জলপাইগুড়িতে জেলা স্তরের পর্যালোচনা বৈঠক: উন্নয়ন প্রকল্পে গাফিলতির দায়ে পঞ্চায়েতগুলোকে সতর্ক বার্তা

জলপাইগুড়ি: বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো ডিস্ট্রিক্ট লেভেল রিভিউ মিটিং (পিআরডি)। জেলার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের প্রতিনিধিরা এই বৈঠকে অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা শাসক শামা পারভিন, অতিরিক্ত জেলা শাসক (জেলা পরিষদ) রৌনক আগরওয়াল, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কৃষ্ণা রায় বর্মণ, সদর মহকুমা শাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী এবং অন্যান্য আধিকারিকরা।

জেলা শাসক স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, বিভিন্ন পঞ্চায়েতে বরাদ্দ অর্থ যথাযথভাবে কাজে না লাগানোর জন্য দায়ী কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলেন, “অধিকাংশ প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। ব্যর্থ হলে বরাদ্দ টাকা ফেরত নিয়ে তা অন্য পঞ্চায়েতের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে।”

জেলার মোট পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকায় ৬৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলেও ২৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে। এর মধ্যে সদর ব্লকের নগর বেরুবাড়ি পঞ্চায়েতে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩৯ শতাংশ। জেলা শাসক প্রধানকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, “কেন এখনও লক্ষ লক্ষ টাকা পড়ে আছে? প্রকল্প বাস্তবায়ন না করলে বরাদ্দ অর্থ ফেরত নেওয়া হবে।”

বৈঠকে চামুর্চি গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রেও টেন্ডার প্রক্রিয়ার জটিলতা উঠে আসে। ৫৩ লক্ষ টাকা পড়ে থাকার বিষয়ে কোনও সদুত্তর না মেলায় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও, একাধিক পঞ্চায়েতের প্রধান ও নির্মাণ সহায়ক এদিনের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। জেলা শাসক নির্দেশ দেন, “বিশেষ কারণ ছাড়া কেউ বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলে শোকজ করা হবে।”

সদর ব্লকের বারোপাটিয়া পঞ্চায়েত বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে কাজের এস্টিমেট করানোর অভিযোগ উঠেছে। জেলা শাসক বিষয়টি আইনবিরুদ্ধ উল্লেখ করে বিডিও-কে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে বলেন। মণ্ডলঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে প্রকল্প পরিকল্পনায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বলা হয়, “আপনার এলাকায় কী দরকার তা আপনি জানেন না, এর অর্থ জনসংযোগের অভাব।”

মেটেলি হাট গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে মূর্তি নদীর বেডে রিসর্ট ও রেস্তোরাঁ নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জেলা শাসক। তিনি জানান, “এতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এবং যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই প্রকল্পের আগে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়নি।”

বৈঠকের শেষে জেলা শাসক শামা পারভিন জানান, “কাজের নিরিখে পিছিয়ে থাকা পঞ্চায়েতগুলিকে দ্রুত বরাদ্দ অর্থ কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই বৈঠকে উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে পঞ্চায়েতগুলিকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *