জলপাইগুড়ি, ২ অক্টোবরঃ ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে এবছর ৫১৬ বছরে পদার্পণ করল বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গাপূজা। দশমীর সকালে থেকেই রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে উপচে পড়ল দর্শনার্থীর ভিড়। শুধু স্থানীয় বাসিন্দাই নয়, শহরের নানা প্রান্ত থেকে এবং আশপাশের গ্রামাঞ্চল থেকেও হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমালেন দেবী দুর্গার নিরঞ্জন প্রত্যক্ষ করতে।

রাজপুরোহিত শিবু ঘোষাল জানান, “প্রতিবছরের মতো এবছরও বৈদিক নিয়মে এবং বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মেনে পুজো পরিচালিত হয়েছে।” প্রাচীন এই পুজোর খ্যাতি যেমন দেবী আরাধনায়, তেমনি ভোগের বৈচিত্র্যেও। এবছর ভোগে ছিল অনন্য আয়োজন—ফলমূল, দই, খই ছাড়াও পরিবেশিত হয় পান্তাভাত, পুঁটিমাছ ভাজা, ইলিশ ভাজা, ইলিশমাছের মাথা দিয়ে কচুশাক, সাপলা, নানা রকম তরকারি, চাটনি ও মিষ্টি।

ভোগের পরেই শুরু হয় সিঁদুরখেলা। রাজবাড়ির আঙিনা লাল সিঁদুরে রঙিন হয়ে ওঠে। সকল বয়সের নারী-পুরুষ মেতে ওঠেন এই আনন্দ-আচার পালনে। দুপুরের পর থেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিড় আরও বাড়তে থাকে, রাজবাড়ি চত্বর রূপ নেয় এক মহাউৎসবে।

বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গাপূজার অন্যতম বিশেষত্ব হলো—শুধু দেবী দুর্গা নয়, দেবীর সঙ্গে অন্যান্য প্রতিমারও নিরঞ্জন হয় রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী পুকুরে। বিসর্জনের এই মুহূর্তকে ঘিরে পুরো রাজবাড়ি ও আশপাশের এলাকায় তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। ঢাকের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি আর ভক্তি-আবেগে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজবাড়ির প্রতিটি কোণ।

পাঁচ শতকেরও বেশি ঐতিহ্য বুকে ধারণ করে বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির এই দুর্গোৎসব আজও মানুষের মিলনক্ষেত্র, ভক্তি ও আনন্দের মিলিত আবহে দশমীর দিনটিকে করে তোলে অনন্য।