Succes Story : জলপাইগুড়ি ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগান থেকে ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে : বর্ষা ওরাওঁ এর স্বপ্নের যাত্রা

পিনাকী রঞ্জন পাল : জীবনের প্রতিকূলতা জয় করে কীভাবে স্বপ্নপূরণের পথে এগোনো যায়, তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের বর্ষা ওরাওঁ (Barsha Oraon)। দরিদ্র শ্রমিক পরিবারের মেয়ে হয়েও বর্ষা আজ নিজের যোগ্যতায় জায়গা করে নিয়েছেন ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে (Indian Women’s League) । শুক্রবার, মধ্যপ্রদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রার আগে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বিডিও মিহির কর্মকার বর্ষাকে সংবর্ধনা জানান এবং খেলাধুলার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও আর্থিক সাহায্য তুলে দেন।

From Tea Gardens to Indian Women's League: Barsha Oraon's Dream Journey

বর্ষার এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ লড়াই আর অসীম পরিশ্রম। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে মায়ের সঙ্গে চা বাগানে কাজ করে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। তবুও স্বপ্ন দেখা থামাননি। দিদিদের ফুটবল খেলা দেখে সেই ছোটবেলা থেকেই নিজের ভেতরে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা জন্মে যায়। স্থানীয় কালিয়াগঞ্জ উত্তমেশ্বর হাইস্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পরও খেলা চালিয়ে যান। কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাঁকে দমাতে পারেনি।

বর্ষার কোচ অমিত রায় বিনামূল্যে কোচিং দিয়ে বর্ষাকে প্রশিক্ষিত করেছেন। তিনি বলেন,“ওর অধ্যবসায় অসাধারণ। আর্থিক অনটনের মাঝেও ওর মনোবল ছিল অটুট। বর্ষা প্রমাণ করেছে, স্বপ্ন দেখতে জানলে তা পূরণ করাও সম্ভব। ওর পরিশ্রম অন্য মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”

কন্যাশ্রী কাপে খেলার পর এবার ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে খেলার সুযোগ পেয়ে বর্ষা জানালেন, “ফুটবল আমার কাছে অক্সিজেন। দিদিদের দেখে খেলার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। মায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য চা পাতা তুলেছি, কিন্তু ফুটবল খেলা ছাড়িনি। আজ এই সাফল্য আমার মায়ের, কোচের, এবং এলাকার আশীর্বাদের ফল। আমি আরও ভালো খেলতে চাই।”

বর্ষার যাত্রাপথে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ব্লক প্রশাসন। সদর বিডিও মিহির কর্মকার বলেন, “বর্ষা আমাদের এলাকার মেয়ে। তার সাফল্যে আমরা গর্বিত। তাকে শুভকামনা জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।” বর্ষার এই সাফল্য আরও অনেক প্রতিভাবান মেয়েদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করবে বলে আশা করছেন সবাই।

বর্ষার এই গল্প শুধু একজন ফুটবলারের নয়, এটি এক সংগ্রামী মেয়ের স্বপ্ন, সাহস, এবং সফল হওয়ার লড়াইয়ের গল্প। তার এই যাত্রা প্রমাণ করে দেয়, কঠিন বাস্তবতা যতই আঘাত হোক, যদি ইচ্ছাশক্তি অটুট থাকে, তাহলে সাফল্যের পথে কোনো বাধাই টিকতে পারে না। বর্ষা আমাদের শেখায়, স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলার শক্তি আমাদের সবার মধ্যেই আছে, শুধু প্রয়োজন সেই শক্তিকে জাগিয়ে তোলা।

বর্ষার এই সাফল্য শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি নয়, গোটা রাজ্যের গর্ব। তাঁর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হোক, এটাই প্রার্থনা। তোমার জয়গানই হবে আগামী দিনের মেয়েদের পথপ্রদর্শক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *