ভক্তি; আচার ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে কুমারী পূজা

জলপাইগুড়ি : শারদোৎসব মানেই ভক্তি, ভক্তদের ঢল এবং আচার-অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা। সেই ধারায় এবার ৬৫তম বর্ষে জলপাইগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে মহা অষ্টমীর সকালে ভক্তি-ভরসায় অনুষ্ঠিত হলো কুমারী পূজা। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকেই আশ্রম প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে ভক্ত-দর্শনার্থীতে। নিয়মমাফিক, বেলুড় মঠের আদলে সম্পূর্ণ রীতিনীতি মেনে এক কিশোরীকে দেবী রূপে প্রতিষ্ঠিত করে অনুষ্ঠিত হয় এই পূজা।

এ বছরের কুমারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে জলপাইগুড়ি রাষ্ট্রীয় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী জাগৃতি চ্যাটার্জী। বয়স মাত্র ছয় বছর, তবে দেবী রূপে সজ্জিত হয়ে সিংহাসনে বসে ভক্তদের মধ্যে যে শ্রদ্ধা ও আবেগ জাগিয়েছে, তা ছিল চোখে পড়ার মতো।

জাগৃতির বাবা সম্রাট চ্যাটার্জী ও মা দুজনেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। পরিবারটি জলপাইগুড়ির সেনপাড়ার বাসিন্দা। দেবীর আসনে বসে সাদা-লাল শাড়ি, সোনালি অলঙ্কার আর গাঢ় সিঁদুরে সজ্জিত ছোট্ট জাগৃতিকে ঘিরে ভক্তদের মধ্যে ছিল গভীর আবেগ ও শ্রদ্ধা।

Devotion; Kumari Puja at Ramakrishna Mission Ashram with a touch of ritual and modernity

সকাল ৯টা নাগাদ ভক্তি সহকারে কুমারীকে সিংহাসনে বসিয়ে শুরু হয় পূজো। রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীরা মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। আরাধনার মুহূর্তে বহু ভক্ত প্রণাম করতে এগিয়ে আসেন, অঞ্জলি দেন দেবী রূপে সজ্জিত কন্যাকে।

রামকৃষ্ণ মিশনের জলপাইগুড়ি আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী শিবপ্রেমানন্দজি মহারাজ বলেন, “অত্যন্ত নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিশুকন্যার মধ্যে আমরা দেখি দেবীশক্তির প্রকাশ। এই পূজা আমাদের কাছে ভক্তি, সেবা ও আত্মসমর্পণের প্রতীক।”

যদিও রীতিনীতি অটুট থেকেছে, তবে এবারের কুমারী পূজায় দেখা গেল কিছু নতুনত্ব। আশ্রম প্রাঙ্গণে ভক্তরা একদিকে যেমন ভক্তিভরে অঞ্জলি দিয়েছেন, অন্যদিকে অনেককে দেখা গেছে দেবী রূপে সজ্জিত কুমারীর সঙ্গে সেলফি তুলতে।

আরও চমকপ্রদ দৃশ্য ছিল—ভক্তরা পূজিত কুমারীর হাতে বহুজাতিক কোম্পানির দামি চকলেট তুলে দিচ্ছেন। ভক্তি ও আধুনিকতার এমন মিশ্রণ অনেকের নজর কেড়েছে। অনেকেই বলেছেন, যুগের পরিবর্তনে পূজার আবহে যেমন গাম্ভীর্য আছে, তেমনই এসেছে সময়োপযোগী নতুন রূপও।

কুমারী পূজার খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশ্রম প্রাঙ্গণে সকাল থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে। শত শত ভক্ত এসে কুমারী দর্শন করেন। অনেকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন, কেউ আবার কুমারীর কাছে সন্তানসুখ বা পারিবারিক শান্তির প্রার্থনা জানান।

ভক্তদের মতে, “কুমারী পূজো মানে শুধুই ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি দেবীশক্তির প্রতীকী রূপ—যা আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে লুকিয়ে আছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *