্টা করে। কিন্তু বইটি কিছুতেই খুলছে না, যেন বইটির পাতাগুলি কোনো অদৃশ্য তালায় আবদ্ধ। ইধিকা ঘরটিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং বইয়ের আশপাশে কিছু বিশেষ চিহ্ন খুঁজতে থাকে। হঠাৎ সে দেখে, টেবিলের এক কোণে একটি ছোটো খাঁচার ভেতরে চাবির মতো একটি বস্তু রাখা আছে। সম্ভবত সেটিই বইটি খুলতে পারে।
তারা বুঝতে পারে যে, এই ঘরটির ভেতর ডায়মন্ড কুমারের রহস্যময় জাদুর সমস্ত সরঞ্জাম ও রহস্যগুলো সযত্নে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এই বইটি এবং গোপন টানেলের অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে, ম্যাজিক শো-এর আড়ালে আরও বড়ো কোনো পরিকল্পনা ছিল।
আরো পড়ুন : গোয়েন্দা গল্প : গয়না চুরির রহস্য উদঘাটন
এইভাবেই ইধিকা, পায়েল, এবং অনুরাগ এক রহস্যময় সন্ধানে ঢুকে পড়ে, যা তাদের জীবনের সবচেয়ে চমকপ্রদ অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়। এখন তাদের লক্ষ্য, এই বইটি খুলে ভেতরের রহস্যকে উদঘাটন করা এবং ডায়মন্ড কুমারের নিখোঁজ হওয়ার আসল রহস্য উন্মোচন করা।
পঞ্চম অধ্যায়: অপহরণের উদ্দেশ্য
ইধিকা, পায়েল, এবং অনুরাগ টানেলে আরও গভীরভাবে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। তাদের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎই ইধিকার চোখে পড়ে মাটিতে পড়ে থাকা একটি মুখোশ। মুখোশটি বেশ অদ্ভুত—কালো রঙের এবং এর ওপরে সোনালী রঙের কিছু নকশা আঁকা। ইধিকা মুখোশটি হাতে তুলে নেয় এবং অনুভব করে, এই মুখোশটিই হয়তো সেই চোরাচালান চক্রের পরিচয় নির্দেশ করছে। মুখোশটি দেখে তাদের সন্দেহ আরও গভীর হয়, এবং তারা ভাবতে শুরু করে যে, হয়তো এই মুখোশধারীরাই জাদুকর ডায়মন্ড কুমারকে অপহরণ করেছে।
ইধিকা ধীরে ধীরে বুঝতে পারে, এটি কোনো সাধারণ অপহরণের ঘটনা নয়। জাদুকরের রহস্যময় বইটি নিয়ে কেউ গভীর ষড়যন্ত্র করছে, কারণ বইটি শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং তার মধ্যে এমন কিছু গোপন জ্ঞান থাকতে পারে যা অপরাধীদের জন্য মূল্যবান হতে পারে। সম্ভবত তারা এই বইটির গোপনীয়তা জানার জন্যই জাদুকরকে অপহরণ করেছে।
তারা যখন নিজেদের মধ্যে এসব কথা আলোচনা করছে, ঠিক তখনই টানেলের আরেক দিক থেকে বেশ কয়েকজন লোক তাদের ঘিরে ধরে। তাদের মুখোশ পরা, চোখে যেন রহস্যময় এক দৃষ্টি। লোকগুলোর ভেতর থেকে একজন এগিয়ে আসে। লোকটির মুখে একটি বাঁকা হাসি, এবং তার চোখে এক রকম নিষ্ঠুরতার ঝিলিক দেখা যায়।
পায়েল ভয় পেয়ে ফিসফিস করে বলে, “এরা কারা, ইধিকা?”
ইধিকা সাহস ধরে বলে, “আমার মনে হয় এরা সেই চক্রের লোকজন, যারা ডায়মন্ড কুমারের পিছনে লেগেছিল।”
লোকটির মধ্যে থেকে একজন তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে, “তোমরা এখানে কেন এসেছো? এই টানেলে কাউকে প্রবেশের অনুমতি নেই।”
ইধিকা সাহস করে জিজ্ঞেস করে, “তোমরা ডায়মন্ড কুমারকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছো? তার সেই রহস্যময় বইটি নিয়ে তোমাদের কি পরিকল্পনা?”
আরো পড়ুন : গল্পের নাম : অনলাইন দুনিয়া আর অফলাইন মানবতা
লোকটি হেসে বলে, “ডায়মন্ড কুমারের সেই বইটি অনেক মূল্যবান, এবং সেটার ক্ষমতা যদি আমাদের হাতে আসে, তাহলে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। সেই কারণেই আমাদের ওকে অপহরণ করতে হয়েছে। তোমরা ছোটো, এসব ব্যাপার বোঝার ক্ষমতা নেই।”
ইধিকা বুঝতে পারে, এই চক্রের মূল হোতা জাদুকরের সহকারী এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু। হয়তো সেই ব্যক্তি ডায়মন্ড কুমারকে ব্ল্যাকমেল করে বইটি নিজের দখলে নিতে চেয়েছিল এবং এটাই তার আসল উদ্দেশ্য ছিল।
এরপর ইধিকা, পায়েল আর অনুরাগ পালাবার চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। একদিকে তারা বন্দি হওয়ার সম্ভাবনায় আতঙ্কিত, অন্যদিকে ইধিকার মাথায় দ্রুত কিছু পরিকল্পনা ঘুরপাক খাচ্ছে।
হঠাৎ, ইধিকা চোখের ইশারায় পায়েল এবং অনুরাগকে কিছু সংকেত দেয়। তারা তিনজনেই বুঝতে পারে যে পালাবার জন্য কৌশল অবলম্বন করা দরকার। ইধিকা চিৎকার করে বলে, “তুমি যতই চেষ্টা করো, আমরা এই রহস্য ফাঁস করবই! পুলিশ শিগগিরই এখানে চলে আসবে।”
এই কথা শুনে এক লোক ভড়কে গিয়ে বলে, “পুলিশ আসার আগে ওদের এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে!”
লোকগুলো এদিক-ওদিক তাকানোর সুযোগে ইধিকা একটি ঢিল তুলে নিয়ে লোকগুলোর একজনের দিকে ছুঁড়ে মারে, এবং এই সুযোগে তিনজনই দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তাদের দৌড়াতে দেখে চক্রের সদস্যরা তাদের ধাওয়া করতে শুরু করে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত, ইধিকা ও তার বন্ধুরা এক সরু পথ ধরে টানেল থেকে বেরিয়ে আসে। তারা বুঝতে পারে, এখনই পুলিশের সাহায্য নিয়ে এই চক্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
ষষ্ঠ অধ্যায়: রহস্যের উদ্ঘাটন
ইধিকা, পায়েল, এবং অনুরাগ কোনোভাবে টানেল থেকে বেরিয়ে আসার পর দ্রুত পুলিশকে খবর দেয়। তাদের দেওয়া তথ্য এবং মুখোশের বিবরণের ভিত্তিতে পুলিশ তৎক্ষণাৎ অভিযান শুরু করে। পুলিশের দলটি টানেলের আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই চক্রের সদস্যদেরকে ঘিরে ফেলে।
পুলিশের উপস্থিতি দেখে চক্রের সদস্যরা প্রথমে পালানোর চেষ্টা করে, কিন্তু পুলিশ তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলায় পালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। ধরা পড়ার পর চক্রের প্রধান, যে ডায়মন্ড কুমারের বন্ধু ছিল, নিজের পরিচয় স্বীকার করতে বাধ্য হয়। সে জানায়, তার পরিকল্পনা ছিল সেই রহস্যময় বইটির সাহায্যে মূল্যবান গোপন তথ্য সংগ্রহ করে চোরাচালান চক্রে আরও ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠা। তার বিশ্বাস ছিল, বইটির গোপনীয়তা জানলে সে এমন কিছু কৌশল ও গোপন তথ্য পেয়ে যাবে যা তার অবৈধ কাজে সহায়ক হবে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা ইধিকার দিকে তাকিয়ে বলে, “তোমরা যদি এত সাহস না দেখাতে, তাহলে হয়তো আমরা আজও জানতে পারতাম না যে এদের মত চক্র এখানে সক্রিয় রয়েছে।”
এরপর পুলিশ জাদুকর ডায়মন্ড কুমারকে উদ্ধার করে। জাদুকরকে উদ্ধার করার পর তার অভিজ্ঞতার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। ডায়মন্ড কুমার জানান, এই বইটির আসল রহস্য কোনো যাদুর মতো নয় বরং এতে প্রাচীন কিছু কৌশলগত মন্ত্র আর অসাধারণ কিছু জাদু কৌশলের বর্ণনা রয়েছে, যা মানুষকে মুগ্ধ করতে সক্ষম। এই চক্রের মূল পরিকল্পনা ছিল সেই কৌশলগুলো নিজেদের জন্য ব্যবহার করে আরো বেশি অর্থ আর ক্ষমতা অর্জন করা।
জাদুকর আরও জানান, বইটির প্রতি সাধারণ মানুষ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকলেও এর প্রকৃত গুরুত্ব একজন দক্ষ জাদুকরই বুঝতে পারে। তবে ডায়মন্ড কুমারের বন্ধুটি এই বইয়ের রহস্যময়তা কাজে লাগিয়ে একধরনের ধোঁকাবাজির ছক কষেছিল। সে বিশ্বাস করেছিল, বইয়ের তথ্য তাকে অপরাজেয় করে তুলবে এবং সেই কারণেই জাদুকরকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করেছিল।
ইধিকা, পায়েল, এবং অনুরাগ এই গোটা ঘটনার মোড়গুলো শুনে বিস্মিত হয়। তাদের মধ্যে একটি কৌতূহল থেকে জন্ম নেয় যে, কীভাবে একটি সাধারণ বই এত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
জাদুকর ডায়মন্ড কুমার শেষবারের মতো ইধিকার দিকে তাকিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “তোমাদের বুদ্ধি আর সাহসিকতা আমাকে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করেছে। তোমরা সত্যিই অসাধারণ গোয়েন্দা!”
ইধিকার উপস্থিত বুদ্ধি এবং সাহসিকতার প্রশংসা করে পুলিশও বলে, “তুমি না থাকলে এই অপরাধের জট খুলতে আমাদের আরও সময় লাগত। তুমি সত্যিই এক অসম্ভব গোয়েন্দা!”
শহরজুড়ে তখন এই উদ্ধার অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়ে। ইধিকা, পায়েল, এবং অনুরাগ হয়ে ওঠে জলপাইগুড়ির ছোট্ট নায়ক। তাদের এই সাহসিকতা শহরের মানুষদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করে, আর সেই রহস্যময় বইটিকে নিরাপদে রেখে দেওয়া হয় যাতে ভবিষ্যতে কেউ এর অপব্যবহার করতে না পারে।
শেষ অধ্যায়: শহরে নতুন আলোড়ন
ডায়মন্ড কুমার তার চমকপ্রদ ম্যাজিক নিয়ে আবারও ফিরে আসেন। ইধিকার তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জন্য শহরবাসী তাকে বাহবা দেয়। জলপাইগুড়ি নতুন আলোড়নে মেতে ওঠে। ইধিকা তার সাহসিকতা ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দিয়ে জাদুকরের রহস্য সমাধান করে, এবং তার দুঃসাহসিক কাহিনির জন্য আরও একটি গল্প সংকলনে যুক্ত হয়।
© পিনাকী রঞ্জন পাল