গর্তেশ্বরী এবং গর্ভেশ্বরী মন্দির ও জলপাইগুড়ি

লেখক পঙ্কজ সেন

জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সাতকুড়া (মানিকগঞ্জ) এলাকায় সাবেক ছিট নাওতারি দেবোত্তর মৌজায় অবস্থিত গর্ভেশ্বরী মন্দিরে মা মহামায়া রূপে পূজিত হন দেবী দুর্গা। জলপাইগুড়ি শহর থেকে প্রায় ৩০ কিমি দক্ষিণে হলদিবাড়ির (কোচবিহার জেলা) কাছে চারিদিকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এক মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে এই মন্দিরটি অবস্থিত।

কথিত আছে, জলপাইগুড়ির বৈকুন্ঠপুর রাজবংশের নিত্য পূজিতা ছিলেন এই মন্দিরের আরাধ্য দেবী গর্ভেশ্বরী (সিদ্ধেশ্বরী)। এখানে বিরাজ করছে আরও এক দেবী গর্তেশ্বরী (ভ্রামরী)। কষ্টিপাথরের নির্মিত দেবী গর্ভেশ্বরীর মূর্তির পাশে ঘট বসিয়ে দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়। দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন থেকে নবমীর দিন পর্যন্ত এই মন্দিরে পুজো চলে। ওই দিনগুলোতে প্রচুর পুণ্যার্থীর আগমন ঘটে মন্দির প্রাঙ্গণে। এছাড়াও এই পুজোর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো অষ্টমীর দিন কুমারী পূজার আয়োজন।

জলপাইগুড়ি জেলার গর্ব এই প্রাচীন মন্দির পূর্বে পরিচালনা করত বৈকুন্ঠপুর রাজপরিবার। সেই সময়ে এই অঞ্চল ছিল দুর্গম জঙ্গলে ঢাকা। প্রাচীন এই পীঠে বৈকুণ্ঠপুরের রাজারা তখন হাতির পিঠে চেপে পুজা দিতে আসতেন। এই রাজপরিবারের সর্বশেষ রাজা প্রসন্নদেব রায়কত স্বয়ং এই মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন।

কষ্টি পাথরে নির্মিত দেবী গর্ভেশ্বরী চতুর্ভুজা। তার চার হাতে শোভা পাচ্ছে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্মধারিনী। দেবীর পদতলে অবস্থান করছেন গণেশ। দেবীর বামপদ স্থাপিত গণেশের বাম কাধে। এখানে গণেশ বিরাজিত পদ্মের উপর। কথিত আছে, দেবী সতীর আঙ্গুল বিহীন বাম পদ এই স্থানে পতিত হয়েছিল। যা সযত্নে সংরক্ষিত আছে মন্দিরের গর্ভগৃহে। অপরদিকে দেবী গর্তেশ্বরী দ্বিভূজা। তিনি মহাদেবের ভ্রামরী নামে বিশেষ পরিচিত তার ভক্তদের কাছে। দক্ষিণ বেরুবাড়ীর এই পবিত্র স্থান পাঙ্গা,যমুনা ও করতোয়া – এই তিন নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত। এই কারণে গর্ভেশ্বরী মন্দিরকে “ত্রিস্রোতা পিঠ”ও বলা হয়। দেবীর নিত্য সেবার জন্য এক বিপুল পরিমাণ জমি তৎকালীন সময়ে বৈকুন্ঠপুরের রাজারা দেবী গর্ভেশ্বরীর নামে দান করে গিয়েছেন।

স্বাধীনতার পর এক দীর্ঘ সময় এই গ্রামটির কোন অবস্থান ভারতের মানচিত্রে না থাকলেও ২০১৫ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সরকারিভাবে ছিটমহল বিনিময় চুক্তির (ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) মাধ্যমে উক্ত এলাকাটি ভারতের মানচিত্রে স্থান পায়। তারপর থেকেই উত্তরোত্তর এই মন্দিরটির গুরুত্ব জনমানষে বাড়তে থাকে। এখানে প্রতিবছর বাংলা চৈত্র মাসের শেষে একটি বড় মেলা বসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *