জলপাইগুড়ি : পাচারের কৌশল যত অভিনবই হোক, শেষরক্ষা হলো না। জলপাইগুড়ির বালাপাড়ায় জেলা গোয়েন্দা শাখার অভিযানে ধরা পড়ল বাঁশ বোঝাই এক ট্রাক থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি সিগারেট। ট্রাকটির গোপন চেম্বার থেকে উদ্ধার হয় প্রায় ৫০ কার্টুন অবৈধ সিগারেট, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা বলে অনুমান করছেন আধিকারিকরা। উত্তরপুর্ব ভারত থেকে উত্তরাখণ্ডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সিগারেট বোঝাই ট্রাকটি।

জেলা পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গনপত জানান, গোপন সূত্রে খবর আসে যে ধুপগুড়ির দিক থেকে একটি ট্রাকে বিদেশি সিগারেট পাচার হয়ে আসছে শিলিগুড়ির দিকে। সেই মোতাবেক শুক্রবার জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি দল বালাপাড়ার একটি পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় ওত পেতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ধুপগুড়ি থেকে আসা ট্রাকটি ধরা পড়ে—যার নম্বর HR 55 AC 4257।

ট্রাকটি প্রথম দেখায় ছিল সম্পূর্ণ বাঁশে বোঝাই। কিন্তু গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয় এর পেছনের কাঠামো নিয়ে। ট্রাকটি থামিয়ে বিস্তারিত তল্লাশি শুরু হয়। বাঁশের স্তূপ সরাতেই বেরিয়ে আসে গোপনভাবে তৈরি করা একটি চেম্বার, যার ভিতরে লুকানো ছিল বিদেশ থেকে চোরাইপথে আনা সিগারেটের কার্টুন।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত দুই ব্যক্তি—মহম্মদ আসিম (৩১) ও মহম্মদ সাদ্দাম (৩২)—দু’জনেই উত্তরপ্রদেশের মুরাদাবাদ জেলার বাসিন্দা। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, তারা দীর্ঘদিন ধরেই এই ধরনের পাচারের সঙ্গে যুক্ত এবং একাধিকবার উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে উত্তর ভারতের নানা রাজ্যে অবৈধ পণ্য সরবরাহ করেছে।

জেলা পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গনপত জানান, “এই অভিযান ছিল অত্যন্ত স্পর্শকাতর। পাচারের কৌশল অত্যন্ত কৌশলী হলেও আমাদের গোয়েন্দারা তাদের নির্ভুল কাজের মাধ্যমে চক্রের এক বড় চালান আটকে দিতে পেরেছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমরা আশাবাদী, এর পেছনে থাকা বৃহৎ চক্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনের পাচার আগে কখনও ধরা না পড়লেও সন্দেহের চোখে অনেক দিন ধরেই দেখা হচ্ছিল বাঁশ ও কাঠবোঝাই কিছু ট্রাককে। এই অভিযানের ফলে স্থানীয় প্রশাসনের উপর আস্থা আরও একধাপ বেড়েছে।
এই ঘটনায় একটি নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে জেলা পুলিশ। ধৃতদের আদালতে তোলা হলে পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানানো হবে বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে বিদেশি সিগারেটের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অবৈধ সিগারেটের ব্যবসাও। কর ফাঁকি দিয়ে দেশীয় বাজারে এনে চড়া দামে বিক্রি করা হয় এই সব পণ্য। এতে যেমন রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকিও বহুগুণে বাড়ছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, এই পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সদস্যদের খোঁজে এখন তল্লাশি চলছে।