গোয়েন্দা গল্প : অষ্টধাতুর মূর্তি চুরি

লেখক : পিনাকী রঞ্জন পাল

দুর্গাপূজা শেষ, মা দুর্গা কৈলাশে ফিরে গেছেন। বিজয়ার মিষ্টিমুখের আমেজ কাটতে না কাটতেই জলপাইগুড়ি শহরে আবার এক উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে—কালীপূজা। শহরের মানুষেরা জোর কদমে কালীপূজার প্রস্তুতিতে মগ্ন। শহরের অন্যতম প্রাচীন ও সম্মানিত নিয়োগী বাড়ির কালীপূজা বহুদিন ধরে সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে পূজিত হয় অষ্টধাতুর এক পুরনো এবং বহুমূল্য কালী মূর্তি। মূর্তিটি বছরের অন্যান্য সময় স্টোর রুমের সিন্দুকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় এবং শুধুমাত্র কালীপূজার জন্য তা বের করা হয়।

মূর্তির রহস্যময় চুরি

এবার যখন নিয়োগী বাড়ির লোকেরা কালীপূজার প্রস্তুতি শুরু করতে যায়, তখনই ঘটে যায় এক অঘটন। মূর্তিটি সিন্দুক থেকে উধাও! কেউ কিভাবে, কবে মূর্তিটি চুরি করল, তা কেউ বুঝে উঠতে পারছে না। মূর্তির মূল্য যেমন বিশাল, তেমনই এটি ঐতিহ্য ও ইতিহাসের প্রতীক। শহরজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। নিয়োগী পরিবারের বড় ছেলে নীলাদ্রি নিয়োগী প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, কারণ এই মূর্তিটি শুধুমাত্র তাদের পরিবারের নয়, পুরো শহরেরই সম্পদ হিসেবে দেখা হয়।

নীলাদ্রি বাবু যখন পুলিশকে খবর দেন, তখন থেকেই ব্যাপারটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার শুরু হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমেও মূর্তির চুরির খবর ছড়িয়ে পড়ে। সবাই এ ব্যাপারে কৌতূহলী হয়ে ওঠে, কিন্তু কারও পক্ষেই বুঝে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না যে মূর্তিটি কে বা কারা চুরি করল।

ইধিকার প্রবেশ

এদিকে ইধিকা, জলপাইগুড়ির অষ্টম শ্রেণির মেধাবী মেয়ে, তার রহস্য উদঘাটন করার স্বভাবের কারণে এই চুরির খবর শুনেই ব্যাপারটিতে প্রবল আগ্রহী হয়ে ওঠে। সে তার দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু পায়েল এবং অনুরাগকে নিয়ে এই রহস্যের সমাধান করার উদ্যোগ নেয়। ইধিকা ঠিক করে নিয়োগী বাড়িতে গিয়ে গোটা বিষয়টা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

নিয়োগী বাড়িতে তদন্ত

ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগ নিয়োগী বাড়িতে গিয়ে প্রথমেই বাড়ির স্টোর রুমে প্রবেশ করে। স্টোর রুমটি বেশ পুরনো এবং সেটি খুব একটা ব্যবহৃত হয় না। সিন্দুকের কাছাকাছি গিয়ে ইধিকার নজরে পড়ে যে সিন্দুকের চারপাশে কিছু ধুলোময় চিহ্ন আছে। ধুলোবালি দেখে সে অনুমান করে, অনেকদিন কেউ হয়তো এই ঘরে ঢোকেনি। কিন্তু চোর কিভাবে তালা ভাঙা ছাড়াই মূর্তি চুরি করল, তা একটি বড় প্রশ্ন।

পায়েল তখন সিন্দুকের তালা পরীক্ষা করতে গিয়ে বলে, “এত শক্তপোক্ত তালা। বাইরে থেকে যদি কেউ ঢুকে থাকে, তাহলে তো তালা ভাঙার কোনো চিহ্ন থাকত।”

ইধিকা মাথা নেড়ে বলে, “ঠিক বলেছ পায়েল। কিন্তু তালা একদম ঠিকঠাক। তাহলে কি এটা কোনো ভেতরের কারোর কাজ?”

অনুরাগ তখন চারপাশে ঘুরে দেখছিল। সে মেঝেতে কিছু হালকা দাগ লক্ষ্য করে বলে, “দেখো, এই জায়গাটা বেশ আলাদা। সিন্দুকের পাশেই যেন কেউ কিছু ভারী বস্তু সরিয়েছে। হয়তো মূর্তিটাই!”

ইধিকা নিচু হয়ে মেঝের দাগগুলো খুঁটিয়ে দেখে। মূর্তির ওজন প্রচুর, তাই সেটা সরানোর সময় মেঝেতে চিহ্ন পড়াটা স্বাভাবিক।

আরো পড়ুন : গোয়েন্দা গল্প : মূর্তি রহস্যের সমাধান

প্রথম সূত্র এবং সন্দেহ

ইধিকার প্রথম সন্দেহ হয়, এই চুরির পেছনে কোনো ঘরের লোকের হাত থাকতে পারে। হয়তো তারা মূর্তিটি বাইরে পাচার করার পরিকল্পনা করেছে। পায়েল তখন মিস্টার নীলাদ্রি নিয়োগীর সঙ্গে কথা বলতে যায়। নিয়োগী বাবু ভীষণ চিন্তিত। তিনি বলেন, “এই মূর্তিটি আমাদের পরিবারের বহু প্রজন্মের ঐতিহ্য। আমরা কখনও ভাবিনি যে এমন কিছু ঘটবে।”

তিনি আরও জানান, পূজার আগের দিন রাতে মূর্তিটি ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু সকালে যখন তারা পূজার আয়োজন শুরু করতে যান, তখনই তারা দেখেন সিন্দুক খালি। নীলাদ্রি বাবু বলেন, “আমাদের বাড়িতে বাইরের লোক খুব কমই আসে। তাই কারা এটা করতে পারে, আমি বুঝতে পারছি না।”

পরবর্তী তদন্ত এবং নতুন তথ্য

এদিকে অনুরাগ বাড়ির স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে যে কিছুদিন আগে কিছু অচেনা লোক নিয়োগী বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। স্টাফরা মনে করে, হয়তো তারা কোনো চুরি বা অন্য কিছুর পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু তাদের পরিচয় বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে তারা কিছু জানে না।

ইধিকা এবার তাদের চিন্তা নিয়ে বসে। সে বুঝতে পারে যে, বিষয়টা সহজ নয়। চোরেরা হয়তো পরিকল্পনা করেই এই চুরি করেছে।

গোপন রহস্যের উন্মোচন

ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগ এবার তাদের সমস্ত মনোযোগ নতুন সূত্রের দিকে নিবদ্ধ করে। যেসব অচেনা লোককে নিয়োগী বাড়ির আশেপাশে দেখা গিয়েছিল, তাদের সম্পর্কে কিছু না কিছু জানতেই হবে। ইধিকা ঠিক করল, শহরের সেই অংশে খোঁজ নিতে হবে, যেখানে সাধারণত বাইরের লোকেরা বেশি আসে। এদিকে অনুরাগ আরও খোঁজ করতে থাকে, যদি বাড়ির অন্য কোনো সদস্য মূর্তির ব্যাপারে কিছু জানে।

কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর, তারা এক স্থানীয় দোকানদারের কাছে যায়। দোকানদার জানায়, “হ্যাঁ, কিছুদিন আগে কয়েকজন অপরিচিত লোকজন নিয়োগী বাড়ির আশেপাশে ঘুরছিল। ওরা খুবই সন্দেহজনক ছিল। একবার জিজ্ঞেস করেছিল, এই এলাকায় কোনো পুরনো মূর্তি বা মূল্যবান জিনিস আছে কি না।”

ইধিকার মনটা চমকে উঠল। “তাহলে এর মানে কি, ওরা আগেই মূর্তির খোঁজে ছিল?” ইধিকা মনে মনে ভাবল।

দোকানদারের থেকে জানা কথাগুলো ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল। তারা বুঝতে পারল, বিষয়টা খুব ভালোভাবে পরিকল্পনা করে করা হয়েছে।

দ্বিতীয় সূত্রের খোঁজ

ইধিকা পরের দিন সকালে আবার নিয়োগী বাড়িতে ফিরে গেল। এবার তার লক্ষ্য স্টোর রুমের আশপাশের এলাকাগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করা। হঠাৎ তার নজরে পড়ে স্টোর রুমের বাইরে মাটির মধ্যে একটা ছোটো চকচকে ধাতুর টুকরো। ইধিকা সেটা তুলে নিল। ধাতুর টুকরোটা দেখেই তার মনে হলো, এটা কোনো মূর্তির অংশ হতে পারে।

পায়েল তাড়াতাড়ি টুকরোটা দেখে বলে, “ইধিকা, এটা কি অষ্টধাতুর মূর্তির কোনো অংশ?”

ইধিকা গভীরভাবে চিন্তা করল। “সম্ভবত,” সে বলল। “তবে এটা যদি মূর্তির অংশ হয়, তাহলে হয়তো চুরির সময় চোররা অজান্তে এটি ফেলে গেছে।”

এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হয়ে উঠল। ইধিকা ঠিক করল যে এই টুকরোটা একজন বিশেষজ্ঞকে দেখানো দরকার।

বিশেষজ্ঞের মতামত

ইধিকা তার বাবার এক পুরোনো পরিচিতকে জানে, যিনি মূর্তি এবং পুরনো জিনিসপত্রের ব্যাপারে বেশ ভালো জ্ঞান রাখেন। সে তাঁর কাছে গিয়ে টুকরোটা দেখায়। বিশেষজ্ঞ টুকরোটা দেখে নিশ্চিত করে বলেন, “এটা আসলেই অষ্টধাতুর তৈরি। তবে এটা সম্পূর্ণ মূর্তি থেকে ভাঙা অংশ নয়। সম্ভবত, মূর্তির সঙ্গে যুক্ত কোনো অলংকারের অংশ হতে পারে।”

“মূর্তির সঙ্গে যুক্ত কোনো অলংকার?” ইধিকার মনে আবার প্রশ্নের উদয় হয়। সে জানে, নিয়োগী বাড়ির মূর্তির কোনো অতিরিক্ত অলংকার নেই। তাহলে কি এটা অন্য কোনো মূর্তির অংশ? আর সেই মূর্তির সঙ্গে অষ্টধাতুর মূর্তির কী সম্পর্ক?

নতুন সন্দেহভাজন

ইধিকা এবার নতুন করে ভাবতে শুরু করল। চোরেরা কি শুধুমাত্র নিয়োগী বাড়ির মূর্তির পেছনে ছিল? নাকি অন্য কোনো মূর্তি বা মূল্যবান বস্তু চুরি করার পরিকল্পনা করছিল? তখনই তার মনে হলো, শহরে সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক পুরনো জিনিসের প্রদর্শনী চলছে। সেখানে বহুমূল্য মূর্তি ও পুরাতাত্ত্বিক জিনিসপত্র প্রদর্শিত হচ্ছে।

অনুরাগ তখন বলে উঠল, “ইধিকা, আমাদের সেই প্রদর্শনীতে যাওয়া উচিত। হয়তো ওখানে কিছু সূত্র পাওয়া যেতে পারে।”

তারা তিনজন প্রদর্শনীতে যায়। প্রদর্শনীতে ঘুরতে গিয়ে ইধিকা দেখতে পায় এক অদ্ভুত লোক। লোকটি বেশ উঁচু দরের পোশাক পরে আছে, কিন্তু তার হাবভাব সন্দেহজনক। সে প্রদর্শনীতে থাকা মূর্তিগুলোর খুব কাছাকাছি গিয়ে সেগুলো পরীক্ষা করছে।

“ওই লোকটা তো খুব সন্দেহজনক,” পায়েল বলল।

ইধিকা লোকটির ওপর নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিল। কিছুক্ষণ দেখার পর, সে বুঝল যে লোকটি আসলে মূর্তিগুলোতে বিশেষ আগ্রহী নয়, বরং প্রদর্শনীতে কারা আসছে এবং তারা কী করছে, সেদিকে তার মনোযোগ বেশি।

প্রদর্শনীতে গোপন পরিকল্পনা

ইধিকা এবার প্রদর্শনীতে উপস্থিত মূর্তিগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে শুরু করল। প্রদর্শনীর এক কর্মী জানাল, “এখানে বেশ কয়েকটি মূল্যবান মূর্তি আনা হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি বিশেষ করে ভারতবর্ষের প্রাচীন মূর্তি। এগুলোর মধ্যে অষ্টধাতুর মূর্তিও আছে, যা এই অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাসের অংশ।”

ইধিকা এবার বুঝতে পারল, চোরেরা হয়তো নিয়োগী বাড়ির মূর্তির পাশাপাশি আরও মূল্যবান কিছু মূর্তিও চুরি করতে চেয়েছিল। তাদের আসল পরিকল্পনা সম্ভবত বড় ধরনের চুরি করার ছিল, আর সেই পরিকল্পনা ছিল প্রদর্শনীর সময়।

প্রদর্শনীতে তদন্তের শুরু

ইধিকা এবং তার দল সেই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নজরে রেখে প্রদর্শনীতে ঘুরছিল। লোকটি মাঝে মাঝেই বিভিন্ন মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে কিছু অদ্ভুত ইশারা করছিল। ইধিকা লক্ষ্য করল, লোকটির সঙ্গে মাঝে মাঝে দু-তিনজন লোক এসে কথা বলে চলে যাচ্ছিল। এসব দেখে ইধিকার সন্দেহ আরও ঘনীভূত হল।

ইধিকা পায়েল আর অনুরাগকে বলল, “এ লোকটা কিছু একটা করার পরিকল্পনা করছে, আর সেই পরিকল্পনার সঙ্গে হয়তো আমাদের চুরি হওয়া মূর্তির সম্পর্ক রয়েছে।”

তারা তিনজন আলাদা হয়ে প্রদর্শনীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ল। ইধিকা প্রদর্শনীতে থাকা অষ্টধাতুর মূর্তির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মূর্তির পাশেই একটি নিরাপত্তা ক্যামেরা লাগানো ছিল। ইধিকা ক্যামেরাটি লক্ষ্য করে দেখল, সেটি ঠিকমতো কাজ করছে না। সন্দেহ আরও বাড়ল তার।

পায়েল এসে ফিসফিসিয়ে বলল, “ইধিকা, কিছুক্ষণ আগে ওই লোকটি প্রদর্শনীর বাইরে কারো সঙ্গে দেখা করেছে। আমি তাদের ছবি তুলেছি।”

ইধিকা ছবিটি দেখে বুঝল, এই পরিকল্পনা বেশ বড়সড় হতে যাচ্ছে। সে চুপচাপ প্রদর্শনীর নিরাপত্তা কর্মকর্তার কাছে গিয়ে বিষয়টা জানাল।

অপহরণের ছক

তারা ঠিক করল, সেই সন্দেহভাজন লোকটির গতিবিধি অনুসরণ করবে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে গেল। ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগ তখন নিরাপত্তার গার্ডদের সঙ্গে মিলে প্রদর্শনীর ভেতরে থেকে চোরের দলটিকে ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করল।

রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, প্রদর্শনীর মূর্তিগুলোতে অ্যালার্ম ব্যবস্থা চালু করে দেওয়া হল। ঠিক তখনই, ইধিকা একটি শব্দ শুনতে পেল। তার সন্দেহ হল যে কেউ প্রদর্শনীতে ঢুকেছে। পায়েল আর অনুরাগকে সঙ্গে নিয়ে ইধিকা সজাগ হল। তারা দেখতে পেল, সেই সন্দেহভাজন লোকটি তিনজন সঙ্গী নিয়ে প্রদর্শনীতে ঢুকে পড়েছে।

লোকগুলো চুপিসারে অষ্টধাতুর মূর্তির দিকে এগোচ্ছে। তারা এমনভাবে কাজ করছে যেন আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছে কীভাবে অ্যালার্ম এড়ানো যাবে।

ফাঁদ পাতা এবং ধরা পড়া

ঠিক সেই সময়, ইধিকা সজোরে ফিসফিস করে বলল, “এবার!”

নিরাপত্তা দল আগেই প্রস্তুত ছিল। তাদের সংকেত পেয়ে তারা দ্রুত প্রদর্শনীর দরজা বন্ধ করে দিল। চোরেরা বুঝতে পারল যে তারা ফাঁদে পড়েছে। চারদিকে নিরাপত্তাকর্মী আর ইধিকার দল তাদের ঘিরে ফেলল। চোরদের হাতে থাকা যন্ত্রপাতি এবং সিলিংয়ে লাগানো ক্যামেরা নষ্ট করার চেষ্টা ব্যর্থ হল।

তাদের মধ্যে প্রধান সেই সন্দেহভাজন লোকটি পালানোর চেষ্টা করল। কিন্তু ইধিকার তীক্ষ্ণ নজরে সে ধরা পড়ল।

ইধিকা তাকে জিজ্ঞাসা করল, “কেন তুমি এই মূর্তি চুরি করতে চেয়েছিলে? নিয়োগী বাড়ির মূর্তিটিও কি তোমরাই চুরি করেছ?”

লোকটি প্রথমে চুপ থাকলেও অবশেষে স্বীকার করল, “হ্যাঁ, নিয়োগী বাড়ির মূর্তিও আমরা চুরি করেছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম এ মূর্তিগুলো একত্রে বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করতে পারব। কিন্তু তোমরা সবকিছু পণ্ড করে দিলে।”

মূর্তি উদ্ধার এবং রহস্যের সমাধান

চোরদের কাছ থেকে নিয়োগী বাড়ির অষ্টধাতুর মূর্তির খবর পাওয়া গেল। তারা মূর্তিটি শহরের বাইরে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিল। পুলিশ তাদের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে দ্রুত সেই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মূর্তিটি উদ্ধার করল।

নিয়োগী পরিবারের আনন্দের সীমা রইল না। মূর্তিটি ফিরে পেয়ে তারা ইধিকা এবং তার দলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাল। পায়েল আর অনুরাগও নিজেদের সাহসিকতায় গর্বিত ছিল। ইধিকার বুদ্ধি, ধৈর্য, আর কৌশলের জন্যই এই চোরের দল ধরা পড়ল।

শেষ কথা

মূর্তির রহস্য সমাধান করার পর, ইধিকা বুঝল যে চুরি শুধু অর্থের জন্যই করা হয় না, অনেক সময় তার পেছনে অন্য কোনো গভীর পরিকল্পনাও থাকতে পারে। চোরাচালানের এই চক্রটিকে ভেঙে ফেলার জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ জানানো হল, আর ইধিকা, পায়েল, আর অনুরাগ নিজেদের কৃতিত্বের জন্য শহরের মানুষের কাছ থেকে প্রচুর প্রশংসা পেল।

নিয়োগী পরিবারের কালীপূজা এবার আরও বিশেষ হয়ে উঠল, কারণ তাদের হারিয়ে যাওয়া অষ্টধাতুর মূর্তিটিই পূজার আঙিনায় ফিরে এসেছিল। ইধিকার বুদ্ধি এবং অনুসন্ধানী মন সেই পূজাকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছিল।

এভাবেই ইধিকা আর তার দল পরবর্তী রহস্যের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। তাদের মনে জানার অদম্য ইচ্ছা, নতুন নতুন রহস্যের দিকে আরও গভীরভাবে ঢুকে যাওয়ার উৎসাহ সৃষ্টি করল।

© পিনাকী রঞ্জন পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *